রাসিকের এক হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। এসময় সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মোট এক হাজার ৭ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র।

মেয়রের বজেট বক্তৃতার অংম তুলে ধরা হলো:

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মহানগরবাসী আমাকে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে আমি ও আমার পরিষদ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন এবং রাজশাহীকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক, উন্নত, বাসযোগ্য ও মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত চার বছর নিরলস পরিশ্রম করে রাজশাহী মহানগরীকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরীরূপে গড়ে তোলার স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পরিবেশ পদক-২০২১ প্রদান করে পুরস্কৃত করেছেন। এ গৌরব সমগ্র মহানগরবাসীর। আমি ইতোমধ্যে পদকটি প্রিয় রাজশাহীবাসীকে উৎসর্গ করেছি। এছাড়া ১৮৬৭ কোটি টাকার রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প ১৪.০৬.২০২২ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদন হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

যে মুহুর্তে আমরা উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রয়েছি এবং অত্যন্ত শক্তহাতে করোনার প্রভাব মোকাবেলা করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ^কে দারুন এক অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছি। আগামীতে সম্মিলিতভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। আরও উল্লেখ্য, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭১% এর বেশি। যা ইতোপূর্বে কখনও হয়নি।

বর্তমানে মহানগরজুড়ে যে পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী মহানগরীকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য, আধুনিক, কর্মচঞ্চল ও আলো ঝলমলে মহানগরীতে পরিণত করা। যার অনেকটাই বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে আমরা করতে পেরেছি। আগামীতে রাজশাহী মহানগরীকে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাজশাহীবাসী ও সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।

রাসিকের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ;

বিগত চার বছরে যে সকল উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাস্তবায়িত হবে তার বিস্তারিত বিবরণ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি:-
০১। রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প : ১৬৪ কোটি ১৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির আওতায় মহানগরীর আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত করে চারলেন সড়কে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। সড়কটির উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের আইল্যান্ডে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে।

০২। রাজশাহী মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প : ১৮৯ কোটি ৩৪ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির আওতায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া, মোহনপুর হয়ে চৌদ্দপায়া রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নগরীর ২টি মহাসড়কের পূর্ব-পশ্চিমমুখি ৬.৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ, রেলওয়ে ক্রসিং-এ ১টি ফ্লাইওভার, ১টি ব্রীজ, ৮টি কালভার্ট, মিডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। একই সাথে প্রকল্প এলাকায় আবাসনসহ আর্থ-সামাজিক ও পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

০৩। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় হতে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প : ১২৬ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির আওতায় মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ উপশহর মোড় হতে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে রাণীবাজার মোড় হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে।

০৪। রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প :
১৯৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করা হয়েছে, সাথে ড্রেন, ফুটপাত ও বাই সাইকেল লেন নির্মিত হয়েছে। সড়কটিতে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সরণি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ৩৬.৮১ কিলোমিটার নতুন সড়ক, রাস্তা সংস্কার ৫৮.৬৯ কি.মি. ড্রেন ৩৩.৬০ কি.মি এবং ফুটপাত ১২.৪৩ কি.মি কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও সড়কসমূহে দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। কাজটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

০৫। রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও নর্দমা সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প:
৪৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির আওতায় মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহের প্রান্তিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কার্পেটিং, সিসি ও নর্দমা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সোনাদীঘি মোড় হতে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কার্পেটিং নতুন সড়ক ৪.৩২ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা সংস্কার ১.৪২কি.মি এবং সিসি রাস্তা ৫৩.২৯ কি.মি. এবং ৩৬.৭২ কি.মি. ড্রেন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

০৬। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়):
১৯৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৬.৩৬ কিলোমিটার প্রাইমারী, ১৯.২৯ কিলোমিটার সেকেন্ডারি এবং ৬৭.৭৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি নর্দমা নির্মিত হয়েছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নর্দমার কাঁদামাটি অপসারণে ৯টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে মোট ৮.৬৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নির্মিত নর্দমাসমূহে মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে।

চলমান উন্নয়ন প্রকল্প :
০৭। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প :
২৯৩১ কোটি ৬১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর উন্নয়নে ১২১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৫%। অবশিষ্ট কাজ আগামী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সকল ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কি.মি. কর্পোটিং সড়ক, ২৬৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট সড়ক, ৩৫৬ কি.মি নর্দমা, ১০৪ কি.মি ফুটপাত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কার্পেটিং রাস্তা ৯৯কি.মি., কার্পেটিং রাস্তা পূনঃ নির্মান ১০৭ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা প্রশস্তকরণ ৪৫ কি.মি, নতুন সিমেন্ট কনক্রিট ১৮৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট পূন:নির্মাণ ৮০ কি.মি এবং প্রাইমারী ড্রেন ৪.৫ কি.মি. সেকেন্ডারী ড্রেন ৬০ কি.মি. টারসিয়ারী ড্রেন ২৯২ কি.মি. নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গণশোচাগার নির্মাণ, ফুটওভার ব্রীজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৪টি ওয়ার্ড কার্যালয়-কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৬নং ওয়ার্ড কার্যালয় কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। মিঞাপাড়া পাবলিক লাইব্রেরী ও ধর্ম্মসভার অবশিষ্ট কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৬ লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ৪.১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে থাকবে ২মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুইপাশে ১০.৫ মিটারের সড়ক থাকবে। সড়কের উভয়পাশে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশের ৩ মিটার ফুটপাত ও ড্রেন। সড়কটির সৌন্দর্য্য বর্ধণে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। সড়কটির কাজ শেষ হলে এটি হবে বিশ্ব মানের একটি সড়ক।

৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। ৩.৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ৮০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। উভয়পাশে ২২ ফুট করে ৪৪ ফুট রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের্^ ৬ ফুট করে মোট ১২ ফুট ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার ৪ ফুটের ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে।

চলছে ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়কের নির্মাণ। ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কটি প্রশস্ত হবে ৮০ ফুট। ফোরলেনের সড়ক ছাড়াও দুই লেনের অযান্ত্রিক যানবাহন লেন, সড়ক বিভাজক ও দুইপাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। সড়কগুলোর আইল্যান্ডে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে। সড়কটি নির্মাণে অত্র এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

প্রকল্পের আওতায় ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বুধপাড়া রেলক্রসিং এ অবশিষ্ট দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৫%।

রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৯টি জলাশয়ের মধ্যে ০৮টি জলাশয়ে মাটি খনন ও সাইট ফিলিং কাজ এগিয়ে চলেছে। নগরীর গোলজারবাগ ঢালান পশ্চিমপ্রান্ত, লক্ষ্মীপুর বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সম্মুখের পুকুর, লক্ষèীপুর নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালের সম্মুখে, সপুরা গোরস্থান-১ পুকুর, দড়িখরবোনা গোরস্থান, পবা নতুনপাড়া ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্বপাশের্^, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন পুকুর, ২৩নং ওয়ার্ডের কালীপুকুর উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঈদগাহ, গোরস্থান, শশ্মানঘাট উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৪৪টি গোরস্থান, ঈদগাহ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৭টি টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৩.৮২ কোটি টাকা। নগরীর ২ ও ১৬নং ওয়ার্ডে ৬টি গোরস্থান ৫, ১১, ১৩, ১৪, ১৫নং ওয়ার্ডের ৬টি গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৭নং ওয়ার্ডের ১২টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ২৩,৫, ১৬নং ওয়ার্ডের মোট ৮টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাজশাহী কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মাটি ভরাট, বিভিন্ন গোরস্থানে ১৫টি জানাজা সেড ও ২৮টি ওযুখানা নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের বড় রাস্তাগুলো মার্চ-২০২৩ শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

০৮। হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়েছে। ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ধর্মযাজক হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভক্ত আসেকান ও মুসল্লিগণের নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনা নির্বিঘ্নে পালনের সুবিধার্থে দরগাহ শরীফের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মসজিদ ও মাজার কমপ্লেক্স নির্মাণে স্থাপত্য নক্সা ও প্রকৌশল নক্সা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগ, ৪ তলা মাজার কমপ্লেক্স-এর প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৪ তলা মিনারসহ মসজিদ নির্মাণ, মাজার নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রবেশ গেইট নির্মাণ ও ল্যান্ড স্কেপিং করা হবে। ইতোমধ্যে এটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্প:
০৯। শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প :
৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদে রাজশাহী এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে। দেশের মানুষ আমাদের গৌরব জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে। বর্তমান সমাধিসৌধের ভূমি অপ্রতুল হওয়ায় প্রকল্পের আওতায় ১.২৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে আধুনিক স্থাপত্য নক্সা অনুসরণে সৌধ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায়। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২২-ডিসেম্বর ২০২৩।

১০। রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প:
১২০৯ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে নগরীর ২২টি জলাশয়সমূহকে সম্ভাব্য ভরাট রোধকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়নের একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণসহ জলাশয়সমূহ খনন, চারিদিকে ওয়াকওয়ে, ল্যান্ডস্কেপিং সৌন্দর্য্যবর্ধক বেঞ্চ, পাড় সংরক্ষণ, ছাউনি ও লাইটিং কাজ করে বিনোদন পার্ক হিসাবে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় জলাশয়সমূহে সারা বছর পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায়। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২২- জুন ২০২৫।

রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন প্রকল্প:
১৪৬৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ‘রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অত্র প্রকল্পের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে এর প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
বর্তমান ল্যান্ডফিল্ড প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০৩.০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয়, আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ, ওয়েষ্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ফিক্যাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং রিসাইকেল প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ প্রকল্পের ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় সিটি হাট হতে দোয়ারী ব্রীজ এলাকায় প্রস্তাবিত ল্যান্ডফিল্ড-এ বর্জ্য অপসারণে প্রায় ৫.৫০ কি:মি: ৪ লেন সড়ক নির্মাণ কাজ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার নিমিত্তে আধুনিক ইনসিনারেশন প্ল্যান্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্র্ভূক্ত করা হয়েছে। উল্লেখিত ৩টি প্রস্তাবিত প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের আমার জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

অন্যান্য উন্নয়ন ও জনকল্যানমুখী কার্যক্রম
রাজশাহীতে সিআরপি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ:
পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির আদলে রাজশাহীতে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটির নাম হবে সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার। এখানে প্রতি বছর ৫ হাজার মানুষ স্ট্রোকের চিকিৎসা ও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা পাবেন। এছাড়া স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
এ লক্ষ্যে কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় আমার পারিবারিক ১৫ বিঘা জমি সিআরপিকে প্রদান করা হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এর সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। ৩১ মে সিআরপি কর্মকর্তাদের নিকট দানকৃত ১৫ বিঘা জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে।

