রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় অ্যালামনাই’য়ে মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই…’- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজী ভবনের সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলা থেকে নামতে নামতে আপন মনে গানটি গাইছিলেন জসীম উদ্দীন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় অ্যালামনাই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ক্যাম্পাসে এসেছেন। তাঁর চোখে-মুখে উচ্ছ্বলতার ছাপ। দীর্ঘদিন পর বন্ধু-বান্ধবকে কাছে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত তিনি।

এদিকে, বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। তাদের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে শিরাজী ভবন প্রাঙ্গণ।

বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টায় রেজিস্ট্রেশন, মতবিনিময়, খেলাধুলা, আড্ডার মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

আজ শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৯টায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। উদ্বোধন শেষে সকাল সাড়ে ৯টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়। পরে শিরাজী ভবনে শুরু হয় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। এতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে একে তাঁদের ক্যাম্পাস ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভবন ও এর আশেপাশ বিভিন্ন রঙের আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অ্যালামনাইয়ে আগতরা একসঙ্গে গান গাইছেন, কেউ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত, কেউ বা আবার মেতে উঠেছেন আড্ডায়। তাঁদের এসব আয়োজনে ছুটির দিনেও মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান চৌধুরী এসেছেন অনুষ্ঠানে। আজ সকালে শিরাজী ভবনে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা গেল তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ভার্চুয়্যাল লাইফে প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও সামনা-সামনি দেখা হওয়ার মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি থাকে।’ তাঁর সঙ্গে ছবি তুলছিলেন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফরোজা মনি, দিল আফরোজ ও জ্যোতি। তারা বলেন, ‘এ রকম অনুষ্ঠান আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো। সম্মিলন উপলক্ষে আমরা বিভাগের প্রাক্তনদের কাছে পেয়েছি। তাঁরা সবসময়ই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি খুব উপভোগ করছি।’

টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার নারান্দিয়া কলেজের প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একদিন আগেই রাজশাহীতে এসেছেন। তাঁকে দেখা গেল শিরাজী ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে দীর্ঘ একটি সময় পার করেছি। জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে এসে নিজেকে এখনও ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীই মনে হচ্ছে।’

মেহেরপুর থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সোফিয়া সুলতানা। তিনিও একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

বিভাগের সভাপতি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অ্যালামনাইরা আমাদের প্রতিচ্ছবি। তাঁদের উপস্থিতিতে আমরা খুবই আনন্দিত।’

দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে আরও ছিল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুমোদন, নতুন কমিটি গঠন, মধ্যাহ্ন ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

স/শা