‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে মামুনুলের বিচার করতে হবে’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

‘হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মামুনুল হক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অপরাধী। সেই অপরাধে তার বিচার করতে হবে।’

বলছিলেন লেখক, গবেষক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। ‘হেফাজতের শক্তি এবং রাষ্ট্রের অবস্থান’ শিরোনামে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

নারীঘটিত কারণে হেফাজত নেতাদের আটক করলে তা হবে, তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আটক করা। তারা সন্ত্রাস করেছে। তাণ্ডব চালাতে হুকুম দিয়েছে।

গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবস্থানকালে মামুনুল হককে ঘেরাও করা হয়। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন এক নারীও। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মামুনুল এক নারীসহ আটক হয়েছেন। যদিও ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক। ছড়ানো আরেকটি ভিডিওতে সেই নারী নিজেকে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলে পরিচয় দেন। অবশ্য খানিকবাদেই মামুনুলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান হেফাজত নেতাকর্মীরা।

পরে মামুনুলের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রীসহ একাধিক ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়। মামুনুলের দাবিকৃত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আর ঝর্ণার প্রথম সংসারের বড় ছেলেরও একটি ভিডিও ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে ঝর্ণার প্রথম সংসারে ফাটলের পেছনে মামুনুলকে অভিযুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে আলোচনা ওঠে সংসদেও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ওই নারী তার (মামুনুলের) স্ত্রী নন।’

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে মামুনুল বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি; সেজন্য নিজেই মর্মাহত।’

তবে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মামুনুল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

সাক্ষাৎকারে প্রসঙ্গটি এলে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মামুনুল হক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অপরাধী। সেই অপরাধে তার বিচার করতে হবে। তা না করে যদি নারীঘটিত কারণে মামুনুল হকের বিচার করা হয়, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। নারীঘটিত কারণে হেফাজত নেতাদের আটক করলে তা হবে, তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আটক করা। তারা সন্ত্রাস করেছে। তাণ্ডব চালাতে হুকুম দিয়েছে। সরকার যদি যথাযথ উপায়ে মামলা দায়ের করে, তাহলেই বোঝা যাবে হেফাজত ইস্যুতে সরকারের অবস্থান কী?’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘সারাবিশ্বেই ডানপন্থার জয়জয়কার এবং আওয়ামী লীগ মনে করে এই নীতি মেনে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে। আমি মনে করি, ইসলামপন্থীদের সঙ্গে চলা হবে আত্মঘাতী হওয়ার শামিল। আর এটি ১৯৭১ সালেই মীমাংসা হয়ে গেছে। ইতিহাসের চাকা কখনো উল্টে দেয়া যায় না। কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দেয়া যায় হয়তো। কিন্তু প্রগতির চাকা সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যায়। জোর করে আটকে দিলেই সব সময় থেমে থাকবে না।’

হেফাজতের উত্থান ঘটলে আওয়ামী লীগের সমস্ত অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হেফাজত নেতারা একাধিকবার বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাবেন। এ কারণে আমি বারবার বলছি, মৌলবাদের সঙ্গে আপোস করলেই সর্বনাশ।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনা করতে পারবেন না। এই দেশে ১৯৭১ সালে ইসলামের নামে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করার বৈধতা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এটি জানে। এমন অভিজ্ঞতা আর কারও নেই। মিশরে ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করা যত কঠিন, তার চেয়ে অনেক সহজ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করে তা প্রমাণ করেছেন।’

‘জামায়াতের অর্থনীতির পাইপলাইন কেটে দিতে পারলেই তাদের আর শক্তি থাকবে না। নিষিদ্ধ হলে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হতে পারে বড় জোর। কিন্তু তাতে শক্তি মিলবে না। জামায়াত থাকলে এখানে সুষ্ঠু কোনো সমাজ থাকবে না। এটি সরকার না বুঝলে হেফাজতের শক্তিও ঠেকানো যাবে না’—বলেন শাহরিয়ার কবির।

সূত্র : জাগো নিউজ