রাবির ভিসি পদে আলোচনার শীর্ষে তিন নাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভিসি পদ শূন্য হয়েছে গত ৬ মে। নিয়মানুযায়ী সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত তিনজনের প্যানেল থেকে একজনকে ভিসি নিয়োগ হওয়ার কথা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রীতির আর প্রচলন নেই এখন।

নিয়মানুযায়ী সিনেট প্যানেল থেকে রাবিতে সর্বশেষ ভিসি হয়েছিলেন প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে সিনেট প্যানেলে কেউ আর ভিসি হননি। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ভিসি হয়েছেন পরের সবাই।

এদিকে রাবিতে বর্তমানে ভিসি পদ পূরণে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। আগামী চার বছরের জন্য কাকে দায়িত্ব দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার জন্য অপেক্ষা চলছে। মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ভিসি পদে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করবেন।

সেই পদ পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক ডজন শিক্ষক। তবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে তিনটি নাম। তবে এবার শিক্ষাবান্ধব সৎ, যোগ্য ও দক্ষ একজন কাউকে রাবির ভিসি করার দাবি সর্বমহল থেকেই উঠেছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও চাইছেন একজন সৎ ও দক্ষ কাউকে ভিসি করা হউক।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ পদে সিলেকশন করার পূর্বে এ বছর চুলচেরা করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গত মেয়াদে ২০১৭ সালের ৫ মে দ্বিতীয় বারের মতো ভিসি হয়ে প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানের কর্মকাণ্ড ভিসি পদটিকে বিতর্কিত করেছেন। শুধু তাই নয়, বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগেও গণনিয়োগ দিয়ে গেছেন। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রফেসর সোবহানের মতো আরেকজন কাউকে রাবিতে ভিসি হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন না শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

এদিকে জানা গেছে, পরবর্তী ভিসি আলোচনায় থাকা শীর্ষে নামে রয়েছে সাবেক প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহানের। তিনি এর আগে প্রো-ভিসির দায়িত্বে ছিলেন ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও তার বড় সফলতা বলে মনে করা হয়, নিয়োগে স্বচ্ছতা। যেহেতু বর্তমানে নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে রাবি সমালোচনার শীর্ষে আছে। এর রেষ কাটাতেই দায়িত্ব দিতে পারেন চৌধুরী মো. সারওয়ার জাহানকে বলে শোনা যাচ্ছে।

আলোচনার শীর্ষে থাকা আরেকজন হচ্ছেন ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. আবুল কাশেম। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও রাজশাহী জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তার সততা ও দক্ষতা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দ্বিমত নেই।

অন্যদিকে শীর্ষ আলোচনায় আছেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. সাইয়েদুজ্জামান। তিনি বর্তমানে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। শিক্ষক-ছাত্র সমাজে তার ভাল গ্রহণ যোগ্যতা  থাকায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে এ্যাকাউন্টিং এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে ড. সাইয়েদুজ্জামান।

অন্যদিকে আলোচনায় রয়েছে, বর্তমান প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, বর্তমান প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ও প্রাণ রসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রান্তিকাল মুহূর্তেও প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে কনভেনার নির্বাচিত হয়েছেন।

ভিসি হিসেবে আলোচিত অন্যদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর জিনাত আরা, সাবেক লাইব্রেরি প্রশাসক প্রফেসর ড. সফিকুন্নবী সামাদীরও নাম রয়েছে।

বর্তমানে ভিসিরা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। এই সময়ে কেমন ভিসি দরকার জানতে চাইলে  রাবির সাবেক ভিসি ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার তিনটি মানদণ্ডকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। পাণ্ডিত্য, নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব। সব প্রফেসরই পাণ্ডিত্য, আর নেতৃত্ব বলতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন, সিন্ডিকেট, শিক্ষক সমিতি, দলীয় স্টিটিয়ারিং এ সফলভাবে দায়িত্ব পালন করা, আর ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ব্যক্তির সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য। যা তার সততার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হবে। এককথায় এসব গুন যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে তিনি এ পদের জন্য যোগ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, এত যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুফল বয়ে আনে না। এমনটা হলে রাবির মতো একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় আবারও সঙ্কটে পড়বে।