রাত পোহালেই ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে স্বপ্ন পূরণ রাজশাহীবাসীর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য বিরতিহীন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি অবশেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন।

বর্তমানে উদ্বোধনের জন্য ট্রেনটি এখন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছে। বুধবার সকালেই রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে আনা হয়েছে।

ফলে এখন রাত পোহালেই রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন সফর ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির মাধ্যমে রাজশাহীবাসীর স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এদিকে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনসহ নব বধূর সাজে সেজেছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন। নতুনের মত ঝকঝকে-তকতকে করে ফেলা হয়েছে গোটা রেলওয়ে স্টেশন।

আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে স্টেশনের আনাচে-কানাচে। আর সকাল থেকেই ভির লক্ষ্য করা যাচ্ছে দর্শনার্থীদের।  স্বপ্ন পূরণের ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে রাজশাহীতে পৌছেচেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার রাত পৌনে ১০টায় ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে রাজশাহীতে ফিরেন তিনি। স্টেশনে নেমে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন। কোথাও কোন কমতি আছে কিনা তা ঘুরে ঘুরে দেখেন। এ সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলামের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন ও অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন মেয়র।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত থেকে রেলমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্ত হবেন। এসময় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ট্রেনটি উদ্বোধনের পর রেলমন্ত্রী বেলা ১১টা ১০ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হতে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনযোগে ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ত্যাগ করবেন বলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়।

 

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল রাজশাহী থেকে ঢাকা বিরতিহীন ট্রেনের নাম দেয়া হয়েছে বনলতা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই অঞ্চলের মানুষের উপহারস্বরূপ দেওয়া বিরতিহীন ট্রেনটির নাম চূড়ান্ত করেছেন।

আর ট্রেনের উদ্বোধনী যাত্রায় যে কেউ বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন। এরপর ২৭ এপ্রিল থেকে নিয়মিত ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম জানান, ট্রেনটিতে যাতায়াতে প্রতিটি টিকিটের সাথে টিকিটের ভাড়া বাদেও খাবার জন্য অতিরিক্ত ১৮০ টাকা মাশুল বাধ্যতামূলক।

এতে দেখা যাচ্ছে, শোভন চেয়ারেই প্রতিটি টিকিটের মূল্য পড়ছে অন্তত ৫০০ টাকা। এ নিয়ে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের মধ্যে নানা কথা শুরু হয়েছে।

Image result for বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের আন্তঃনগর কোনো ট্রেনে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট সংযুক্ত হচ্ছে। এ কারণে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। স্টেশনে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ও যাত্রীরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রথমবারের মতো ট্রেনটিতে রিক্লেনার চেয়ার বসানো থাকবে। যেখানে পা এবং হেলান দেওয়ার আরামদায়ক সুবিধা রয়েছে। আর এসি বাথের কেবিনে বেডরেস্ট দেওয়া হবে। যা রাতে বিছিয়ে দিলে ছোট খাটের মতো হয়ে যাবে। এছাড়া কেবিনে ওপরের সিটে ওঠার জন্য স্টিলের মইয়ের বাদলে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী কোচ দিয়ে ট্রেনটি সপ্তাহে ছয়দিন চলবে। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে শুক্রবার। সিগন্যাল পাসিং দ্রুত শেষ হলে ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ট্রেনটির ভ্রমণ সময় হবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।

তবে দেশের প্রথম ও সর্বাধুনিক হাইস্পিড ট্রেন হচ্ছে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। কিন্তু রাজশাহী-ঢাকা রুটের জন্য এই একজোড়া ট্রেন পেয়েছে পুরনো দু’টি ইঞ্জিন। এগুলো ২০১৩ সালে ভারত থেকে আমদানি করা। এই ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। আর বনলতার সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ট্রেনটি আড়াই কিলোমিটার যাবে।

বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে এখন ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগে। এতে রাজশাহী-ঢাকা ট্রেন ভ্রমণে সময় বাঁচবে আড়াই ঘণ্টা। প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। বিরতিহীন চার্জ হিসেবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ভ্রমণকারীদের।

স/অ