‘লেবুচুরে’ বিখ্যাত রাজশাহীর সাজ্জাদ

সৌহরাওয়ার্দী আহম্মেদ সাগর:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিখ্যাত সাজ্জাদের লেবুচুর খায়নি এমন মানুষ রাজশাহীতে হয়তো খুব কমই রয়েছে। শুধু রাজশাহীতেই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং রাবিতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শহরে বাইরেও পরিচিতি পেয়েছে সাজ্জাদের এই বিখ্যাত লেবুচুর। বলতে গেলে, রাজশাহীর বর্তমান আলোচিত খাবারগুলোর তালিকায় রয়েছে তার এই লেবুচুর।

কিন্তু তার কর্মজীবনের শুরুটা এমন ছিল না। তিনি ছিলেন সাধারণ এক চকলেট বিক্রেতা। আর আজ তিনি পুরো রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়েছেন তার নতুন রেসিপি ও নানান নামের ভাজা দিয়ে। মো. সাজ্জাদ হোসেনের জন্ম রাজশাহীতেই। শৈশব থেকেই তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। সাধারণ একজন ভাজা বিক্রেতা থেকে এখন তার সুনাম সবার মুখে মুখে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্য সব ভাজাওয়ালার মতোই তিনি একটি ভাজাগাড়ি সাজিয়েছেন। তবে তার ভাজার নতুনত্ব তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।

রাবি ক্যাম্পাসের ইংরেজী অনুষদের সামনে শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল থেকে প্রায় রাত ৮টা পর্যন্ত ভাজাগাড়ি নিয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রিয় সাজ্জাদ ভাইয়ের ভাজাগাড়িকে গোল করে ঘিরে থাকে। ফাঁকা থাকে খুব কম সময়।

সাজ্জাদ নানা রকম আইটেম দিয়ে নতুন নতুন স্বাদের ভাজা তৈরি করেছেন। আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন স্বাদের ভাজা। যেই আইটেমগুলো অন্য সবার থেকে তাকে আলাদা করেছে সেগুলার মধ্যে রয়েছে লেবুচুর, ভাংচুর পিনিক, বোমসহ আকর্ষণীয় ভাজা আইটেম। আর সেগুলোর এই ভিন্নধর্মী স্বাদের মাধ্যমেই ভাজাপ্রিয় মানুষের কাছে প্রিয় হয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন।

১১ বছর বয়স থেকে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। শুরুটা হয় চকলেট বিক্রি থেকে। তার এই ব্যবসায় জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফেরি করে চকলেট বিক্রি করতাম, ওখান থেকে লাভের টাকা জমিয়ে রাখতাম নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করারজন্য। চকলেট বেঁচতে ভালো লাগতো না, চকলেট বেঁচায় কোনো নতুনত্ব নাই। এরপরে ‘বারোভাজা’ বানানো শিখলাম। প্রথমে একটা বড় গামলায় ভাজার দোকান সাজিয়ে ফেরি করতাম, আর ভাজা বেঁচতাম। পরে জমানো টাকা দিয়ে একটা ভাজার গাড়ি বানিয়েছিলাম।সেই গাড়িই রুপ বদল করে এখন এরকম।’

তিনি আরও জানান, “আমি ভাজা বানাতে পারি, কিন্তু কিভাবে আমার ভাজাটা সবার স্বাদের জায়গা দখল করবে সেটা নিয়ে সবসময়ই ভাবতাম। এটা ওটা দিয়ে মাখিয়ে দেখতাম নিজে নিজে, ভালো লাগলে ভাইয়া-আপুদের বলতাম খেয়ে স্বাদটা জানাতে।এইতো এভাবেই আজকে আমার লেবুচুর, ভাংচুর, পিনিক, বোম সবার কাছে প্রিয় হয়ে গেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই ক্যাম্পাসের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। আর আমার ভাজা খাওয়াতে খুব ভালো লাগে। ক্যাম্পসেনা আসলে ভালোই লাগে না। এভাবে যে রাজশাহীর বাইরের মানুষও চিনবে কল্পনা করিনি। এখন স্বার্থক মনে হয় নিজেকে।”

জি/আর