রাশিয়ান নৌমহড়া নিয়ে আয়ারল্যান্ডের উদ্বেগ

ইউক্রেন ঘিরে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান বিবাদ যখন চরম উত্তেজনায় রূপ নিয়েছে তখন বিশাল এক নৌমহড়ার আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

প্রশান্ত মহাসগর থেকে শুরু করে আটলান্টিক মহাসগারজুড়ে আয়োজিত বিশাল এ মহড়ায় অংশ নেবে রাশিয়ান নেভির সব নৌবহর। মহড়ায় অংশ নিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪০টির বেশি রাশিয়ান রণতরী, ৪০টি যুদ্ধ বিমান, ১০,০০০ হাজার সেনা ও মিলিটারি হার্ডওয়ারের ১০০টি ইউনিটকে।

জানা গেছে, চলতি মাস থেকে শুরু হওয়া এ মহড়া চলবে আগামী মাস পর্যন্ত। এদিকে আটলান্টিক মহাসাগরে আয়ারল্যান্ডের সমুদ্র সীমানায় রাশিয়ান নেভির এই নৌমহড়া নিয়ে আইরিশদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বেশ উদ্বেগ। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরের আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায় চলবে রাশিয়ার এই নৌমহড়া। আন্তর্জাতিক আইন মেনে মহড়া পরিচালনার কথা উল্লেখ করে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে নোটিশ পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে জানা গেছে, আইরিশ এভিয়েশন অথরিটি ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছে যে – দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় অনুষ্ঠিত এই নৌমহড়ায় মিসাইল পরীক্ষা চালাবে রাশিয়া। যার ফলে মহড়াকালীন সময় বেসামরিক বিমানগুলোকে নিদ্রীষ্ট এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্ব স্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে আইরিশ এভিয়েশন অথরিটির পক্ষ থেকে। ৩ ফেব্রয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ৫টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে এই মহড়া।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাইমন কভেনির কাছ থেকে সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয় না গেলেও তার একজন মুখপাত্র রোববার গণমাধ্যমকে বলেছেন, আইরিশ পররাষ্ট্র বিভাগ রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছে এবং আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে তারা আবারো আলোচনায় বসছেন বলে ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন ।

অপরদিকে গত শুক্রবার রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত ইউরি ফিলাটডের সাথে আইরিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেন ক্ল্যান্সির মধ্যে ডাবলিনের ওরওয়েল রোডে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে । রাশিয়ান দুতাবাস তাদের এক টুইটার বার্তায় বৈঠকের সত‌্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, রাশিয়া-আয়ারল্যান্ড সম্পর্ক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক এজেন্ডা সহ দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেই বৈঠকে।

সাবেক সেনা রেঞ্জার ডক্টর বেরি মনে করেন, গুলি চালানোর মহড়া বৈধ হলেও এটি আয়ারল্যান্ডের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

সিন ফেইন নেতা মেরি লু ম্যাকডোনাল্ড রাশিয়ার এই সামরিক মহড়াকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলেছেন। আয়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা খাতের বিভিন্ন সমস্যর কথা উল্লেখ করে মেরি লু বলেন, ২০১৫ সালে এই সংক্রান্ত একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা খাতকে প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নের মাধ্যমে সময়পোযোগী করার লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল তাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু নিশ্চিত সমস্যা জানা সত্ত্বেও সরকার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ‌্য নিয়ে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইরিশ নৌবাহিনী। বর্তমানে আইরিশ নৌবাহিনীর মোঠ সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ১০৪৯ জন, সংরক্ষিত সংখ্যা ১১৫ জন। আইরিশ মোঠ রণতরীর সংখ্যা ৯টি, তার মধ্যে ৫টি অপারেশন চালাতে সক্ষম। আয়ারল্যান্ডের সাথে ইউরোপের সমুদ্রসীমা প্রায় ১৩১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশাল বিস্তৃত এই সমুদ্রসীমা নিরাপদ রাখতে আইরিশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাদক পাচার, মানব পাচার, অবৈধ মাছ ধরাসহ আইরিশ সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করা বিদেশি সামরিক যুদ্ধজাহাজ থেকে আইরিশ উপকূলরেখা রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য আইরিশ নৌবাহিনীকে নতুন করে ঢেলে সাজানোসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া অতি জরুরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক এবং সামরিক বিশ্লেষকরা।

 

সূত্রঃ যুগান্তর