শিশুদের সেবায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ চালু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সারা দেশের সুবিধাবঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত শিশুদের বিনামূল্যে টেলিফোনের মাধ্যমে সেবা দিতে ‘চাইল্ড হেল্পলাইন’ নম্বর চালু হয়েছে। মাশুলমুক্ত এই নম্বরটি হলো ১০৯৮।

 

আজ বৃহস্পতিবার গণভবনে এই হেল্পলাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে টেলিফোন বা যেকোনো মুঠোফোন অপারেটর ব্যবহার করে যে কেউ শিশু অধিকার লঙ্ঘন, শিশু নির্যাতন, নিগ্রহ বা সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা বা শিশুদের সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানাতে পারবেন।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এবং ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় স্থাপিত এই কল সেন্টারে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা এর সেবা পাওয়া যাবে।

হেল্পলাইনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের যে হেল্পলাইন- ১০৯৮ চালু হয়েছে- এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতাও কমে যাবে। যারা অপকর্ম করবে তারা একটু ভীত সন্ত্রস্থ থাকবে যে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। আর এই লাইনটি যদি কেউ অপব্যবহার করে তাহলে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কাজেই বিনা কারণে বিরক্তটা যেন কেউ করতে না পারে।’

মানুষের ভেতরের সুপ্রবৃত্তিগুলো যেন জাগ্রত হয় সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই প্রচারটা করে যাওয়া, মানুষের ভেতরকার পশুত্বটা যেন জেগে না ওঠে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মাকেও একটা জিনিষ বুঝতে হবে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিলেই কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হলো না। বরং তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমাজটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। তাদের মন মানসিকতা ভালো হবে। তারা লেখাপড়া শিখবে বা যেকোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এভাবেই সমাজকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের সবাইকে আমি বলব, প্রত্যেকেই এই চিন্তা করবেন যে প্রত্যেকেরই সন্তান আছে, মা-বোন আছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া যেমন প্রত্যেকের দায়িত্ব। আবার অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমাদের এ টু আইয়ের মাধ্যমে সেটা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি-আমাদের শিশু আদালতগুলো  শুধু না, সারা বাংলাদেশের আদালতগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে নবনির্মিত যে কারাগার (কেরানীগঞ্জ) সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি কোর্ট রুম তৈরি করতে। কারাগারের সঙ্গে কোর্ট রুম থাকবে। যেসব আসামি ভয়ংকর প্রকৃতির, যাদের বারবার আদালতে আনা নেওয়া করাটা সমস্যা, তাদের জন্য ওই খানেই আদালত বসবে। ওই খানেই তাদের আইনজীবীরা থাকবে এবং অনলাইনে বিচার হবে। এই অনলাইনের বিচার কার্যক্রম শুরু করতে আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি। আর শিশু আদালতের জন্য এটা আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত সিইও ইয়াসির আমান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের পক্ষে সারা বোরদাস উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ‘দ্য চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন’ প্রকল্প এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭৯টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করাসহ মোট দুই হাজার ৭০ জন শিশুকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সুপারিশমূলক পদ্ধতির ভিত্তিতে দেশজুড়ে আইনি ও পুনঃএকত্রীকরণ সেবা দেওয়া হয়েছে। চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ এ পর্যন্ত মোট ফোন এসেছে ৪৫ হাজার ৭০৫টি।
চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর কেন্দ্রীয় কলসেন্টারে কর্মরত সমাজকর্মীরা দুস্থ ও সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজন মাফিক তথ্য ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে থাকেন।

আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে চাইল্ড হেল্পলাইন বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের সেইফহোমে থাকা ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

সূত্র: এনটিভি