শিবগঞ্জে সুদিন ফিরেছে পাট চাষীদের: লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ আবাদ

কামাল হোসেন:
বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাটের যেন আবারো সুদিন ফিরেছে শিবগঞ্জে। ভালো দাম না পাওয়া সহ নানা কারনে পাট আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা কৃষকরা আবারো আগ্রহী হয়েছেন পাট আবাদে। এ বছর শিবগঞ্জে ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় রাস্তার পাশের ছোট ছোট জলাশয়ে পাট জাগ দেয়ার কাজ করছেন কেউ কেউ, কেউ কেউ আবার জাগ দেয়া পাট উঠিয়ে তা থেকে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছে, কেউ কেউ ব্যাস্ত সেই ছড়ানো আঁশ গুলো পরিস্কার করে ধৌয়ার কাজে।

কথা হয়, কালিগঞ্জ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি জানালেন এবছর তার ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাটের ফলন ভালো হয়েছে, তিনি আশাবাদি বিঘা প্রতি ১৩-১৪ মন করে সোনালী আঁশ ঘরে উঠবে তার। সেই সাথে বাড়তি হিসাবে বেশ কয়েকমন পাটকাঠিও পাবেন। তবে এই কৃষকের কিছুটা খরচ বেড়ে গেছে তার জমির পাশে জলাশয় না থাকায়।
তিনি জানান, বিশ্বনাথপুর কালিগঞ্জ মাঠে তার জমি, সেখান থেকে পাট কেটে কয়েক কিলোমিটার গাড়ী ভাড়া দিয়ে এখানে রাস্তার পাশে এনে জাগ দিয়েছেন।  পাট চাষের কাজে তিনি নিজে শুরু থেকেই শ্রম দিয়েছেন, এতে করে শ্রমিক খরচ তার কিছুটা কম লেগেছে। সবমিলিয়ে তার বিঘা প্রতি প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

 
জিয়ারুল ইসলামে নামে আরেক কৃষক জানান, তিনি এবার তার দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। নিজেই গোবর কম্পোস্ট সার তৈরী করে জমিতে দিয়েছেন,সেই সাথে নিজেই অধিকাংশ শ্রম দিয়েছেন, তার দুই বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই বিঘা জমি থেকে ২৫-২৬ মন পাট পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

13 copy
তিনি বলেন বাজারে বর্তমানে ১৩শ-১৪শ টাকা মন ধরে পাট বিক্রি হচ্ছে, এই দাম থাকলেও তার ভালো লাভ হবে। সেই সাথে পাটকাঠি বিক্রি করেও বাড়তি আয় হবে তার।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের মাহবুব আলম নামে এক জমির মালিকের সাথে কথা বলেন জানা যায়, তার ৫ বিঘা জমিতে তিনি পাটের আবাদ করেছেন। শ্রমিক দিয়ে পুরো চাষাবাদ করায় তার বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।তবে তিনিও পাটের দামে খুশি। জানালেন সব খরচ বাদ দিয়েও তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে।
মনকষা ইউনিয়নের ইউনুস আলী কালু নামে এক কৃষকও পাট আবাদে লাভবান হওয়ার কথা বলেন, তবে তিনি বলেন পাটের বাজার যাতে না পড়ে সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেন।
পাট চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ার কারণ হিসাবে প্রথমেই গেল বছর তুলনামুলক পাটের বাজার দর ভালো থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাজদার রহমান জানান, গেল বছর কৃষক প্রায় ১৫শ-১৮শ টাকা মন ধরে পাট বিক্রি করতে পেরেছিলো। সে কারনেই এবছর অধিক জমিতে তারা পাট আবাদ করেছেন।
তিনি বলেন, বিগত বছর গুলোর তুলানায় এবছর জেলায় পাটের আবাদ বেড়েছে। এবছর ৫৫৬ হেক্টর লক্ষমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে শিবগঞ্জে ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করছেন কৃষকরা।
স/শ