নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাত তখন প্রায় একটা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের বিশ্রামাগারে পড়ে আছেন সদ্যজাত সন্তান প্রসবকারিনী এক মানসিক ভারসম্যহীন মা। তখনো রক্তে ভেসে যাচ্ছে যাচ্ছে স্টেশনের বিশ্রামাগার। অসয্য যন্ত্রণায় ছটপঠ করছে মা। আর কিছুক্ষণ আগেই জন্ম নেওয়া শিশুটি তখন ঠান্ডায় কাঁপছে থর থর। এই অবস্থায় অসহায় সেই মা টিকে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যান রাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী।
- একজন বুদ্ধিহীন অসহায় মায়ের জন্য এমনভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যারা এগিয়ে যান তাদের মধ্যে একজন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংভাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক। তার ফেসবুকে পেজ থেকেই সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে এবং অসহায় ওই মা ও তার শিশুটিকে উদ্ধারের বর্ণনাটি হুবুহু সিল্কসিটি নিউজের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
রক্তে ভেসে গেছে স্টেশনের বদ্ধ রুমের মেঝে। একটা ময়লা, ছেড়া বস্তার উপর শুয়ে অাছে মা। পাশেই নোংরা একটা গেঞ্জির ওপর হাত-পা নাড়ছে সদ্যজাত শিশু। হতবিহবল অামরা কয়েকজন। এক নারীকে পাওয়া গেল। নাড়িটা কেটে দিলেন। কিভাবে কি করা যায় ? দিশা নেই। স্থানীয় কাউকে পাওয়া যায়নি অাশ্রয় দেয়ার। মায়ের প্রচন্ড ব্লিডিং।
- কাঁপছিল বাচ্চা। রেল স্টেশনের অব্যবহৃত যাত্রী বিশ্রামাগার যেন মানবতার শবাগার। পরে দরদি কয়েকজন এগিয়ে অাসলেন। অবশেষে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত। বন্ধু নাজমুস সাকিব কয়েকজনকে নিয়ে স্টেশন বাজার থেকে এক হাজার টাকা ওঠালো। হলের এক ছোট ভাইয়ের গামছা দিয়ে মোড়ানো হলো বাচ্চাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরম থেকে বাচ্চা অার মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মা এখন রাজশাহী মেডিকেলে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রক্ত দেয়া হয়েছে দুই ব্যাগ। চিকিৎসকরা বলেছেন মাকে বাচাতে দ্রুত একটা অপারেশন করতে হবে।
অাপাত ব্যবস্থা হয়েছে। পরবর্তী হেল্প লাগবে। যে কোনোভাবে কেউ সাহায্য করতে অাগ্রহী থাকলে প্লিজ পরিচিতরা ফোনে ও অন্যরা ইনবক্সে সাকিব অথবা অামার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরে শনিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাতে প্রসবকৃত ছেলে শিশুটি এবং তার মাকে রামেক হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুজনেই এখন অনেকটা ভালো আছে। তবে তখনো তাদের পাশে রাবির ওই শিক্ষার্থীরাই নানাভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিল। এ যেন এক অন্যন্য মানবিকতা।
স/আর