রাস্তায় মহিলাকে পেটালো স্যান্ডো গেঞ্জি পরা পুরুষ পুলিশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: এক মহিলাকে প্রকাশ্যে পেটাতে পেটাতে নিয়ে যাচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মী ও এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তার সঙ্গে বাসিন্দাদের একাংশও ওই মহিলাকে মারধর করতে শুরু করে দেন। মহিলাকে প্রথমে রাখা হয় পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ সূত্রের খবর, পরে ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর বারোটার কিছু আগের ঘটনা। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ভারতেন বাগুইআটির জগৎপুরে একটি মাংসের দোকানে এক মহিলা আচমকা ঢুকে পড়ে মাংস কাটার চপার হাতে তুলে নেন। সেই চপার তুলে চার দিকে ঘোরাতে শুরু করে দেন। দোকানের সামনে হাজির লোকজনের দিকে তেড়ে যান ওই মহিলা। স্বাভাবি ভাবেই আতঙ্কে সিঁটিয়ে যান ঘটনাস্থলে দোকানদার থেকে শুরু করে উপস্থিতদের সকলেই।

তাঁকে থামাতে না পেরে জগৎপুর পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে দু’জন কনস্টেবল ও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

আরও পড়ুন: হাওড়া ব্রিজে রেষারেষিতে বাস উল্টে মৃত ২, আশঙ্কাজনক ৩ জন

অভিযোগ, দুই পুলিশ কর্মীর পরনে পুলিশের পোশাক ছিল না। একজন স্যান্ডো গেঞ্জি এবং একজন সাধারণ পোশাকে ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের হাতে ছিল লাঠি। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা মহিলাকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, নিরস্ত্র করতে গিয়ে ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধর করেন ওই পুলিশ কর্মীরা।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। অন্তত তাঁর আচার-আচরণ দেখে তাঁদের তাই মনে হয়েছে। পরে জানা যায় শিপ্রা হালদার নামের ওই মহিলে বাগুইআটির আদর্শপল্লির বাসিন্দা।

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জোরদার প্রশ্ন উঠেছে। কেন কোনও মহিলা পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হল না?  এই ধরণের মানসিক ভারসাম্যহীন কোনও ব্যক্তি যদি হিংসাত্মক আচরণও করেন সে ক্ষেত্রে পুলিশ কি এ ভাবে নির্দয় ভাবে মারধর করতে পারেন?

পুলিশ কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, পুলিশ ফাঁড়িতে কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী ছিলেন না। বাগুইআটি থানা থেকে মহিলা পুলিশ কর্মী পাঠাতে গেলে দেরি হয়ে যেত। কেননা ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা চপার নিয়ে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিলেন।

কিন্তু এ ভাবে কি মারধর করা যায়? পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, বাসিন্দারাই ওই মহিলাকে ধরে ফেলেছিলেন। সেখানে পুলিশের ভূমিকা কি ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে তার ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ শীর্ষ পুলিশ কর্তারা।

যদিও এই ঘটনা প্রসঙ্গে মনোরোগ নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায় জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, মারধর নয়। তিনি বলেন, ‘‘যদি ওই মহিলা হিংসাত্মক আচরণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে পুলিশ কিংবা বাসিন্দারাও একই কাজ করেছেন। এটা এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত মানসিক ভারসাম্যহীন হলে আরও বেশি।’’

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মানবাধিকার সনদে যে সব প্রাথমিক বিষয় রয়েছে পুলিশ তা লঙ্ঘন করতে পারে না। বিশেষত যাঁরা সিভিল ডিউটি করছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে সব পুলিশ কর্মী ওই কাণ্ড ঘটালেন তাঁদের বরখাস্ত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে এই ঘটনায় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করবে। পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’