রুয়েটে ৬ গাড়ির অস্থায়ী গ্যারেজ নির্মাণেই ব্যয় প্রায় কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) মাত্র ছয়টি বাস পার্কিংয়ের জন্য পৌনে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টিলের অস্থায়ী গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। তিন পাশে ইটের গাঁথুনির দেয়াল আর ওপরে স্টিলের ছাউনির এই গ্যারেজের ডিজাইন তৈরির জন্য কনসালট্যান্সি ফার্মকে ফি দেওয়া হয়েছে আরও ১ লাখ টাকা।

অতি সাধারণ মানের এই গ্যারেজের নির্মাণব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একাধিক অধ্যাপক এই ব্যয়কে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এই টাকা দিয়েই স্থায়ী ও বড় গ্যারেজ নির্মাণ করা যেত।

নথিপত্রে দেখা গেছে, রুয়েটে রাজস্ব খাতের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। প্রস্তাবটি যাচাই শেষে অনুমোদন দেয় ইউজিসি। গ্যারেজ নির্মাণে প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকা। পরে ই-জিপিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করেন রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন।

টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উষা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৫ ফুট প্রস্থের স্টিলের গ্যারেজটি নির্মাণে চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৮০ দিন সময় বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ফলক উন্মোচন করে গ্যারেজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৬ জুন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়নি।

নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময়সীমা বাড়ায় কর্তৃপক্ষ। পরে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। তবে এর আগেই ২০২২ সালের ২৭ জুলাই ফলক উন্মোচন করে গ্যারেজটির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ।

নির্মাণকাজ শেষে সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিলও পরিশোধে দাপ্তরিক অনুমোদন দেন উপাচার্য। ফলে ঠিকাদারের সব বিলই পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্যারেজ নির্মাণকাজ ও উদ্বোধনের দুটি ফলক রয়েছে। দুটি ফলকেই একই উপাচার্যের নাম লেখা। সাদামাটা ডিজাইনে গ্যারেজটির ফিনিশিংয়ের কাজ করা হয়নি ঠিকমতো। ইলেকট্রিক ওয়্যারিং করা হয়েছে নামে মাত্র। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ওয়্যারিং করা হয়েছে। ইলেকট্রিক সামগ্রীগুলোও খুলে পড়ার মতো অবস্থা।

ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র বলছে, মাস দু-এক আগেও কোটি টাকার এই গ্যারেজে গরু রাখা হতো। রুয়েটের কয়েকজন কর্মচারী ক্যাম্পাসে গরু লালন-পালন করেন। তাঁদের গরুর পাল সেখানে রাত-দিন থাকত। তবে কিছুদিন থেকে গ্যারেজটিতে ছয়টি বাস পার্কিং করে রাখা হয়।

এই গ্যারেজের বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একাধিক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রুয়েট হলো ইঞ্জিনিয়ার তৈরির কারখানা। রুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাতেও চাকরি করেন বেশ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার। তাহলে এ ধরনের গ্যারেজের ডিজাইনের জন্য কেন কনসালট্যান্সি ফার্ম নিয়োগ করতে হবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি গাড়ি থাকলেও এই গ্যারেজ গাড়ি রাখা যায় মাত্র ছয়টি। এ ছাড়া এই টাকা দিয়েই তো একটি স্থায়ী গ্যারেজ নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। স্টিলের গ্যারেজ নির্মাণে এত টাকা খরচ হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উষা কনস্ট্রাকশনের মালিক মঞ্জুর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেই আমরা কাজ পেয়েছিলাম। কাজটাতে আমাদের তেমন লাভও হয়নি। কারণ নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় আমাদের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। তবে কাজের মান ভালো হয়েছে।’

এ বিষয়ে রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ২৬টি গাড়ি রয়েছে। কিন্তু গাড়ির জন্য আলাদা গ্যারেজ ছিল না। প্রশাসন ভবনের সামনে কয়েকটি গাড়ি রাখা হতো। তাই ইউজিসির অনুমোদন নিয়েই জিওবি ফান্ড থেকে এই অস্থায়ী গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে গ্যারেজের জায়গাটি একটু ছোট হয়ে গেছে। এ কারণে বেশি গাড়ি রাখা যাচ্ছে না। আপাতত ছয়টি গাড়ি রাখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় গ্যারেজ নির্মাণ করা হবে।’ গ্যারেজটি নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় হয়নি বলেও দাবি তাঁর।

এ বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এসব কাজ আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই হয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি কেবল রুটিন কাজ করছি।’