‘রিকশায় প্যাডেল মারলে গরমে মনে হচ্চে কলজ্যাটা ফাটি যাইচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী নগরীর রিকশা চালক মজিবর রহমান বলছিলেন, একটু ঘুরতেই কাহিল হয়ে পড়ছি। গরম আর রোদের তাপে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকায় দায়, রিকশায় প্যাডেল মারলে গরমে মনে হচ্চে কলজ্যোটা ফাটি যাইচ্ছে। কিন্তু আমরা তো গরিব মানুষ, প্যাডেল না মারলে তো সংসারের চাকা চলবে না। তাই গরমে অনেক কষ্টের পরও চলতে হচ্ছে রাস্তায়। শুধু মজিবুর রহমানেরই এই অবস্থা নয়, গোটা রাজশাহী অঞ্চলে শ্রমজীবী মানুষদেরই এখন এমন কাহিল অবস্থা দাঁড়িয়েছে তীব্র দাবদাহে।
সকাল হতে হতে না হতেই রোদের প্রখরতায় চারিদিকে যেন আগুনের হলকা ছুটছে। আর দুপুর হওয়ারহতে না হতেই সেই হলকা বৃদ্ধি পেয়ে আরো ব্যাপকতা লাভ করছে। এসময় রাস্তা-ঘাট দিয়ে মানুষের চলাচলও দায় হয়ে পড়ছে তীব্র গরম আর রোদের দাপটে।

জৈষ্ঠ্যের দাবদাহ আর অব্যাহত খরায় তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চল। অব্যাহত দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। যেন হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে প্রাণীকূলে। সারাদিন ঠাঁ ঠাঁ রোদে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই যেন গরম আর গরম। শান্তি মিলছে না কোথাও।

গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর আবহাওয়ার তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় প্রশান্তির একমাত্র উপায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে যাচ্ছে।

  • এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার যায়গা নেই। বেডে ফ্লোরে সবখানেই গরমজনিত কারণে রোগী আর রোগী। এতো রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর আজগার হোসের সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘ডায়রিয়া, শাস্বকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত  গড়ে প্রতিদিন এক-দেড় শ রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনোই ২৩ ডিগ্রির নিচে নামেনি। গতকাল রবিবার দুপুর রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

  • গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ছিল ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় প্রতিদিনই এমন তাপমাত্রা বিরাজ করছে রাজশাহী অঞ্চলে। এতে করে মানুষসহ প্রাণীকূল যেন হাঁসফাঁস করছে। ব্যাহত হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। অব্যাহত এই তাপমাত্রার পাশাপাশি ব্যাপক গরমে উত্তরাঞ্চলে দাবদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। একটু শীতলতার জন্য মানুষ- ও পশুপাখিদের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে।

সকাল ১১টা বাজতে না বাজতেই রাস্তা-ঘাট রোদে খাঁ খাঁ করছে। দুপুরের দিকে অবস্থা আরও বেগতিক আকার ধারণ করছে। প্রচ- রোদের তাপে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ারই সাহস পাচ্ছেন না। রাস্তাÑঘাট অনেকটায় ফাঁক হয়ে যাচ্ছে।

  • রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষক মানিক হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলছিলেন, ‘এতো গরমরে বাবা, কিভাবে মাঠে কাজ করবো। মাঠে গেলেই শরীরটা কুলাচ্ছে না। রোদ আর গরমের দাপটে কাজ করা দায় হয়ে পড়ছে। একটুতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এভাবে কাজ করা যায়?

এদিকে গরম থেকে স্বস্তি পেতে মানুষ ছুটছেন বিভিন্ন প্রকার ঠান্ডা পানীয়ের দোকানে। ডাবেরও চাহিদা বেড়ে কয়েকগন। গরম আর স্বর্দির কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-বালাইয়ে। অপরদিকে এই অবস্থায় চলছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ঘরে-বাইরে যেন কোথাও টিকা দায় হয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধ, রোগী এবং খেটে খাওয়া মানুষদের।

স/আর