রাবিতে বর্ণিল আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

রাবি প্রতিনিধি:
বাঙালির ঐতিহ্যের অন্যতম একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সংস্কৃতির বাহন হিসেবে এর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সেই উৎসবকে বরন করে নিতে ভুলেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।

শনিবার বছরের প্রভাতের আলোর মধ্যদিয়ে শুরু হল ১৪২৫। প্রথম বছরের প্রথম দিন সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ঢল নামে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠে আনন্দ-উল্লাসে। শুষ্ক বৃক্ষের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হওয়ার একটা প্রবণতা পহেলা বৈশাখে প্রতিটা মানুষের মধ্যে ফুটে উঠেছে। প্রত্যেকে প্রাণ ভরে দেখে নিয়েছেন একটি জাতীর চিরায়ত সংস্কৃতি, আবেগ-অনুভূতি কতটা বাস্তব চিত্র।

আনন্দ উল্লাসে আর খুশির স্বর্ণধারায় নতুন বছরকে বরন করতে ভুলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। শোভা যাত্রার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, রেজিস্ট্রার এম এ বারী।

এবারের বর্ষবরণে থিম ‘ষাঁড়’ ও ‘পায়রা’। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এমন থিম বানিয়েছে বলে জানায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এদিকে কৃষির সাথে ষাঁড়ের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বাংলার আগের কৃষি ব্যবস্থা ততোটা উন্নত ছিলো না যার জন্য তারা ষ্াড়ের সাহায্যে চাষাবাদ করতো আর এর সাহায্যে কৃষকরা চাষ করে জমিতে ফসল উৎপাদন করতো। এছাড়া পায়রা হলো শান্তির প্রতীক। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। যা শান্তির বার্তা প্রকাশ করে। এসব দিক বিবেচনা করে এই থিম দুটিকে রাখা হয়েছে।

বছরের নতুন প্রভাতকে বরন করে নিতে সকাল থেকেই ঢাক, ঢোল আর গান বাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বিভিন্ন বিভাগ আর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বের করা হয় শোভাযাত্রা। কেউ কৃষক, জেলে সাপুড়ে, বর, বউ, বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে পুরো ক্যাম্পাস মাতিয়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রা শেষে সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে চারুকলা অনুষদ চত্বরে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন লোকসঙ্গীত, নাটক, নাচ, যন্ত্রসঙ্গীত ও কবিতা আবৃতি। চারুকলা অনুষদ চত্বর, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, লিপু চত্বর, শহীদুল্লাহ ও কলাভবন, ইবলিশ চত্বর, সাবাশ বাংলাদেশ মাঠ চত্বরসহ লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের প্রতিটা জায়গায় তিল ধারণের মতো ঠাঁই নাই।

ইংরেজী বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুজন আলী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আসলেই মনে কেমন একটা দোল দিয়ে যায়। মনে হয় বাঙালি তার ঐতিহ্য ফিরে পেলো। তারই ধারা পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ক্যাম্পাস সেজেছে নতুন সাজে।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘প্রত্যেকবারের মতো এবারো খুব আনন্দ করছি। বন্ধুদের সাথে ঘুরছি। তবে গতবারের তুলনায় এবারের বৈশাখে উৎসবের আমেজ কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তারপরও অনেক ভাল লাগছে।’

স/অ