পরিবেশ উন্নয়ন কার্যক্রম:
পরিবেশ উন্নয়নে খ্যাতি অর্জন করেছে রাজশাহী। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর, দৃষ্টিনন্দন, সবুজ, উন্নত ও বাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব শহর পেয়েছে মহানগরবাসী। পরিবেশ উন্নয়নে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যকর, সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগরী দেশের অন্যান্য শহরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক, সড়ক দ্বীপে এবং ফুটপাতে লাগানো হয়েছে সৌন্দর্য্যবর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সবুজ হয়েছে প্রায় ৩০ কি.মি. রাস্তার সড়ক বিভাজন ও চত্বর। মহানগরীর বারো রাস্তা মোড়, মোল্লাপাড়া গোল চত্বর, রাজিব চত্বর, ভদ্রা মোড়, তালাইমারি মোড় ও রানীবাজার ঢোপকল চত্বরসহ বিভিন্ন মোড় ও চত্বর পরিকল্পিতভাবে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। রাজশাহী নগরীর বাহারি ফুলের আকর্ষণীয় রঙে পথচারিদের দৃষ্টি কাড়ছে। নগরীর সবুজ রূপ ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ কর্মীরা।
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় রাসিক সবুজায়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০২১-২২ মৌসুমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ৪২,৪০০টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে, সড়ক বিভাজকে ও ফুটপাতে। প্রায় ৩ লক্ষাধিক হেজ জাতীয় গাছ রাস্তার আইল্যান্ড ও শহরের ফাঁকা জায়গায় লাগানো হয়েছে। এছাড়া ২০২১-২২ শীত মৌসুমে প্রায় ১,৬৪,৮০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন মৌসুমী ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ডে ও চত্বরে। রাজশাহী মহানগরীর প্রায় ১৮০০টি গাছে নামফলক লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ফলকে গাছের বাংলা ও ইংরেজি নামের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নাম এবং গাছগুলো কোন গোত্রের তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরবাসী, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা গাছের পরিচিতি এবং গাছসমূহের উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার্থে নগরীর সকল পুকুর সংরক্ষণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাসিক। ইতিমধ্যে দুইটি পুকুর (পারিজাত লেক ও সপুরা মঠপুকুর) সংরক্ষণ করে বিনোদন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নির্দিষ্ট আরও ২২টি পুকুর ঘিরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। শুধু সংরক্ষণই নয় এসব পুকুরের পাড় বাঁধানো, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে সেগুলোকে বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০১২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো পরিবেশ পদক লাভ করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। ২০০৯ সালেও বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করে রাসিক। এছাড়া পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে রাজশাহী অর্জন করেছে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অফ দ্যা ইয়ার-২০২০’ সম্মাননা। চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা ১০ম বর্ষে পদার্পণে ১ম বারের মত এ পদক প্রদান করা হয় বিশ্বের সবচাইতে নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে রাজশাহীকে। বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণসহ বহুমুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকারণ ধূলিকণা কমাতে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৫ জুন বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ২য় বারের মত পরিবেশ পদক ২০২২ প্রদান করেন।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
একটি পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তোলার জন্য প্রথম মেয়াদের সময় ১ জুলাই ২০০৯ সালে রাত্রীকালীন বর্জ্য আবর্জনা অপসারন কার্যক্রম চালু করেছিলাম। ২য় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মহানগরবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে। পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়তে ইতোমধ্যেই ইমামগণ, শিক্ষকবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, চেম্বার অব কর্মাস, বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক মালিকসহ মহানগরীর বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি দপ্তর ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্বুদ্ধকরণ ব্যানার প্রদান করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জনসচেতনার লক্ষ্যে পত্রিকা, ক্যাবল লাইনে বিজ্ঞাপন, মসজিদে প্রাক খুতবা, মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি মহানগরবাসী এবং আপনাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ মহানগরীকে আরো পরিচ্ছন্ন রাখতে সক্ষম হবো।
নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সকল ক্লিনিকের আউট হাউজ মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশসম্মত ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। সে মোতাবেক প্ল্যান্টের ভৌত অবকাঠামো ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কর্মচারীরা মেডিকেল ও ক্লিনিক থেকে কার্ভাড ভ্যান দ্বারা বর্জ্য সংগ্রহ করে প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে সেখানে পরিশোধন ও অপসারণ করছে।
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মহানগরীতে ১০টি আধুনিক সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের কাজ অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিহ্রাসের জন্য গামবুট, হান্ডগ্লোভস, নোজমাক্স, রেইনকোর্ট ইত্যাদি প্রদান করা হয়েছে। সেইসাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দেয়া হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে পরিচ্ছন্ন গ্রাম,পরিচ্ছন্ন শহর কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহানগরীর অন্তর্গত দক্ষিণ হতে উত্তরমুখী কালভার্ট ও ড্রেনসমূহের কাঁদামাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে কালভার্ট ও ড্রেনের পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নগরীর জলাবদ্ধতা ও মশার বংশ বিস্তার হ্রাস পেয়েছে। ফগার মেশিনে কীটনাশক স্প্রে ও লার্ভিসাইড ব্যবহারের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে আছে।

শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান:
আপনারা ইতোমধ্যে অবগত আছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। এরমধ্যে বিসিক কর্তৃক বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পটি রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কেচুয়াতৈল এলাকায় ৫০ একর জায়গায় ১৭২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে। রাজশাহীতে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৪ জুলাই প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করা হয়। বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পের শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে সর্বশেষ ৭জুন বিসিক চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিসিক শিল্পনগরী-২ তে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হবে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপকে রাজশাহীতে বিনিয়োগে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক পুরোপুরি চালু হলে সেখানে ১৪ হাজারের অধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ও বিকেএসপি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রকল্পের পাশর্^বর্তী এলাকাসমূহে নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে শহর আরো বিকশিত ও কর্মমুখর হবে। ইতোমধ্যে নগরীতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন:
মহানগরীর আলোকায়ন ব্যবস্থা আরো আধুনিকায়ন, রাতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে মহানগরীর ১৫টি চত্বরে ১৬টি আধুনিক মানের সুুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইটের পোল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।
তালাইমারি থেকে আলুপট্টি পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার সড়কের আইল্যান্ডে বসানো হয় ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। এছাড়া সড়ক সংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে ১৮০টি আধুনিক সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের পোল। প্রতিটি পোলে রয়েছে ৫টি অত্যাধুনিক লাইট। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে ও নিভবে। সড়কটি আলোকায়নে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

