রাহুলের কবিতা ‘অর্পণ ক্রিকেট খেলবে!’

সিল্কসিটিনিউজ সাহিত্য ডেস্ক:

                অর্পণ ক্রিকেট খেলবে!

মনিরুজ্জামান শেখ রাহুল

দুপুরের খাবারটা শেষ করল তাড়াতাড়ি,
মাঠে যাবে খেলতে অর্পণ অধিকারি।

মাঠের মধ্যে হাটার সময়
তীব্র গতিতে বল ছুটে আসল তার সমুক্ষে,
বলটি সজোরে ছুড়ে দিল
বল চলে গেল বলারের অক্ষে।

তাদেরকে বলল, ক্রিকেট খেলব,
তোমাদের সাথে নিবে কি আমায়?
তারা বলল, খেলার জন্য দিতে হবে দশ টাকা
তবেই আমাদের কাছে নেই কোন বালাই।

সে বলল, আমার কাছে নেই কোন টাকা,
জীবন তো দারিদ্রের কষাঘাতে আঁকা।
খেলতে চাই আমি আনন্দ করে
দয়া করে খেলতে নাও তোমরা,
কয়েকদিন পর টাকা না দিলে
তুলে নিও আমার গায়ের চামড়া।

আরো বলল, কয়েকদিন পর পর পাই আমি
কোচিংয়ের জন্য পাঁচ টাকা ভাড়া,
কিন্তু তাতেও রাজি হয় না বন্ধুরা
তার উপর হয় অতিমাত্রায় চড়া।
তারা বলল, না, হবে না তোমার খেলা,
চলে যাও, কেন সৃষ্টি করছ বিশৃঙ্খলা।

ব্যথিত হয়ে গাছের নিচে বসল অর্পণ,
নিজেই দেখল তার দরিদ্রতার দর্পণ।
হতাশ মনে চেয়ে থাকে খেলার দিকে,
খুব ভালোবাসে প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে।

গতদিনের কোচিং থেকে আসার জন্য
রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়েছে পাঁচ টাকা,
কিন্তু এর জন্য তার পাড়ি দেওয়া
দেড় মাইলের পথ ছিল আঁকাবাকা।

সেদিনও বিকালে মাঠে গেছিল অর্পণ
হয়ত তাকে খেলা নিবে বলে তাই,
কিন্তু টাকা দিতে না পারায়
খেলার জন্য ছিল না কোন উপায়।
পত্রশূন্য গাছের নিচে নিয়েছিল ঠাই,
হয়ত কেউ ডাকবে, সেও তো খেলতে চাই।

কয়েকদিন পর বাঁচালো আরো পাঁচ টাকা
কোচিং থেকে ফেরার রিক্সা ভাড়া,
তার জমানো হলো মোট দশ টাকা
খুশিতে মনে বইছে আনন্দের ধারা।

হনফন গতিতে অর্পণ উপস্থিত মাঠে,
দশ টাকা দিল, যা জমিয়েছিল অনেক কষ্টে।
অতঃপর অর্পণ খেলছে আনন্দের সহিত,
প্রকৃতিও যেন হয়েছে তার সঙ্গে মোহিত।

কয়েক ওভার পর খেলা থামল
বলে ধরল ক্ষুদ্র ফাটল,
সবাই বলল, দিতে হবে পাঁচ টাকা
তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল।

আবারো অর্পণকে দিতে হবে পাঁচ টাকা
তাহলে তো আরো তিন চার দিন,
তবে কি পুনরায় সে মাঠে আসবে?
বেদনায় ধীরে ধীরে অর্পণের মন হচ্ছে ক্ষীণ।

লেখক: রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এই কবিতাটি কবি তার পরমপ্রিয় মা মনিরা রহমানকে উৎসর্গ করে লিখেছেন।