রাজশাহীতে পাখির সঙ্গে নিষ্ঠুরতা, গাছ কেটে শতাধিক শামুকখোল হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘ দিন থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্ত্বরে পুরনো গাছগুলোতে হাজার হাজার শামুকখোল পাখি বাসা বেছে বাচ্চা তুলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ড্রেন নির্মাণের অজুহাতে দুটি গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে শামুকখোল পাখি ও বাচ্চাসহ প্রায় শতাধিক পাখি মারা যায়।

এদিকে নির্বিচারে গাছ কেটে শতাধিক পাখি হত্যার ঘটনায় রাজশাহীর প্রকৃতি ও পাখি প্রেমিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তবে এমন ঘটনায় রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও গভীর দুঃখ প্রকাশ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতাল চত্ত্বরে দীর্ঘদিন বাসা বেঁধে বসবাস করছিলো হাজারো শামুকখোল পাখি। বেশ কয়েকদিন থেকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আরডিএ হাসপাতালের ড্রেন নির্মাণের কাজ করছিলো। ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে শ্রমিকরা শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধে আছে- এমন দুটি গাছ কেটে ফেলে। গাছ দুটি মাটিতে পড়ে গেলে গাছে বাসা বেঁধে বসবাস করা শতাধিক শামুকখোল পাখির বাচ্চা মাটিতে পড়ে যায়। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক বাচ্চা মাটিতে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এতে আহত অর্ধশতাধিক শামুকখোল ও এদের বাচ্চা স্থানীয়রা বাড়িতে নিয়ে চলে যায়। শ্রমিক ও স্থানীয়দের অনেকেই আহত প্রায় ২০টি পাখি ধরে জবাই করে।

এভাবে পাখি হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাখি প্রেমিরা। রাজশাহী বার্ড ক্লাবের সদস্য ও পাখিপ্রেমী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এটিকে হত্যাই বলা চলে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এমন ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে অবহিত করেছি। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

এদিকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ তে বর্ণিত আছে- কোন ব্যক্তি পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

এভাবে নির্বিচারে পাখি হত্যায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আমি এটির জন্য প্রথমেই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ঘটনাটি হলো-পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আরডিএ ড্রেন নির্মাণ কাজ করছিলো। কিন্তু বিকালে আমি বাসায় আসার পর আমাদেরকে কোনোকিছু না জানিয়েই এমন দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নিকট কারণ জানতে চাওয়া হবে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’

এএইচ/এস