বিলসিমলা রেল ক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪.২ কিলোমিটার সড়ক দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে। সড়কটিতে ১৭৪টি খুঁটির প্রতিটিতে দুইটি করে মোট ৩৪৮টি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

বিমান চত্বর হতে বিহাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়কটিও দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতিতে আলোকিত করা হয়েছে। সড়কটিতে ২৮৫টি ডেকোরেটিভ পোলে বসানো হয়েছে ৫৩০টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্ব।এতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ও নিভে।

এছাড়া উপশহর মোড় থেকে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে রানীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে মোট ৯৬টি ডেকোরেটিভ পোলে ৯৬টি দৃষ্টিনন্দন এলইডি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি বড়কুঠি হতে পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট পর্যন্ত পদ্মাপাড়ের ওয়াকওয়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। আগামীতে নির্মিত ও প্রশস্তকৃত সড়কও আলোকায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম :
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহণ করে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে মহানগরবাসীর হাত ধৌতকরণ, মহানগরীর বাইরে থেকে আসা লোকজন এবং বিভিন্ন এলাকার করোনা সাসপেক্টেড কেসসমূহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকাকরণ, স্যাম্পল কালেকশন, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বার্তাসহ লিফলেট বিতরণ এবং বিভিন্ন ট্রেনিং পরিচালনা করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ করোনাকালীন এ দূর্যোগের সময়ে ছুটিবিহীন নিরলসভাবে ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল সেলরুমে দায়িত্বপালন, মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিয়ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যাবতীয় কার্যক্রমের রিপোর্ট প্রদান ও হোম কোয়ারেন্টাইন এর তথ্য প্রদান, করোনা টেস্টের রিপোর্ট সংগ্রহসহ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। মহানগরীর ১২টি স্থানে প্রতিদিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া রামেক হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় দ্বিতীয় আরবান প্রাইমারী হেলথ্ কেয়ার প্রকল্পের ১২টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথা মহানগরবাসীর সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২টি পার্টনারশীপ এলাকা পিএ-রাজ-১ (ড্যাম) এর মাধ্যমে ৬টি নগর স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও একটি নগর মাতৃসদন কেন্দ্র এবং রাজ-পিএ-২ (নারী মৈত্রী) এর মাধ্যমে ৫টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও একটি নগর মাতৃসদন কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ডেঙ্গু, ঝড়, বন্যাসহ যে কোন দূর্যোগ বা মহামারী মোকাবেলায় বা জাতীয় প্রয়োজনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ মহানগরবাসীর সেবা প্রদানে সদা প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, ১৮৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীস্থ বড়বনগ্রাম, বাজে সিলিন্দা ও বাড়ইপাড়া মৌজায় ৬৮ একর জায়গার উপর রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। একই সাথে ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। ১০টি অনুষদের অধীনে ৬৮টি বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

স্বাস্থ্য ও সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ শাখা/প্রাথমিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম :
ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার কর্মসূচির আওতায় ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে নবজাতকের ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। সফল ফাইলেরিয়াসিস কার্যক্রমের পর ২০১১ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিভাবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ফাইলেরিয়াসিস মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বহুকাজে অনেকবার প্রথম হয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সুনামের সাথে সাথে পুরস্কারও অর্জন করেছে। জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সারা বাংলাদেশের মডেল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। জড়ঁঃরহব ঊচও (ঊীঢ়ধহফবফ চৎড়মৎধসসব ড়হ ওসসঁহরুধঃরড়হ) কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পর পর ১০ বার ১ম স্থান অধিকার করেছে।
স্যানিটারী ও পরিবার পরিকল্পনা শাখা : স্বাস্থ্য বিভাগের অধিন স্যানিটারী ও পরিবার পরিকল্পনা শাখা প্রিমিসেস লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ প্রদানসহ সিটি কর্পোরেশনের আয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মহানগরীর দুষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখা : স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলে থাকে। অর্থ্যাৎ শিশু জন্মের পর শিশুর নাম সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন এবং যে কোন বয়সের যে কারো মৃত্যুর পর তার মৃত্যু নিবন্ধনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান। এভাবেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
কসাইখানা শাখা : স্বাস্থ্য বিভাগের কসাইখানা শাখার মাধ্যমে পশু জবেহ ও মাংসমান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১ অনুযায়ী জনস্বার্থে মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মাংসমান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং পশু জবেহ ফি’র মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। মাংসমান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে কয়েকটি ছোট আকারে কসাইখানা/জবেহখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারে কসাইখানা নির্মাণ সম্পন্ন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও আরো ৩টি স্থানে যথা-১ লক্ষীপুর বাজার, ২ শালবাগান বাজার ও ৩ কোর্ট বাজারে ছোট আকারে কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে খরাবংঃড়পশ উধরৎু উবাবষড়ঢ়হৎহঃ চৎড়লবপঃ (খউউচ) এর মাধ্যমে তালাইমারী, কাজলা এলাকায় প্রায় এক একর জায়গার উপর একটি আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কসাইখানাসমূহ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মাংসমান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান অনেকাংশেই সম্ভব হবে এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রাও অনেক কমে আসবে।
সিটি হাসপাতাল : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত রাণীনগরস্থ সিটি হাসপাতালটি শিগগিরই চালু করে নগরবাসীকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।

