রাবি প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ দশ মাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামী ১৩ মার্চ থেকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। এ ঘোষণার পরে জোর দাবি উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়ার । শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে তারা হল খোলা দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
তারা বলছেন- আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত অবিবেচক। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের সমর্থন রয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে গত বছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়তে বাড়তে বর্তমান পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বর্ষ যেমন দীর্ঘ হচ্ছে আবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস, আবাসিক হল খোলা ও চুড়ান্ত পরীক্ষার দাবিতে দুইবার মানববন্ধন করেছেন।
এর আগে গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) হল খুলে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়াসহ ৪ দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা সাক্ষাৎ করেছে। শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান ও দাবির ভিত্তিতে ২০১৯ সালের আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে আবাসিক হল খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি প্রশাসন।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন ২০১৯ সালের আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে রাবি শাখা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হল খুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে উপাচার্য স্যারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলেছিলো। এরপর এখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস খোলার জন্য আন্দোলন করছে। এতে আমরাদের সমর্থন রয়েছে। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দ্রুত হল ও ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানানো হবে বলেও জানান এ ছাত্র নেতা।’
রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘দেশের সকল অফিস-আদালত স্বাভাবিকভাবে চলছে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা চরম সংকটে পড়বে। আমরা (ছাত্রফেডারেশন) আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারনে সামগ্রিক দিক থেকে শিক্ষাব্যবস্থা একটু পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস খোলা জরুরী। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হোক। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দ্রুত ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানান ছাত্র ইউনিয়নের এই নেত্রী।’
এ বিষয়ে সরাসরি উপাচার্যের কোন ব্যক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন বিভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে চাইলে প্রশাসনের কোন আপত্তি থাকবে না। তবে আবাসিক হল খোলার বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
এএইচ/এস
