রাসিকের অতিরিক্ত ভ্যাট ও হোল্ডিং ট্যাক্স আতঙ্কে কেটেছে ২০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি আতঙ্কে কেটেছে নগরবাসীর বিদায়ী ২০১৬ বছরটি। ব্যবসায়ী, দোকানদার, মেস, বাসা-বাড়ি ও ভাড়াটিয়া এমনকি প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ডকেও ধরা হয়েছে অতিরিক্ত ট্যাক্সের আওতায়। ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি এমনকি হরতালের মত আন্দোলনেরমুখেও রাসিক তার সিদ্ধান্তেই অটুটু ছিলো।

বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাতিল না করা হলে আগামী চার জানুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে-এমন ঘোষণা দেওয়া রয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এমনটি বলেন সিল্কসিটিনিউজকে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের প্রচার সম্পাদক ও নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পিয়ারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বছরের শুরুর দিকে রাসিকের ভ্যাট ও হোর্ল্ডি ট্যাক্স আগের বছরের মতই ছিলো। পরের দিকে বেপরোয়া হারে নির্ধারণ করা হয় ভ্যাট ও হোর্ল্ডি ট্যাক্স। এর ফলে নগরবাসী বিভিন্ন প্রতিবাদ কার্যক্রম পালন করতে শুরু করে। এর প্রতিবাদে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, র‌্যালি শেষ পর্যান্ত হরতালের মত কর্মসূচিও পালন করা হয়।

গত ৩ ডিসেম্বর রাসিকের বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলসহ চার দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নগরীতে আগামী ১১ ডিসেম্বর আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেছিলেন, নগরবাসীর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখেই সিটি কর্পোরেশন অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। কিন্তু রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নগরবাসীর এই দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফাভাবে বর্ধিত হোল্ডিং আদায়ে অনড় থাকায় আমরা আন্দোলন জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গত ১১ ডিসেম্বর রাসিকের বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সাইনবোর্ড ফি বাতিল এবং সহনীয় পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের দাবিতে নগরীতে স্বতঃস্ফূর্ত অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসুচি পালিত করে। হরতালের কারণে নগরীর সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের দাবি না মানা হলে আরো কঠোর আনন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।

এদিকে হরতাল সফল করতে সকালে মিছিল ও সামবেশ করেছে করে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ ও ব্যবসায়ীরা। পরে সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

তার আগে  গত ১৮ নভেম্বর একই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ। দুপুরে রাজশাহীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ দাবিতে আগামী ২৬ নভেম্বর বিকেলে রাজশাহীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেটের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এনামুল হক।

এদিকে, হাইকোর্ট এ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি বাতিলের পক্ষে গত ১ নভেম্বর দায়ের করা একটি রিট আবেদন গ্রহণ করেছেন এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে এ সিদ্ধান্ত কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে রুল জারি করেছেন। এটা আন্দোলনের শক্তি বাড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছিলেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা বদ্ধপরিকর। বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়াও অস্বাভাবিক হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ডের ওপর অযৌক্তিক ফি নির্ধারণের প্রতিবাদেও তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যবসায়ী, দোকানদার, মেস মালিক, বাসা-বাড়ি ও ভাড়াটিয়াসহ  মহানগরবাসীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অযৌক্তি সিদ্ধান্তে অনৈতিকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। একই দিনে তারা পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি প্রতিবাদ সভা থেকে অবিলম্বে হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবি জানানো হয়।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুল হক, সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, সহ-সভাপতি হারুন অর-রশিদ, কল্পনা রায়, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু প্রমুখ।

স/আ