ডিজিটাল কার্যক্রম:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ২০০৯ সালের ২৪ জুন বৎধলংযধযর.মড়া.নফ ওয়েব সাইট চালু হয়ে পরবর্তীতে বৎধলংযধযর.ঢ়ড়ৎঃধষ.মড়া.নফ. এর মাধ্যমে নগরবাসীর সহজে তথ্য প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের পুরো কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকসেবা অনলাইনে প্রদানের জন্য ’স্মার্ট রাজশাহী’ (যঃঃঢ়ং://ংসধৎঃৎধলংযধযর.মড়া.নফ) ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়েছে। স্মার্ট রাজশাহী ওয়েব ও অ্যাপসের নিবন্ধন করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৪টি সেবা এখন থেকে অনলাইনে পাওয়া যাবে।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ই-ফাইলিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যা সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি। স্মার্ট অটো রিক্সা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, নগর ভবনে ডিজিটাল হাজিরার ভিত্তিতে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের হাজিরা মনিটরিং এবং বেতন বিল প্রস্তুতকরণ, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের ডিজিটাইজেশন, হিসাব বিভাগ, ট্রেড লাইসেন্স এবং হোল্ডিং ট্যাক্স সংগ্রহ অটোমেশন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কম্পিউটার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, নগর ভবনে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন, ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ করণ, ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম, দাপ্তরিক কার্যক্রমে ই-নথির ব্যবহার, সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা মনিটরিং সিস্টেম ও কল সেন্টার স্থাপন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রোগ্রামের আওতায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সেবামূলক ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে। নগর ভবনে একই স্থান থেকে দ্রুততম সময়ে নাগরিকদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। টেন্ডার, হোল্ডিং ট্যাক্স, লাইসেন্সসহ সকল তথ্য সেবা অনলাইনে গ্রহণ ও প্রেরণ কার্যক্রম রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সম্পাদন করছে।

আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপন
রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী এ মহানগীর উন্নয়ন ও বিকাশের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এ নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা তথা নদী সচল রাখার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র একান্ত ইচ্ছায় পদ্মা নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছিল। পুনরায় ড্রেজিং কার্যক্রম চালুর জোর চেষ্টা চলছে। ২০১৯ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদী ড্রেজিং, শহর রক্ষা বাঁধ সম্প্রসারণ ও খাল পুনঃখনন বিষয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে ডিও প্রদান করা হয়। ড্রেজিং পরবতী ভারতের মুর্শিবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ^রদী পর্যন্ত নৌরুট চালু করা সম্ভব হলে ভারতের সাথে আমদানি রপ্তানির নতুন করিডোর হবে পদ্মা নদী। এখানে আন্তর্জাতিক নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা হলে নৌপথে বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত হতে মালামাল অনেক কম খরচে পরিবহন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও মালামালগুলি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলাতেও অনেক কম খরচে পৌছানো যাবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং বেকার সমস্যারও সমাধান হবে।

যানজট কমাতে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ:
রাজশাহী মহানগরীর যানজট নিরসনে ব্যাটারি অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী সকাল ও বিকেল দুই শিফটে মেরুন ও পিত্তি রঙে চিহ্নিত করে পৃথক সময় নির্ধারণ করে অটোরিকশা চলাচল করছে। ১০ হাজার অটোরিকশা এবং ৫ হাজার চার্জার রিকশার বেশি নিবন্ধন যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। রিক্সা ও অটোরিক্সা চালকদের নির্ধারিত পোশাক চালু করা হয়েছে, এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একমুখী যান চলাচল ও পথচারী সড়ক চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট শাখার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ফান্ড হতে গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৩১৭টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণে ৫ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা, ব্যবসা ও পুষ্টি সহায়তা বাবদ মোট ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ৩৮৮৪টি। প্রান্তিক পর্যায়ে নাগরিক সুবিধা প্রদানে ৫৬০১ মিটার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। ৫১টি টিউবয়েল ও ২২টি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৩ হাজার ১ শত টাকা। উপকারভোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৮০০টি পরিবার।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কমিউনিটি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ফান্ড হতে ৯০টি পরিবারকে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ঋণ সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ১৩ হাজার ৬ শত ৮৪ মিটার ড্রেন এবং টয়লেট ও টিউবয়েল ১০৮টি। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা। উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা হবে ১৪ হাজার। সি.ডি.সি সদস্যদের সঞ্চয় ঋণ বিতরণ ধরা হয়েছে ৮ কোটি। এতে ১৭ শত পরিবার সুবিধা পাবে।

পিপিপির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ:
সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, মহানগরীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর আওতায় অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে উদ্যোগী সংস্থার অর্থায়নে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সোনাদিঘী ১৬ তলা ‘সিটি সেন্টার’ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। আটতলা ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’ অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে ও আটতলা ‘দারুচিনি প্লাজা’ নির্মাণ কাজ চলছে। মুড়িপট্টিতে ১০তলা বৈশাখী মার্কেটের অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। ৫তলা বিলসিমলা সুপার মার্কেটের অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। রেশমপল্লী মার্কেটের কাজ সম্পন্ন শেষে দোকান বরাদ্দ করা হয়েছে। বিগত সময়ে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করায় বর্তমানে উহার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

বিরতিহীন ট্রেন চালু:
রাজশাহী মহানগরবাসী দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন ট্রেন চালু। এটি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিশ্রুতি। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতীহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। যাত্রা শুরু করে বহুল কাঙ্খিত বিরতিহীন ট্রেন।

রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ:
আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত সিঙ্গেল ব্রডগেজ রেললাইনটি ডাবল লাইনে উন্নীত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১১ জুলাই মাননীয় রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজনকে ডিও লেটার প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

আপনারা অবগত আছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হতে রাজশাহী হয়ে ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিশেষ পার্শ্বেল ট্রেন ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হয়েছে। এই বিশেষ ট্রেনে আম ছাড়াও লিচু, মৌসুমি ফল, ডিমসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যও কম খরচে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বছরব্যাপী পরিবহনে যদি বিশেষ কার্গো ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়, তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ:
রাজশাহীতে বিশ্বমানের পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১১ জুলাই ঢাকায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সচিব মোঃ মহিবুল হকের সাথে বৈঠকে করা হয়। পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও বিমানবন্দরে নতুন দ্বিতল টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে উন্নীত করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ে ডিও লেটার করা হয়। এরপরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে উক্ত মন্ত্রণালয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও নবরুপায়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান টার্মিনাল ভবন নবরুপায়ন, সম্প্রসারণ ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রবর্তন করা হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন:
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আপনারা জানেন, রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ১৮৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া আমি আবারো রাজশাহীবাসী তথা সমগ্র উত্তরাঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের মধ্যে ১ম পুর্নাঙ্গ পরিকল্পিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহীস্থ বড়বনগ্রাম, বাজে সিলিন্দা ও বাড়ইপাড়া মৌজায় ৬৮ একর জায়গার উপর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষানগরী রাজশাহী আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পূর্বের ন্যায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।

এছাড়া নতুন দুইটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ নতুন ভবন নির্মাণে সহযোগিতা প্রদান করে রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গনে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।
বিশেষায়িত স্কুল এন্ড কলেজের শাখা রাজশাহীতে খোলার উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি ১৭নং ওয়ার্ডের বড়বনগ্রাম কুচপাড়ায় হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। চলতি বছরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ক্রীড়া ও সংস্কৃতি:
সুস্থ্য-সবল, মেধাবী ও মাদকমুক্ত জাতি গঠনে পড়াশোনার পাশপাশি খেলাধূলার বিকল্প নেই। তাইতো ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম মেয়াদে কাউন্সিলর গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টসহ মহানগরজুড়ে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন করা হয়। ০৩ জুন হতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পৃষ্টপোষকতায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ২য় আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরআগে বঙ্গবন্ধু স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বঙ্গবন্ধু কাপ বক্সিং প্রতিযোগিতার আয়োজন সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। আগামীতে পর্যায়ক্রমে কাউন্সিলর গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, স্কুল ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বয়স ভিত্তিক ফুটবল ও ক্রিকেট স্কুল টুর্নামেন্ট, মেয়র কাপ টেবিল টেনিস, মুষ্টিযুদ্ধ, স্কুল পর্যায়ে বালক বালিকা এ্যাথলেটিস, মেয়র কাপ কাবাডি, মেয়র ভলিবল, হ্যান্ডবল, হকি (পুরুষ-মহিলা), মেয়র কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট, আন্ত:সিটি কর্পোরেশন মেয়র গোল্ড কাপ ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ক্রীড়ার উন্নয়নে সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে উৎসবমুখর পরিবেশে গত ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ভারত-বাংলাদেশ ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, রাজশাহী-২০২২’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিলনমেলায় দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বক্তিবর্গ অংশ নিয়েছিলেন।
মুজিববর্ষ যথাযথভাবে উদযাপন, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক আয়োজন, চিত্রাঙ্কন ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধণা প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ক্রীড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বালক (অনু-১৭) ২০১৯ ইং রাসিক থানা পর্যায়ে আয়োজন করে। এবং রাসিক বালক ফুটবল দল (অনূর্ধ্ব-১৭) অংশগ্রহণ করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তী সময় বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে, অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। পূণরায় ২০২১ইং সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট বালক (অনু-১৭) থানা পর্যায়ে আয়োজন করে এবং অংশগ্রহণ করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দল বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়।
সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালক (অনূর্ধ্ব-১৭) ২০২২ ইং সালে আগামী রাসিক থানা পর্যায়ে আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং রাসিক বালক ফুটবল দল (অনু-১৭) ২০২২ ইং অংশগ্রহণ করবে।ইতোপূর্বে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ২০১৯ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালক(অনু-১৭) ও বালিকা(অনূর্ধ্ব-১৭) উভয় গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে।

বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা:
দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত বিকেএসপি। নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীতে না হয়ে অন্য জায়গায় হতে যাচ্ছিল। আনন্দের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করে আমরা সেটা রাজশাহী আনতে পেরেছি। ইতোমধ্যে বিকেএসপির জন্য পবা উপজেলার খিরসন মৌজার অভয়ের মোড় এলাকায় প্রায় ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হবে।

বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়ন:
শহীদ এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগরীর একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী “নভোথিয়েটার” নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চিড়িয়াখানার অফিসের সামনের পুকুর সংস্কার ও কাদামাটি উত্তোলনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রদর্শণীর জন্য রঙ্গিন মাছ ছাড়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার ২য় তলা ও ৩য় তলায় গেষ্ট হাউজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

রাজশাহীর প্রধানতম পর্যটন এলাকা পদ্মাপাড়। বিনোদনের অন্যতম এ এলাকাটি আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে পদ্মাপাড়কে ঘিরে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ মখদুম (রহ.) মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়েছে নান্দনিক গ্রাফিতি। পাদ্মপাড়ের লালনশাহ পার্কের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। বিনোদনপ্রেমীর আকর্ষণ করতে পদ্মাপাড়ে ২টি বিচ বাইক ও ১০টি বিচ চেয়ার চালু করা হয়েছে।

শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ:
রাজশাহী মহানগরীর ১৯নং ওয়ার্ড ছোটবনগ্রামে নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। শিশু পার্কটির উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। শেখ রাসেল শিশুপার্কে থাকবে উন্নতমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আধুনিক প্রবেশ গেট, ওয়াটার বডি, দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, মুক্তমঞ্চ, সবুজায়ন, কৃত্রিম টিলা, শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড, চলাচলের জন্য রাস্তা, পাবলিক টয়লেট সহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। শেখ রাসেল শিশুপার্কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

নতুন কবরস্থান ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উত্তরপূর্ব কোণে বৃহত্তর ১৯নং ওয়ার্ডবাসীর এবং ২৬নং ওয়ার্ডের চন্দ্রিমা আবাসিক, মহানন্দা আবাসিক, পদ্মা আবাসিক এলাকার ও ১৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিণপূর্ব এলাকাসহ মুশরইল এলাকার জনসাধারণের দাফনের জন্য পারিবারিক কবরস্থান ছাড়া কোন কবরস্থান না থাকায় অনেক দূর পথ অতিক্রম করে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এতে জনসাধারণের বিশেষ অসুবিধা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন লাশ দাফনে খুবই দূর্ভোগে পড়তে হয়। এমতাবস্থায় জনস্বার্থে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ণে জমি অধিগ্রহণ করে কবরস্থান ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ঈদগাহ মাঠটি খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

প্রস্তাবিত রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম:
নির্মণাধীন অ্যানেক্স ভবনের একটি ফ্লোরে প্রস্তাবিত রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম স্থাপনের জন্য গত একাদশ সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। জনবল ছাড়া মিউজিয়ামটি প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ঊনচল্লিশ হাজার ৬ শত টাকা মাত্র।

রাজশাহী সিটি লাইব্রেরি স্থাপন:
জায়গার অভাবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের রাজশাহী সিটি লাইব্রেরি দৃশ্যমানে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। অ্যানেক্স ভবনের কাজ শেষ হলেই আমরা বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। পৃথক অথবা রাজশাহী সিটি মিউজিয়ামের অংশ হিসেবেই রাজশাহী সিটি লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হতে পারে। এ লাইব্রেরিতে সংগৃহীত হবে রাজশাহী সম্পর্কিত সকল ধরনের গ্রন্থ এবং অন্যান্য বই ও ডকুমেন্ট।

রাজশাহী সিটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়:
রাজশাহী মহানগরীর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২০টি ওয়ার্ডে রাজশাহী সিটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু রেখেছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে এ বিদ্যালয়ের ২০টি কেন্দ্রের শিশু বিকাশ ও প্রাক প্রাথমিক উভয় শ্রেণিতে সর্বমোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০৯ জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরূপ এ সব ছাত্র-ছাত্রীর প্রত্যেককে ১টি হুডি সুয়েটার, তাদের প্রত্যেক অভিভাবক ও প্রত্যেক শিক্ষিকাকে ১টি করে কার্ডিগান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নের বাস্তবধর্মী পদক্ষেপস্বরূপ প্রতিটি কেন্দ্রে ১১ প্রকারের রেজিস্টার, ভর্তি ফরম, পরীক্ষার ফলাফল সনদ, একাডেমিক সিলেবাস ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নিয়মে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে ‘রাজশাহী সিটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক ও নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রকাশনা:
২০২০ সালের ৩১ আগস্ট ‘উত্তরবঙ্গে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থ প্রকাশের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ব্যতিক্রম উদ্যোগ ছিল ‘প্রামাণ্য তথ্যে জাতীয় নেতা এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান (হেনা)’ শিরোনামে গ্রন্থ প্রণয়ন। ইতোমধ্যে গ্রন্থটি প্রণীত হয়েছে এবং নিকট ভবিষ্যতে এর মোড়ক উন্মোচন হবে। আশা করছি এ গ্রন্থটিও গবেষণা ও ঐতিহাসিক তথ্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের কাজে লাগবে। বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, রাজশাহী-২০২২ উপলক্ষে ‘গঙ্গাপদ্মা’ নামে সুভ্যেনির প্রকাশ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার:
মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এটি উচ্চতা হবে ৬০ ফুট। ম্যুরালের মূল অংশে বঙ্গবন্ধুর ছবিটি ৫৫´৪০ ফিট। এটির ফাউন্ডেশনে ২২টি পাইলিং করা হচ্ছে। বাউন্ডারী ওয়ালের দুই ধারে ৭০০ বর্গফুট টেরাকাটায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের লোকজ সাংস্কৃতির নানা চিত্র ফুঁটিয়ে তোলা হবে। গ্যালারি, ল্যান্ডস্কেপিং, সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাল্ব দ্বারা নাইটভিশন করা হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন আলেখ্য প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের উদ্দেশে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে নগর ভবনের দ্বিতীয় তলার উন্মুক্ত স্পেসের পাশে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনই সর্ব প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের মাধ্যমে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কর্ণারটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। এই কর্ণার থেকে মানুষ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এতে তারা দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হবেন।

ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্তকরণের উদ্যোগ:
রাজশাহী মহানগরীতে সড়ক ও ফুটপাতের অবৈধ দখল মুক্ত করতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিয়মিত ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হয়। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ ও অন্যান্য আইনে মোট ২৯৪টি মামলা দায়ের করে মোট ৮ লাখ পঞ্চান্ন হাজার পাঁচশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তন্মন্ধে ৮০ হাজার ৫শত টাকা কর্পোরেশন তহবিলে এবং অবশিষ্ট টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন:
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শাখা খোলা হয়েছে। এই শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে ঔওঈঅ, কঙওঈঅ, অউই সহ কয়েকটি বিদেশী দাতা সংস্থার সাথে যোগযোগ চলমান রয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যপ্তি ঘটানোর জন্য সামনে আরো কাজ করা হবে। ঈরঃু ঘবঃ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিটি প্লাটফর্ম গুলোতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কর্মতৎপরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রাজশাহীতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী করা হচ্ছে। আপনারা অবগত আছেন, করোনা মহামারির পূর্বে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, ইন্দোনেশিয়া, কানাডার রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ রাজশাহী সফর করেছেন। আগামীতেও বিভিন্ন দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজশাহীর উন্নয়ন কাজকে এগিয়ে নেওয়া হবে।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি :
রাজস্ব বিভাগের অধীনে সকল সেবাসমূহ জনগণ যাতে যে কোন জায়গা হতে সহজে পেতে পারে সেই লক্ষে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অটোমেশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে যার মাধ্যমে জনগণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজস্ব বিভাগের সকল সেবা যথা- হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নতুন হোল্ডিং ও দোকান ভাড়া ইত্যাদি সেবা সহজে গ্রহণ করতে পারবেন। আশা করা যায় যে, আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ১লা জুলাই হতে এই কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পিপিপির মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নব নির্মিত আধুনিক মার্কেটসমূহের কার্যক্রম আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছর হতে পুরোপুরি চালু হবে বলে আশা করা যায়। সেই লক্ষ্যে ইতেমধ্যে স্বপ্নচুড়া, বৈশাখী, সিমলা সুপার ও সিটি সেন্টার মার্কেটের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ইমারত নির্মাণ কর এর প্রস্তাবনা অচিরেই গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে যা পরিকল্পিত নগরী নির্মাণসহ রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে রাসিকের রাজস্ব আয় অনেকাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসের ১ম তারিখে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও ৭ তারিখের মধ্যে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভবপর হচ্ছে। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পর্যায়ক্রমে পরিশোধের কার্যক্রম চালু আছে এবং আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সকল দেনা-পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীতে নতুন নতুন বাড়ি এ্যাপার্টমেন্টসহ বহুবিধ স্থাপনা নির্মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে হোল্ডিং সংখ্যা বিগত ৫৭ হাজার ৯৫৯ হতে ৬৭ হাজার ৪৩২টিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট:
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৮০ কোটি ২২ লক্ষ ৮৯হাজার ৫৩৬ টাকা ১৭ পয়সা মাত্র। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৭৬৯ কোটি ০২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭৪৪ টাকা ৩৬ পয়সা মাত্র।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট:
আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকা ১০ পয়সা মাত্র।

►বাজেটের মূল বৈশিষ্টগুলো হচ্ছে:
(ক) প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ উন্নয়নমূখী। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রায় আটশত কোটি টাকা উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হবে।
(খ) এ বাজেটে নতুন কোন বর্ধিত কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার উপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, নতুন নতুন বাণিজ্যিক জোনে মার্কেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
(গ) শহরের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
(ঘ) শহরের সড়ক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উপর এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
(ঙ) এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
(চ) এ বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং আরসিসি’র বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
(ছ) এ বাজেটে ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
(জ) জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে যে ক্ষতি নিয়মিত হচ্ছে তা মোকাবেলা, তার অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ের তোলার দিক-নির্দেশনা এ বাজেটে আছে।
(ঝ) শিশুদের মনোবিকাশে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। যা শিগগিরই চালু হবে।
(ঞ) প্রস্তাবিত বাজেটে ইমারত/বহুতল ভবন নির্মাণ কর আরোপের মাধ্যমে মহানগরীতে ভবন নির্মাণের পূর্বে সিটি কর্পোরেশনের কাছে অনুমতি নেওয়ার বিধান কার্যকর করা হবে। ফলে একদিকে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় হবে, অন্যদিকে মহানগরীতে ইমারত/বহুতল ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা আসবে।

মেয়র রাজশাহীবাসীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন,
আপনারা লক্ষ্য করেছেন, রাজশাহীকে বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ওয়াদা পুরণে চার বছর কাজ করছি। যা আজ দৃশ্যমান হয়েছে। রাজশাহীর চেহারা প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন ও চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে রাজশাহী মহানগরীকে নতুনরূপে দেখতে পাওয়া যাবে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিনোদনের প্রসারসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজশাহী সিটি গুরুত্ব পাবে।

তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে নগরবাসীর সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে কর্পোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে
মহানগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে নিয়মিত কর পরিশোধসহ সকল কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আমার প্রিয় রাজশাহী মহানগরবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। মহানগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঘোষিত বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নে আমি আপনাদের দোয়া ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

মেয়র বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। রাজশাহীর উন্নয়ন-সম্ভাবনা, অর্জন ও ইতিবাচক কার্যক্রম আপনাদের স্ব স্ব স্বনামধন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তুলে ধরে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে আমাদের সকলের প্রাণের রাজশাহীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও সুনাম বৃদ্ধি করতে অবদান রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি। আজকের এই বাজেট সভায় উপস্থিত হয়ে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ সহকারে আমার বক্তব্য শোনার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনার ও আপনাদের পরিবারের এবং আমার প্রাণপ্রিয় রাজশাহী মহানগরবাসীর সকলের সুস্বাস্থ্য ও কল্যান কামনা করছি।

স/আর