লক্ষ্য ঠিক করতে বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে : স্টিভ জবস

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

স্টিভ জবস জানতেন, অসাধারণ উদ্ভাবন উৎপাদনশীলতাকে হত্যা করে।

‘সব সময় ফোকাস করতে হবে ‘না’ বলার ওপর’। অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস এমনটাই মনে করতেন।

এমন ‘না’ বলাতে ফোকাস করার কথা তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৯৭ সালের অ্যাপলের বার্ষিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার কনফারেন্সে।

‘তোমাকে বলতে হবে, ‘না, না, না’ এবং যখন তুমি বলবে ‘না’ তখন তুমি মানুষকে ত্যাগ করতে পারবে।

জবসের মতে, ফোকাসটা কখনো ইচ্ছাশক্তি নয়। এটা ছিল একটা সাহস, যেখানে হাজারটা অসাধারণ আইডিয়াকে ছুঁড়ে ফেলে একটা লক্ষ্যে পৌঁছানো। কোন মানুষকে সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে পাগলও হতে হয়।

৫ অক্টোবর অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। স্টিভ জবস সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যম সিএনবিসির প্রদায়ক সুজে ওলসি। সেখানে জবসের অসাধারণ কিছু কথা তুলে ধরেছেন তিনি। যেগুলো জবস ৯৭ সালের সম্মেলনে বলেছিলেন।

১৯৯৭ সালটা অ্যাপলের জন্য খুব খারাপ একটা সময় ছিল। ১৯৯৬ সালের ছুটির দিনগুলোতে অ্যাপলের বিক্রি একেবারে পড়ে যায়। তারা পণ্য বিক্রির যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল তার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছিল।  শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য পূলণ করতে পারেনি।

সে সময় অ্যাপল তাদের কিছু পণ্যের ‘হট লিস্ট ও হিট লিস্টের’ তালিকা করে তাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করে। এমন কী সে বছরই অ্যাপলের এক তৃতীয়াংশ কর্মীকে ছাঁটাই করে।

কিন্তু ৯৭ এর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আবার ফিরে আসেন জবস। নতুন করে তিনি অ্যাপলের পণ্য উৎপাদন ও ডিজাইনে নজর দেন। কোম্পানটি যেসব সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল তার মূল সমস্যাগুলো সনাক্ত করতে শুরু করেন স্টিভ জবস। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীরা তখন খুবই সুন্দর কাজ করছিলেন। তবে তাদের কাজ প্রতিষ্ঠানটিকে ‘ভিন্ন ভিন্ন ১৮ দিকে’ নিয়ে যাচ্ছিল।

‘আমি জানি তোমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে খুবই ভালো কাজ করছো এবং মাথার মধ্যে একটা অন্য ধরনের বুলেট নিয়ে ঘুরছো। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তোমাদের ব্যথা অনুভব করছি, কিন্তু অ্যাপল গত কয়েক বছর ধরে প্রকৌশলী ব্যবস্থাপনায় ভুগছে।’ কনফারেন্সে ব্যাখ্যা করেছিলেন জবস।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোনটা জ্ঞান এবং কোনটা নয়।
জবস পরের বছর ব্যাখ্যা করেছিলেন, অ্যাপলের কোন কিছু বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা খুবই দৃঢ়। কিন্তু এর মধ্যে ‘অনেক ভুল কিছুর চমৎকারভাবে বাস্তবায়ন করাও’ হয়ে যায়।
বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়ে জবস বলেন, কিন্তু ভুল জিনিসের বাস্তবায়ন মোট ভালো জিনিসের বাস্তবায়নের সংখ্যায় নগণ্য।
এই পরামর্শটি এমন একটি কাজের জগতের মধ্যে ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ যেখানে প্রায় প্রত্যেক প্রকল্প এমন উচ্চাধিকারের মনে হতে পারে।
অনেক কর্মী বলেন, তারা খুব দ্রুত রেসপন্সের প্রয়োজন অনুভব করেন।উদাহরণ হিসেবে, ইমেইল বা স্ল্যাক ম্যাসেজে তারা ফিডব্যাক চান তাদের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তার।
৯৭ সালের সম্মেলনের অন্তত ১০ বছর পর কোন আইডিয়াকে পরিত্যাগ করার গুরুত্ব বোঝান জবস স্পোর্টসে বর্তমানে বিশ্বখ্যাত নাইকির প্রধান নির্বাহী মার্ক পার্কারকে দিয়ে। পার্কারের মতে, জবস তাকে বলেছিলেন, কোন ফোকাসকে কখনো জবস হ্যাঁ বলে নয়, কিন্তু শিক্ষাটা নিতে হবে স্মার্ট, আকর্ষণীয় কাজ মানুষকে তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া বিষয় থেকেও সরিয়ে নিতে পারে।
‘ফোকাস’ সম্পর্কে জবস পার্কারকে বলেছিলেন, এটি শত শত ভালো ধারণাকে না বলতে পারে।
জবস বলেন, ‘আমি আসলে এখনো গর্বিত যেসব জিনিস আমরা করতে পারিনি তা নিয়ে, যেটা করেছি তা নিয়ে নয়। উদ্ভাবন হাজার বার বলতেই থাকবে ‘না’। তোমাকে সেটি খুব সাবধানে নিতে হবে।’
বিলিয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট এমন ধারণাই তার মস্তিষ্কে লালন করতেন। সফল ব্যক্তি এবং সত্যিকারের সফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সত্যিকারের জন সবকিছুতেই বলতে থাকবে ‘না’।
যখনই আপনি হ্যাঁ বলবেন তখনই আপনি একটি দলের খেলোয়াড়ের মতো হয়ে যাবেন। এটি আপনাকে একটা নির্দিষ্ট জাযগা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। একটা পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি কিছু থেকে আপনাকে সরিয়ে দেবে-বলেন সিএনবিসির প্রদায়ক সুজে ওলসি।
‘আসলে সত্য কথা হচ্ছে, ‘না’ বলাটা সবচেয়ে কঠিন’ যেটা বলতে পারতেন জবস, বলেন ওলসি।