রামেক হাসপাতালে ইন্টার্নকে যৌন হয়রানি: চিকিৎসক বাদলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সহকর্মী ইন্টার্ন চিকিৎসদের যৌন হয়রানিকারী অনারারি মেডিক্যাল অফিসার (এইচএমও) মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি দিনের পর দিন দাপটের সঙ্গে চিকিৎসার নামে অপকর্ম করে গেছেন রামেক হাসপাতালে।

অন্তত ১৪ জন ইন্টার্ন (শিক্ষনিবশি) চিকিৎসককে তিনি যৌন হয়রানির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে নানা ধরনের খারাপ আচরণ করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে চিকিৎক বাদলের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এরইমধ্যে শাস্তিমূলক বদলিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে পর হাসপাতালের জরুরী সভা ডেকে তাৎক্ষনিক তাকে বদলি করা হয়। তবে এর আগে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে চিকিৎসকদের মাঝে বিষয়টি তুলকালাম ঘটনা ঘটে।

পরিচালকের কক্ষের বাইরে এ নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এর আগে চিকিৎসক বাদল ওই কক্ষে একজন পুরুষ ইন্টার্নি চিকিৎসকের বুকের ওপর লাথিও মারেন। পরে অন্যান্য চিকিৎসকরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে  বলেন, ‘যৌন হয়রানি অভিযোগ পাওয়ার পর ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ, সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপকদের নিয়ে জরুরী সভা করে দুপুরেই তাঁকে বদলীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন পরিচালক।
হাসপাতাল সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, মোজাম্মেল হক বাদল রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগের অনারারি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এই বিভাগে কোনো নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক দায়িত্ব পালনে গেলেই তাঁকে নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন তিনি। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতেন না।

সূত্রটি আরো জানায়, চিকিৎসক বাদল চিকিৎসার নামে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করতেন। এমনকি কথায় কথায় তাদের সঙ্গে আবার খারাপ আচরণও করতেন। রোগীদের তিনি নানাভাবে নাজেহাল করতেন। তার এসব অপকর্ম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতেন না।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে ডা. বাদল যৌন হয়রানি করেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ওই নারী ইর্ন্টান ওয়ার্ড ইনচার্জের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এরপর ওয়ার্ড ইনচার্জ বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানান। তবে অভিযোগ করায় জানতে পেরে ডা. বাদল ওই নারী ইন্টার্নকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেন।
রামেক সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, বুধবার সকালের ঘটনাটি হাসপাতালের অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক অভিযোগকারী ওই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। একই সাথে তলব করা হয় ডা. মোজাম্মেল হক বাদলকেও।
প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিচালক তলব করায় যৌন হয়রানির শিকার ওই ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ তাঁর সহপাঠি অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দুপুর একটার দিকে পরিচালকের কার্যালয়ে যান। তারা পরিচালকের কার্যালয়ের বাইরে আরকেটি কক্ষে অবস্থান করতে থাকেন।

এসময় চিকিৎসক বাদল গিয়ে সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে বাদল একজন পুরুষ ইন্টার্ন চিকিৎসকের বুকের ওপর লাথিও মারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একযোগে ধরে বাদলকে কিল-ঘুঁষি মারেন। পরে হাসপাতালের পরিচালকসহ আরো কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনার পরে হাসপাতালের জরুরী সভা আহ্বান করেন পরিচালক। এস সময় আরও ১৩ জন ভুক্তভোগী নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়ে বাদলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এরপরই ডা. বাদলকে তাৎক্ষনিক বদলীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গতকালই একটি চিঠি দেন পরিচালক রফিকুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার ডা; বাদলকে বদলির আদেশের চিঠি স্বাস্থ্য অধিপ্তর থেকে আসতে পারে বলেও দাবি করেছেন রামেক হাসপাতালের একটি সূত্র।

তবে ওই চিকিৎসককে দ্রুত এখান থেকে বদলি করে অন্যত্র না পাঠালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলনে যাবেন বলেও তাদের একাধিক সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডা. মোজাম্মেল হক বাদলের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

স/আর