লিটনকে প্রত্যাখ্যান করে জনগণ আবারো বুলবুলকে বিজয়ী করবে

শামীম হোসেন:

আগামি ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে প্রত্যাখ্যান করে জনগণ আবারো বুলবুলকে বিজয়ী করবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান জনি । রাসিক নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের মন্তব্যের বিষয়ে  জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজশাহী সিটি করপোরশেন নিয়ে প্রচার প্রচারণা কেমন চলছে বিএনপি প্রার্থী বুলবুলের, ছাত্রদল বুলবুলের পক্ষে কী বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন-এনিয়ে সিল্কসিটিনিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন মহানগর ছাত্রদল সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি। সিল্কসিটিনিউজে তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

সিল্কসিটিনিউজ: জাতীয় নির্বাচনের পরে মেয়র বুলবুলের নামে নাশকতাসহ যে মামলাগুলো আছে আগামী নির্বাচনে তার উপর এগুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া পড়বে কিনা?

জনি: আসলে প্রতিক্রিয়া পড়বে কিনা এটা সরকারের উপর নির্ভর করবে। যে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে তার সাথে আমাদের কোনো নেতাকর্মী সম্পৃক্ত নাই। সিটি কর্পোরেশনের সামনে ট্রাক পুড়ানোর মামলা, বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরকের যে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে এসবের সাথে আমাদের কোনো নেতাকর্মী এবং মেয়র সাহেব সম্পৃক্ত না। সিদ্ধার্থ হত্যা মামলা দেখেন আপনারা। সেদিন আমরা ভুবন মোহন পার্কে প্রোগ্রাম করছিলাম, অথচ ঘটনা ঘটেছে লোকনাথ স্কুল মার্কেটে। তারপরও আমাদের উপর মামলা দেয়া হয়েছে। শুধু এটাই না, আপনি বিনোদপুর, রাজপাড়া, মতিহার, শাহ মখদুম থানা দেখেন বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে আর মামলা দেয়া হয়েছে মিজানুর রহমান মিনু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আর আমাদের বড় ভাই এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের নামে। আর অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে। আসলে এটা সরকারের উপর নির্ভর করছে। সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমাদেরকে প্রোগ্রাম করতে দেয়া হচ্ছেনা। আমরা এত বড় বড় প্রোগাম করি তারপরও আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হ্যারাজমেন্ট করা হচ্ছে। প্রশাসন দিয়ে হ্যারাজমেন্ট করা হচ্ছে। আমাদেরকে পার্টি অফিসের সামনে থেকে বের হতে দেয়া হয়না। তারা বলে যে, আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা করব। আমরা প্রোগ্রাম করি, তারা দেখুক আসলে আমরা বিশৃঙ্খলা করছি কিনা। বিএনপি সবসময় জনগণের পক্ষে। আমরা সবসময় জনগণের পক্ষে। আমরা জনগণের ক্ষতি করে প্রোগ্রাম করবনা। অথচ তাদেরকে দেখেন জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে যানযট সৃষ্টি করে প্রোগ্রাম করছে। তারা জনগণের অধিকার ক্ষুন্ন করছে।

সিল্কসিটিনিউজ: রাজশাহী শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত। আসলে এটা কি তার মর্যাদায় পৌছাতে পেরেছে? যদি না পারে তবে কিভাবে এটাকে প্রকৃত শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তোলা যায়? একজন ছাত্রদলের নেতা হিসেবে আপনি এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

