শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, এমডির স্ত্রী-ভাই গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে এ হামলার ঘটনায় রাতেই মামলা করা হয়। এ পরে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে দু্জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কলেজের এমডি মনিরুজ্জামান স্বাধীনের স্ত্রি বিউটি খাতুন ও স্বাধীনের ভাই মেহেদী হাসান মিথুল।

নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মনির বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের পক্ষে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বাদী হয়ে এমডি স্বাধীনসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা কলেজে শীতের পোশাক আনতে গেলে তাদের ওপর হামলা করে স্বাধীনের ভাইসহ বহিরাগত ক্যাডাররা। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীও রয়েছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বহিরাগত ডেকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন এ হামলা করে নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ওপর।

রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন, রায়হান (২১), তাহসিন (২১), সাব্বির (২১), ফাওজিয়া (২১), বিদিশা (২১), মেধা (২১, রেফাত (২১), নিশাত (২১) ও জেবা (২১)।

আহত শিক্ষার্থীরা জানান, জনা বিশেক শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার বিকেলে কলেজ হোস্টেল থেকে তাঁদের শীতের কাপড় নিতে যান। প্রথমে তাঁদের ক্যাম্পাসে হোস্টেলে যেতে বাধা দেওয়া হয়। পরে ঢুকতে অনুমতি দিয়ে হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে বহিরাগত কয়েকজন ক্যাডার। তারা মেডিক্যাল কলেজের প্রধান ফটকের সামনেই শিক্ষার্থীদের রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে বেদম প্রহার করতে থাকে। মারপিটের শিকার শিক্ষার্থীরা দিগি¦দিক ছুটোছুটি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের ধরে ধরে পেটানো হয়। এতে অনেকেই রক্তাক্ত জখম হয়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়রা ও অন্য শিক্ষার্থীরা গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে।

রিয়াজুল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যববস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীনের ভাই মিথুল ও টিটুর নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। এতে বহিরগাত ও কলেজের কর্মচারীরাও অংশ নেয়। তারা মেয়েদেরও ধরে ধরে পেটাতে থাকে।

এদিকে জানা গেছে, বন্ধ ঘোষণা করার পরে আজ শনিবার ঢাকা থেকে একটি টিম রাজশাহী শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজটি পরিদর্শনে যাবে আবার। ওই খবর পেয়েই মূলত শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছিলো। শিক্ষার্থীরা তদন্ত দলটিকে বুঝাতে চাইবেন, তাদের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। আর এই বিষয়টি জানতে পেরে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতেই এ হামলার ঘটনা ঘটায় বলেও কেউ কেউ দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা লঙ্ঘন করায় রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানটি কয়েক দফায় ২২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এখনো যারা এমবিবিএস শেষ করতে পারেননি তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে মাইগ্রেশন করার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

স/আর