শরীয়তপুরে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, হাহাকার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শরীয়তপুরে প্রতিনিয়ত বন্যার অবনতি হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

 

 

জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণসামগ্রী এলেও তা অপ্রতুল।

 

 

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নে প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, কিছু টাকা ও ত্রাণসামগ্রী এসে পৌঁছেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের  তালিকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।

 

 

বন্যার পানির সঙ্গে প্রবল বর্ষণের কারণেও শরীয়তপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি অব্যাহত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিামিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে নতুন নতুন এলাকায়। বন্যাকবলিত এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

 

 

বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় বাড়ির উঠানে পানি ওঠেছে। অনেকেরই  ঘরের মধ্যে পানি ঢুকেছে। মানুষ এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছে। যাতায়াতের জন্য কলা গাছের ভেলা বানিয়ে  পারাপার চলছে। ঘরের ভেতরে মাচা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লোকজন।

 

 

জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডুবা, পালেরচর, বড়কান্দি, বিলাসপুর, কুন্ডেরচর, নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, কেদারপুর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা, তারাবুনিয়া, গোসাইরহাট উপজেলার আলালপুর, কোদালপুর, কুচাইপট্টি, শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর, চন্দ্রপুর, চিতলীয়া ও ডোমসার ইউনিয়নের অন্তত ৮০ গ্রামের এক লাখেরও অধিক লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পরেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে মানুষের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। মানুষ রান্না করে খাওয়ার মতো অবলম্বনটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। ফলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে শরীয়তপুর জেলার একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে।

 

 

চরনড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজি অসিমদ্দিন মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরত খারকান্দি সরকারি জগৎ জীবনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানি ঢুকে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া কাজিয়ারচর সলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যাবিদ্যালয়, মান্নান মল্লিকের কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, ডি এম পাইলট জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাঁচটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 
বন্যাদুর্গত এলাকার পানিবন্দি কুন্ডরচর ইউনিয়নের আবদুল হালিম, আবদুল মজিদ, আজিজুল হক ও  মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ৭-৮ দিন ধরে পানির নিচে আছেন। গরু-ছাগল নিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে তাদের। এদের একজন বলেন, ‘আমাগো কাছে কেউ এহনো কোনো সাহায্য নিয়ে আহে নাই। মানুষের খাওন যেমন তেমন, গরু-ছাগলের ঘাস-কুটা জোগাড় করাই কষ্টকর।’

 

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বন্যার পানিতে জেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা মোকাবিলার জন্য গত রোববার জরুরি সভা করা হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ২২৫ টন চাল, সাত লাখ টাকা ও শুকনা খাবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হয়েছে।

সূত্র: এনটিভি