রাবির সিনিয়রকে ৭ দিনের মধ্যে হলের সিট ছাড়ার নির্দেশ দিলো জুনিয়র নেতা

রাবি প্রতিনিধি:

*‘দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, কিছুদিনের মধ্যে সিট খালি হবে তাই তুলেছি’

*আবাসিক ছাত্রকে ৭ দিনের মধ্যে হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে অনাবাসিক ছাত্রকে সিটে তুললো ছাত্রলীগ

*‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে জুনিয়ররা হুমকি দেবে ভাবতে পারিনি’ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের এক আবাসিক ছাত্রকে ৭ দিনের মধ্যে হলের সিট ছাড়ার হুমকি ও অনাবাসিক এক শিক্ষার্থীকে ওই কক্ষে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় ওই হলের ৪৩১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় ও হল ছাত্রলীগের কর্মী আরিফ।

ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও হলের আবাসিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাদার বক্স হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের অনুসারী আরিফের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয় ছাত্রলীগ কর্মী ৪৩১ নম্বর কক্ষে আসেন। সেখানে তারা মেহেদী হাসান কবে হল ছাড়বেন জানতে চান এবং নাজমুল নামের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র ওই কক্ষে রেখে যান। ছাত্রলীগ কর্মীরা মেহেদীকে জানান নাজমুল ওই কক্ষে থাকবেন। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে হল ছাড়তে হুমকি দেন তারা। এসময় তাদের হাতে একটি তালিকা দেখা গেছে। কোন কক্ষে কতো সিট খালি আছে, সেই তালিকা ধরে তারা বিভিন্ন কক্ষে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাজমুল হাসান ওই কক্ষে আসেন এবং রাতে অবস্থান করেন। নাজমুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের  ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নাজমুল বলেন, ‘আমি হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত ভাইয়ের রাজনীতি করি। তিনি আমাকে  হলে তুলেছেন। আমার কোনো আবাসিকতা নেই।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘২০ দিন আগে জয়ন্ত (মাদার বখশ হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) কক্ষে বস্তা রেখে গেছেন। আমি বলছি, আমার এখনো পরীক্ষার ফলাফল হয়নি, হলেই চলে যাব। জয়ন্ত তখন কিছু বলেনি। এর কিছুদিন পর ৩ থেকে ৪ জন এসে ৭ দিনের মধ্যে হল ছাড়ার হুমকি দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে জুনিয়ররা হুমকি দেবে ভাবতে পারিনি। আজকে আরিফের নেতৃত্বে ৫-৬ জন ছেলে এসে কক্ষে একজনকে উঠিয়ে দিয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে আরিফ বলেন, ‘রুনু ভাইয়ের মাধ্যমে তাকে হলে উঠানো হয়েছে। রুনু ভাই, জয়ন্ত ভাইয়ের কাছে পাঠাইছে। যেহেতু এই হলের দায়িত্বে জয়ন্ত ভাই আছে, দেখাশোনার সবকিছু। তাই জয়ন্ত ভাইয়ের মাধ্যমে তাকে হলে ওঠানো হয়েছে।’

মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে। আমরা জানতে পেরেছি ওই কক্ষ কিছুদিনের মধ্যেই খালি হবে। তার থাকার সমস্যা দেখে রুনু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ওই কক্ষে তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে সাত দিনের সময় বেধে দিয়ে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশটি মিথ্যা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের কাছে হলে ওঠার সুপারিশের জন্য অনেকেই আসে। আমাদের কাছে ছাত্রলীগের কেউ আসলে আমরা ওই হলের নেতৃবৃন্দকে বলি। কে, কাকে, কোন হলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে হলে উঠিয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে আমি বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো।’

এ বিষয়ে মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ শামীম হোসেন বলেন, ‘গতকাল আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। তাই রাতে হলে যেতে পারিনি। কালকে ওই শিক্ষার্থী (মেহেদী হাসান) আমার কাছে ফোন করেছিল। আমি বলেছি, যার আবাসিকতা আছে সেই ওই কক্ষে থাকবে। আমি আজকে হলে গিয়ে বিষয়টা দেখব।’