রামেক হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগ: চিকিৎসকও যেখানে অসহায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিত গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার মাহফুজুর রহমান রাজ নামের অপর এক চিকৎসকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া এই খবরটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুল ধরা হলো।

আমার জানার অধিকার আছে। আমি জানতে চাই ..

আমি নিজে একজন চিকিৎসক। গত আট এপ্রিল রাত ৩টায় প্রচন্ড জ্বর, পেট ব্যাথা সাথে হার্নিয়ার পেইন আর মৃদু স্বাস কষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইমারজেন্সীতে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সব শুনে বললেন কার্ডিওলজিতে ভর্তি হয়ে একটু দেখিয়ে নেন কার্ডিয়াক কোন সমস্যা না থাকলে সার্জারি তে ট্রান্সফার করে নিবেন।

ইন্টার্ন দের অভূতপূর্ব সহযোগীতা :::
ভর্তি হলাম ৩২ এ। বেড নাই মেঝেতেও জায়গা নাই। একটা চাদর একটা কাথা আর একটা বালিশ এনেছিলাম। ইসিজি বেডে শুয়ে থাকলাম। জ্বরে কাপতে দেখে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এবং সিস্টাররা খুব সহযোগীতা করলেন। নতুন রোগী আসলে অন্য কোথাও ইসিজি করে আমাকে বিছানা টা দিয়ে রাখলেন।

সমস্যা শুরু :::;
ভোরে অনেক রোগী আসতে থাকলে তারা বাধ্য আমাকে অনুরোধ করেন বিছানা ছাড়ার। পিসিসিইউ তে মাটিতেও জায়গা নাই। ছোট একটু জায়গায়, যেটা চলাচলের রাস্তা, কোন রকমে শুয়ে পডলাম। একটু পর পর মানুষের চলাচলের সময় লাথি লাগছিল। জ্বরে শরীর কাপছে, মেজেতে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছি।

নিজেকে রাস্তার ধারের ধুলায় শুয়ে থাকা নেড়ী কুত্তার মত লাগছিল। অপেক্ষা করছি কখন রাউন্ড শুরু হবে।
লজ্জায় মুখ ঢেকে রেখছিলাম। পরে ভাবলাম আমি আম জনতা। এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমজনতার জন্য এমনই। আর খারাপ লাগছে না।
এরপর ৮ টা বেজে গেল আমার কলিগরা দুয়েকজন আসতে থাকল। বলল পরিচালক মহোদয় কে বলে কেবিনে নিয়ে যাই। কিন্তু আমি বললাম রাউন্ডে স্যার এসে দেখে কি বলেন শুনে তারপর দেখা যাবে। আর খারাপ লাগছিল না, জ্বরের ঘোরে এটা সেটা মনে হচ্ছে। ভাবছি আমি এই ধুলার ভিতরে একা শুয়ে নাই, সমগ্র চিকিৎসক সমাজ শুয়ে আছে। একবার ভাবলাম সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই মেঝেতে পড়ে আছে।

রাউন্ডের স্যারকে ভাল লাগল ::;

মেঝেতে থাকার জন্য আমি কোন অভিযোগ করিনি। স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছি। কারন রুমে কোন বেড খালি নাই। অবশেষে রাউন্ড শুরু হল। সহ অধ্যাপক স্যার আমাকে অবাক করে আমার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করলেন সমস্যাগুলো। জ্বরের কথা। আমি এক একে বললাম। গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখে বিরক্ত হলেন যে এটা মেডিসিনে দিতে পারত ইমারজেন্সী থেকে। ইজিসি, কয়েক দিন আগের ( ৩/৪/১৮) ট্রপনিন আই রিপোর্ট দেখলেন নরমাল, আরবিএস, এস ক্রিয়েটিনিন নরমাল। উনি সংগের চিকিৎসক কে বললেন প্রথম যে বেড খালি হবে সেটা আমাকে দেবার কথা ফাইলে লেখে দিতে। আর বললেন উনার কোন কোন কার্ডিয়াক সমস্যা নাই। বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রইস উদ্দিন স্যারকে বলে ট্রান্সফার করে দেয়া যেতে পারে।

শান্তি লাগল যখন ::::
হঠাত দেখি আমার এটেন্ডেন্টরা নেই সাথে আমার স্ত্রীও নাই। বুঝলাম সবাই যেই শুনছে কার্ডিয়াক প্রবলেম নেই অমনি কেবিনের জন্য গেছে। আমার স্ত্রী পরিচালক মহোদয়ের সাথে দেখা করলে উনি দ্রুত কেবিনের ব্যবস্থ্যা করে দেন এবং বলেন রইস উদ্দিন ডন স্যারকে জানিয়ে রাখতে। ফোনে উনাকে জানান হয়েছিল শুনেছি। কিন্তু উনি রাজী হতে চাননি। উনাকে উনার চিকিৎসক এর রেফারেন্স দিয়ে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য সার্জারি তে দেবার অনুরোধ করা হয়েছিল তখনই।
উনাকে পরদিন দেখা করে সার্জারিতে ট্রানফার করার কথা লেখে নেবার জন্য ক্যাথ ল্যাবে দেখা করতে চাইলে অনুমতি দেননি। বলেছেন যে ডিসচার্জ নিতে।

বাধ্য হলাম জোর করে দেখা করতে :::

আজ ( ১৭/৪/১৮) তে ক্যাথ ল্যাবে জোর করে উনার সাথে দেখা করলে উনি একই কথা বলেন। আমি স্যারকে বললাম, স্যার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই চলে গেছি। উনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন আমি বিছানা কি বানিয়ে দেব।
আমি বললাম, স্যার আমি বিছানার জন্য কোন অভিযোগ করিনি। হার্টের সমস্যা নাই জানার পর কেবিনে গেছি। দুঃখিত স্যার। আমাকে সার্জারি তে ট্রান্সফার করুন প্লিজ। উনি বললেন ডিসচার্জ নিয়ে চলে যেতে। তারপর যেখানে খুশী ভর্তি হতে। ফিরে এসে ডিসচার্জ নিলাম।

আমার কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই , আমি শুধু জানতে চাই :::::

০১. কার্ডিয়াক প্রবলেম নাই শুনার পর একটা চাদরে ৮ ঘন্টা শুয়ে সাড়া পিঠে তীব্র ব্যাথা আর জ্বরে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেবিনে চলে যাওয়াটা কতবড় অপরাধ হয়েছে আমার
যার জন্য ৮/৪/১৮ থেকে ১৭/৪/১৮ পর্যন্ত হার্নিয়ার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হল।
০২. চিকিৎসকরা মহান হন এজন্য যে তারা নিজের ঘোর শত্রু কে ও মমতার সাথে চিকিৎসা দেন। নিজের ভিতর ক্ষমতার দাপট, হিংসা, ইগো থাকার কোন সুযোগ আছে কি?

স/আর