জনি: রাজশাহী অবশ্যই শিক্ষানগরী। কিন্তু সরকারী সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আপনি প্যারামেডিক্যালে দেখেন । কিভাবে তারা ছাত্রীদের উপর হামলা করেছে। কিছুদিন আগে সার্ভে ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষ্যকে মারা হয়েছে। রুয়েটে তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। রাজশাহী কলেজে আমাদের ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নামে যে বাস উপহার দেয়া হয়েছে, তারা তা মুছে ফেলেছে। আপনারা সকলেই জানেন, তারা ছাত্রদের থেকে চাঁদাবাজি করছে, ছাত্রদের উপর অন্যায় করা হচ্ছে। আপনি দেখেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারীকে বহিস্কার করেছে। কেন? কারণ তারা কলেজের গাছ চুরি করে বিক্রি করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ওপেন অস্ত্রবাজি করছে।
বাস্তবধর্মী শিক্ষানগরী গড়ে তুলতে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। আমরা শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা মিটাতে কাজ করছি। সিটি স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে কথা বলছি।

সিল্কসিটিনিউজ: সহযোগী সংগঠনের প্রার্থী হিসেবে বুলবুলের প্রচারনায় তার হয়ে আপনারা কিভাব কাজ করছেন বা মানুষের মাঝে কিভাবে পৌছাচ্ছেন?

জনি: আপনি হয়তো জানেন, কয়েকদিন আগে আমরা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেছি। এতে মহানগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে লোকবল আছে। তারা অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়েছে। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া। তাদের সাথে কথা বলা। আমাদের মেয়রের পক্ষে বলা। বর্তমান সরকারের যে অন্যায়গুলো আছে তা তুলে ধরা। আমরা কেমন উন্নয়নের রাজশাহী চাই তা তুলে ধরা। আমরা সবসময় চেষ্টায় আছি। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তি ভাই ভাই। আমরা যেকোনো মুল্যে বুলবুল ভাইকে জয়ী করব। যদি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট হয় তবে আমরা বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।

সিল্কসিটিনিউজ: আপনি দাবি করছেন আমরা একযোগে কাজ করছি, কিন্তু মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট বলছেন, বর্তমান মেয়র বুলবুল এখনো নগরীর অনেক উন্নয়ন করতে পারেননি নি। এমনকি দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলও মেটাতে পারেননি। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

জনি: দলের ভিতর প্রতিহিংসা, প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। হয়তো তিনি কোনো কারনে মনক্ষুন্ন হয়েছেন। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা ছাত্রদল-যুবদল সবাই একসাথে কাজ করব। আমার বিশ্বাস, তার সাথে আমার কথা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি দেখেন রাজশাহীতে যত উন্নয়ন হয়েছে সব মিনুর মাধ্যমে হয়েছে। তারপর খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হয়েছে। কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার আমলে? শুধু নদীর ধার সাজানো আর রাস্তায় গাছের নিচে লাইটিং দিলেই উন্নয়ন হয়না। তিনি নিজেই তার বক্তব্যে বলেছিলেন, রাজশাহীর মানুষ বেঈমান। আমি আর ভোট করব না। তাহলে দেখেন, তিনি নিজ শহরের মানুষকে বিশ্বাস করেন না। আবার এখন তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছে। আবার দেখেন, বুলবুল ভাইকে বত্রিশ মাস জেলে রাখা হয়েছিল। উন্নয়ন করার জন্য কিছু সময় দরকার হয়। তা তাকে দেয়া হয়নি। আমার বিশ্বাস জনগণ আবার লিটনকে প্রত্যাখ্যান করে বুলবুলকে বিজয়ী করবে।

সিল্কসিটিনিউজ: ফেসবুকের একজন পাঠকের প্রশ্ন: বুলবুলের ঈদ শুভেচ্ছা ব্যানার রাতের আঁধারে কে বা কারা ছিড়ে ফেলেছে। এটা নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীতে বাধা তৈরী করবে কিনা?

জনি: অবশ্যই এটা হবেনা। যেদিন এ ঘটনা ঘটে সেদিন তাৎক্ষণিক আমরা সেখানে যাই। সেখানকার জনগণই বলে, এখানে আগে বুলবুলের ব্যানার ছিল। তা সরিয়ে লিটনের ব্যানার লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের গাড়িতে করে তা লাগানো হয়। প্রশাসন বলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ গোটা রাজশাহী শহরে রাতের আধারে ট্রাক নিয়ে বুলবুলের ফেস্টুন খুলে লিটনের ফেস্টুন লাগিয়েছে। এরকম অন্যায় জনগণ কোনোভাবেই মেনে নিবেনা। নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারে তবে এ নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ নেই।

সিল্কসিটিনিউজ: যদি তা-ই হয় তবে বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে?

