রাবি শিক্ষক জলির ‘আত্মহত্যা’: এক মাসেও মিলেনি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির মৃত্যুা এক মাস পরেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি পুলিশ। ভিসেরা রিপোর্টেরও একই হাল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার উপ-পরির্দশক ব্রজ গোপালও রয়েছেন ছুটিতে। তাই তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।

 
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে নিজ কক্ষ থেকে শিক্ষক জলিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন শিক্ষক জলির কক্ষ থেকে দুই টুকরো কাগজে ‘সুইসাইট নোট’ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

‘সুইসাইড নোটে’র হাতের লিখা শিক্ষক জলিরই সেটা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করে তার সহকর্মীরা। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ১০ সেপ্টেম্বর মতিহার থানায় ‘আত্মহত্যায়’ পরোচনার মামলা করে জলির ছোটভাই কামরুল হাসান।
এরপর মামলার তদন্তে পুলিশ শিক্ষক জলি কক্ষ থেকে সাইসাইড নোট, দুটি ল্যাপটপ, তিনটি মুঠোফোন, ঘুমের ট্যাবলেট (ইজিএম), তরল পদার্থ, চারটি পেন ড্রাইভ, দুটি বালিশের কাভার, বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও শেষ সময়ে তার পরিহিত কাপড়ের কাটা অংশ জব্দ করে।
এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর ব্রজ গোপাল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘ভিসেরার নমুনাগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবদেন পেলে আমরা অনেকটা পরিস্কার হতে পারবো। এছাড়া সহকর্মীদের সাথে কথা বলার মধ্য দিয়ে তার আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ ও আত্মহত্যার পেছনে কারও প্ররোচনা আছে কিনা, সেগুলো বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

 

কিন্তু এর ২০ দিন পর আজ রোববার (৯ অক্টোবর) ব্রজ গোপাল বলছেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারছি না। আপনি এসি একরাম স্যারে সঙ্গে কথা বললে তিনি আপনাকে  ভালো জানাতে পারবে।’
জানতে চাইলে মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার একরামুল হক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট এখনও আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। রিপোর্টগুলো আনার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রিপোর্ট হতে পেলে সে মোতাবেক তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।’ তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে, এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। অগ্রগতি হলে জানাবো।’
এদিকে মামলার তদারকি করার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ বলেন,‘ আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি। পুলিশ আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা তাদের মতো করে তদন্ত করেছে।’
এদিকে এক মাসেও ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফ রেজা মাহমুদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক আকতার জাহান আত্মহত্যার এক মাস হয়ে গেল। এখনও ভিসেরা রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এখনও প্রকাশিত হয়নি পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট। গেল এক মাস ধরেই চলছে তদন্ত। অথচ কোনও অগ্রগতি নেই।’
বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান রানা বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল কিন্তু এখনও আমারা ম্যামের মামলার কোনও অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। জানি না তদন্ত কী অবস্থায় আছে। নাকি তদন্তের নামে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের দেখতে হবে।’
এদিকে গতকাল শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে শিক্ষকর জলির মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের জন্য ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ অভিযোগ কমিটি’ কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

স/শ