রাবি ভিসির বিরুদ্ধে ১৭ অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-রাবি প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ গুরুতর ১৭ অভিযোগ সম্প্রতি জমা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। একই অভিযোগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসিতেও। সরকার সমর্থক প্রগতিশীল শিক্ষকদের একাংশ এসব অভিযোগ দিয়েছেন। ১৭ অভিযোগ নামায় স্বাক্ষর করেছেন সিনিয়র জুনিয়র মিলে মোট ৫৮ জন শিক্ষক। অভিযোগগুলোর অধিকাংশই আনা হয়েছে রাবি ভিসি প্রফেসর এম সোবহানের স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অযোগ্যদের গণহারে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো ও নিয়োগ করা এবং নিজে প্রতারণামূলকভাবে অবসর গ্রহণের পর অবসরের সব সুবিধাদি তুলে আবার ভিসি পদে আসীন হওয়া বিষয়ে।

রাবি ভিসির এসব বিতর্কিত ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ইউজিসি ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শিগগিরই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলে ইউজিসি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ইউজিসির সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজ বেগম সোমবার যুগান্তরকে বলেছেন, রাবি ভিসির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কিছু অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিতভাবে অভিযোগ এসেছে। এসব নিয়ে ইউজিসি তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তদন্তের ফলাফল সেটা যাই হোক-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ দাখিল করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সার্বজনীন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার আলোকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদন করা বাধ্যতামূলক। তবে তার মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে রাবির ৪৭৫তম সিন্ডিকেটে বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করেন ভিসি। এতে শিক্ষক নিয়োগে আগের যোগ্যতা শিথিল করা হয়। এরপর রাবি ভিসি নিজের মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগে এবং জামাতা শাহেদ পারভেজকে ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউটে নিয়োগ দেন। একইসঙ্গে প্রোভিসি সিএম জাকারিয়ার জামাতা সালাহউদ্দিন সাইমুমকে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতায় আইনবিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। এ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের ২১ জুন দিনের প্রথমভাগে প্রফেসর সোবহান দ্বিতীয়বার ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। এই দিনই তার চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়। ফলে তিনি এদিন সকালে ভিসি হিসেবে যোগ দেন এবং বিকালে নিজ বিভাগ ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকতার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

এদিনই তিনি রাষ্ট্রপতির দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর আখতার ফারুককে রাবি ভিসির দায়িত্বভার অর্পণ করেন। এরপর তিনি একজন শিক্ষকের অবসরকালীন সব সুবিধাসহ মোট ৮০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেন। এরপর তিনি আবার নিজেই ভিসি হিসেবে প্রফেসর আখতার ফারুকের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ, পেনশনের টাকা তোলা, আরেকজনকে ভিসির দায়িত্বভার দেয়া এবং পুনরায় ভিসি পদে আসীন হওয়ার বিষয়গুলো তিনি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই সম্পাদন করেন। শিক্ষকরা অভিযোগে বলছেন, প্রফেসর সোবহানের এসব আজগুবি কর্মকাণ্ড শুধু আইনবিরোধী নয়, প্রতারণামূলকও। অভিযোগ মতে, প্রফেসর সোবহান তদবির করে বিএনপি সমর্থক শিক্ষক সিএম জাকারিয়াকে প্রোভিসি হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দেন। সিএম জাকারিয়া রাবি ভিসির অপকর্মের ডান হাত বলে শিক্ষকরা অভিযোগে বলেন।

অভিযোগ নামা পর্যালোচনা করে জানা যায়, ভিসি সোবহান স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার স্ত্রী বোনের ছেলে সাখাওয়াৎ হোসেন টুটুলের স্ত্রী শিউলী খাতুন ও তার ঘনিষ্ঠ পরিবহন প্রশাসনের স্ত্রী রুনা লায়লাকে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। প্রফেসর সোবহান তার আপন ভায়রা ভাই অবসরপ্রাপ্ত পশু ডাক্তার আক্কাছ আলীকে ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ আইন লঙ্ঘন করে বন্ধু আবদুল মজিদকে বরেন্দ্র মিউজিয়ামের পরিচালক পদে, মনোবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর আবদুল লতিফকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি পদে, নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে রফিকুল ইসলামকে আইন বিভাগে, ভিসি ঘনিষ্ঠ সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা জান্নাতুল ফেসদৌস শিল্পীর ভাগ্নের ফল প্রকাশের আগেই ভিসি ফল পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেন। রাবির প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনিরকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠান ভিসি সোবহান।

অভিযোগ রয়েছে, ভিসির কথামতো একজন ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় ভিসি ক্ষিপ্ত ছিলেন তার ওপর। এছাড়া নিয়ম থাকা সত্ত্বেও পক্ষের না হওয়ায় ভিসি অনেক শিক্ষকের লিয়েন আটকে রাখেন, এনওসি না দেয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আবার অনেকের সিলেকশন গ্রেড দেয়া, অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি এক্সটেনশন করা, বেতন স্কেলে বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আক্রোশমূলক পদক্ষেপ নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে ভিসি সোবহানের বিরুদ্ধে।

শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে মতামত পেতে কয়েকদিনে রাবি ভিসি প্রফেসর এম সোবহানের ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে বক্তব্য চাইলেও তা পাওয়া যায়নি।