জনি: এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়নি। ক’দিন আগেও গাজীপুরে আমাদের সাতজনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। খুলনা সিটি নির্বাচনে ৪০০ জনকে গ্রেপতার করা হয়েছে। আমাদের রাজশাহীতে ব্যানার-ফেস্টুনের বিষয়গুলা আসলেই অন্যায় । আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাব যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা হোক। আর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। না হলে এ নির্বাচনে যাওয়ার কোনো মানেই হয়না।

সিল্কসিটিনিউজ: বর্তমান মেয়রের কোন কোন উন্নয়নের কথা আপনারা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন বা নির্বাচিত হলে কী কী উন্নয়ন করতে চান ?

জনি: আসলে এখনো তো ইশতেহার হয়নি। তবে যদি রাস্তা-ঘাটের কথা বলি, আপনি দেখেন কিভাবে চারি সাইডে সুন্দর করে ফুটপাথ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে মানুষ ভালভাবে চলাচল করতে পারছে। রাতের শহরকে দিনের আলোর মতো আলোকিত করতে শহরে প্রায় ১২০০ টি সাদা পুলের লাইটিং করা হয়েছে। এছাড়া তিনি নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো করবেন। আমাদের মেয়র রাস্তার সংস্কারে টেন্ডার দিয়েছে। রাজশাহীতে বড় ফ্লাইওভার হচ্ছে। এটারও টেন্ডার দেয়া হয়েছে। নির্বাচিত হলে কল-কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

সিল্কসিটিনিউজ: রাসিক নির্বাচনকে ঘিরে ৬মাস ধরে আওয়ামীলীগ প্রচারণা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে আপনারা পিছিয়ে পড়লেন কেন?

জনি: আসলে পিছিয়ে পড়া নয়। সারাদেশে যে মামলা-হামলা আর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে এ অবস্থায় নির্বাচন করা খুব মুশকিল। আমরা ব্যানার ফেস্টুনে না থাকলেও বাড়ি বাড়ি কাজ করছি। কিছুদিন থেকে লিটনের ব্যানার ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর আগে শহরে বেশি ব্যানার-ফেস্টুন ছিল বুলবুল ভাইয়ের। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমরা পিছিয়ে নেই।

সিল্কসিটিনিউজ: একজন তরুণ নেতা হিসেবে রাসিক নির্বাচনকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

জনি: আমরা চাই মানুষ যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। যারা শহরের উন্নয়ন করবে, মানুষ যাতে তাদের ভোট সেই প্রার্থীকে দিতে পারে। যে বেকারত্ব দূর করবে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে, যে শহরবাসীর জন্য কাজ করবে, আমি চাই শহরবাসী যেন তাদের সেই প্রার্থীকে সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে। আর আমার বিশ্বাস, সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কেউ পরাজিত করতে পারবেনা।

সিল্কসিটিনিউজ: আপনাদের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন এবং কেন মানুষ তাকে বিজয়ী করবে বলে মনে করেন?

জনি: আমাদের প্রার্থীকে মানুষ অবশ্যই এজন্য বিজয়ী করবে যে, সারাদেশে যেভাবে অন্যায় করা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এসকল অন্যায় থেকে মুক্তি পেতে মানুষ তাকে বিজয়ী করবে।
যদি ভোট সুষ্ঠু হয় তাহলে রাজশাহীবাসী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিজয়ী করবে।

দেখুন লাইভটি:

রাসিক নির্বাচন নিয়ে সিল্কসিটিনিউজের মুখোমুখি রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি।

Posted by Silkcitynews.com on Saturday, 23 June 2018

 

 

স/শা