রাশিয়ার ব্যর্থতার স্বীকৃতি, না কৌশল বদলের ইঙ্গিত

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ‘প্রথম পর্যায়’ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। শুক্রবার এ ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, এবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশপন্থী অঞ্চলগুলোর ‘পরিপূর্ণ মুক্তি’ নিশ্চিত করার দিকে নজর দেওয়া হবে।

অভিযানের এক মাসের মাথায় রাশিয়ার এ ঘোষণায় প্রশ্ন উঠেছে, দেশটির সামরিক বাহিনীকে কি নিজেদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে? এমনকি ইউক্রেনে তারা যে লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল, সেটিতেও কি কাটছাঁট করতে হচ্ছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় আসলে এখনো আসেনি। এ জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

তবে রুশদের গুরুত্ব দেওয়ার জায়গাটি যে পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তা একদম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের একজন সের্গেই রুদস্কি শুক্রবার রাতে বলেন, তাঁদের বিশেষ সামরিক অভিযানের ‘প্রথম ধাপ’-এর বেশির ভাগ লক্ষ্যই অর্জিত হয়েছে। রাশিয়ার বাহিনী এখন সম্পূর্ণভাবে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাসের মুক্তির জন্য কাজ করবে।

এ বক্তব্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির সরকারের দখলে থাকা অঞ্চল এবং রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকার মধ্যে যে ‘অদৃশ্য সীমান্ত’ রয়েছে, তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আরো সমন্বিত চেষ্টা চালানো হবে।

বর্তমানে ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে আগের মতোই থমকে রয়েছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। রাজধানী কিয়েভে নিজেদের অবস্থান থেকেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে রাশিয়ার বাহিনীকে। শোনা যাচ্ছে, আরো ক্ষতি ঠেকাতে এবং সাময়িক বিরতি নিতে আক্রমণের বদলে সেখানে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নেওয়া শুরু করেছে রুশ সেনারা।

রাশিয়া কিয়েভ দখলের আশা ছেড়ে দিয়েছে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ বাহিনীকে একের পর এক বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁরা বলছেন, গত শুক্রবার আরো এক জেনারেলকে হারাতে হয়েছে রাশিয়ার। হিসাবে তিনি ইউক্রেনে প্রাণ হারানো সপ্তম রুশ জেনারেল। কিছু সেনা ইউনিটের মনোবল এখন তলানিতে।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, জেনারেল রুদস্কির এই ঘোষণার মানে হচ্ছে, মস্কো নিজেদের যুদ্ধপূর্ব কৌশলের ব্যর্থতার বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একাধিক স্থানে যে একই সময়ে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না, সেটাই স্বীকার করছে রাশিয়া। ’

সাম্প্রতিককালে ১০টির মতো নতুন রুশ কুশলী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সেগুলো এরই মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। গত মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই শঙ্কা ছিল, রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনের সেরা বাহিনীগুলোকে ঘেরাও করে তাদের ওপর আক্রমণ চালানোর সমন্বিত চেষ্টা চালাবে। ইউক্রেনের এই বাহিনীগুলো মিলেই গড়ে উঠেছে জয়েন্ট ফোর্সেস অপারেশন (জেএফও) এবং তারাই দনবাসের ‘অদৃশ্য সীমান্ত’ পাহারা দিচ্ছে।

রাশিয়ার নতুন চেষ্টায় দেখা যাচ্ছে, দোনেত্স্ক ও লুহানস্কের যে এলাকাগুলো এখন পর্যন্ত দখলের বাইরে রয়েছে, সেনারা সেদিকেই পা বাড়াচ্ছে। সম্ভবত তাদের পরিকল্পনা খারকিভের দক্ষিণ ও ইজিয়ুম থেকে ফিরতি সেনাদের সঙ্গে জোট বাঁধা।

রাশিয়া যদি সফলভাবে আজভ সাগর উপকূলের মারিওপোল বন্দর নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, তাহলে উত্তর থেকে আরো সেনা এনে সফলভাবে ইউক্রেনের জেএফওকে ঘিরে ফেলা যাবে।

তবে এই ধারণাগুলোর অনেকগুলোই বাস্তবতার নিরিখে এখনো নাগালের বাইরে রয়েছে। মারিওপোলে ইউক্রেনের বাহিনী দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ফলে রাশিয়া নিজেদের যুদ্ধপূর্ব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে দনবাস পর্যন্ত স্থল সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা এখনো সম্ভব হয়নি।

তবে মস্কো যদি একসঙ্গে মাত্র একটি দিকে (আপাতত) মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হবে গোলাবর্ষণ। বিশেষ করে যুদ্ধবিমান থেকে। সে ক্ষেত্রে ওই চাপ সামলাতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর নিজেদের শৃঙ্খলা ও মনোবলের পাশাপাশি চারপাশের সম্ভাব্য সব রকমের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে।

এ প্রসঙ্গে এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি আশা করছি, পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ ঠিক সেই জায়গাটিতেই ইউক্রেনের বাহিনীর জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ’ যদি আগামী দিনগুলোতে রাশিয়াকে দনবাসে মনোযোগ দিতেও দেখা যায়, তাহলেও ধরে নেওয়া যাবে না যে মস্কো নিজের বৃহত্তর লক্ষ্যটি থেকে সরে এসেছে। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এই আগ্রাসনকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে বলে মনে করছি না। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