রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন পেছানো মাত্রই চিত্র উল্টো, যেন পদের জন্যই রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনুষ্ঠেয় হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে সংগঠনটির কর্মীরা। রুটিন করে দলীয় টেন্টে উপস্থিত হওয়া, ক্যাম্পাস ও হলে হলে মিছিল করা, পদপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাদেরকে।

কিন্তু সম্মেলন পেছানো মাত্রই চিত্র পুরোপুরি উল্টো। দলীয় টেন্টে সেসব কর্মীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও কর্মীদের দেখা যায়নি অন্য কোনো কর্মকাণ্ডেও। যেন কেবল পদের জন্যই রাজনীতি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের ভাষ্য, শুধু পদের জন্য কেউ রাজনীতি করবে এমনটা কখনোই কাম্য নয়।

আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রলীগের বৃহৎ এই শাখাটির হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত রবিবার (০২.০২.২০) সম্মেলন পেছানো হয়। তবে সম্মেলনের নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি এখনও। এই সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব ঘোষণার কথা ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, দীর্ঘ চার বছর পর হল সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় আগ্রহের কমতি ছিল না কর্মীদের মধ্যে। আর তাই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার হওয়ার পর থেকেই দলটির কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার লাগানো, দিনের বেলা ক্যাম্পাসে ও সন্ধ্যার পর হলে হলে কর্মীদের মিছিল, মিছিল পরবর্তী সমাবেশ, দলীয় টেন্টে উপস্থিত হয়ে নেতাদের মনযোগ আকৃষ্ট করা ছিল পদপ্রত্যাশী কর্মীদের রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাপ্তাহিক মিছিলসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডে ছাত্রীদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের মিছিলে ছাত্রীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, হল সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত কর্মিসভা থাকায় হল সম্মেলনের তারিখ স্থগিত করা হয়। এরপর থেকেই ঝিমিয়ে পড়ে সংগঠনটির কর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সুলতান মাহমুদ রানা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের অনেকেই রাজনীতিকে পেশা হিসেবে মনে করেন। প্রকৃত অর্থে রাজনীতি কোনো পেশা নয়। রাজনীতির উদ্দেশ্য মানবসেবা। এজন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের আদর্শিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। নেতারা যদি তাদের কর্মীদের মনে মানবসেবার বীজ বপণ করে দিতে পারে তাহলে পদের নয়, আদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

রাজনীতিকে এখন অনেকেই নিজের আখের গোছানোর জন্য ব্যবহার করছেন মন্তব্য করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি এস এম এক্রাম উল্যাহ বলেন, ৯০ পূর্ববর্তী সময়ে রাজনীতির যে আদর্শিক জায়গাটা ছিল এখন সেটা নেই। শুধু ক্ষমতা চর্চা, ব্যক্তিকেন্দ্রীক চিন্তা-ভাবনা, নিজের আখের গোছানো এ ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। অথচ পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল না। নেতার যেসব গুণাবলী থাকা দরকার তার উপর ভিত্তি করেই কেবল নেতৃত্ব বাছাই করা উচিত।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে বিষয়টি তা নয়। ছাত্রলীগের রাজনীতির একটি আদর্শিক জায়গা রয়েছে। এখানে পদ বড় কথা নয়। আমাদের সাংগঠনিক কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ। তারা নিষ্ক্রিয় হয়নি।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২২ নভেম্বর দুই ভাগে ভাগ করে ছাত্রদের ১১টি হলের সম্মেলন করে তৎকালীন রানা-বিপ্লব কমিটি। পরে শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল ব্যতীত ৯টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আর হল কমিটি হয়নি।

স/অ