রাণীনগরে ২১ মাস ধরে অবরুদ্ধ এক পরিবার

 

রাণীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ইটের প্রাচীরে প্রায় ২১ মাস ধরে অবরুদ্ধ এক পরিবার। নিজ বসত বাড়িতে ঢুকতে না পেরে পরিবারের লোকজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে এবং ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন অসহায় ওই পরিবারটি। ঘটানটি ঘটেছে উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম স্কুল মাঠ সংলগ্ন ঘোষগ্রাম শাহ্পাড়া গ্রামে। ঘটনাটি প্রায় ২১ মাস আগে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করার অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়ে বিচার না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ্য হয়ে ২১ মাস ধরে রিপন উদ্দিন শাহ্ ওরফে রিমন পরিবারের ১০-১২ সদস্যদের নিয়ে কষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদিকে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও বিচার না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্থ্য ওই পরিবারের সদস্যরা আত্নহত্যা করার হুমকি দিচ্ছে।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম স্কুল মাঠ সংলগ্ন ঘোষগ্রাম শাহ্পাড়া গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে রিপন উদ্দিন শাহ্ ওরফে রিমন ঘোষগ্রাম মৌজার ৪৮২ খতিয়ানে ৬১৬ দাগের তার পৈত্রিক সম্পত্তির ৩১ কাতে ৩ শতক জমির উপরে প্রায় ১০ বছর আগে টিন দিয়ে বাড়ি তৈরি করে। বাকি জায়গায় নানান জাতের গাছপালা লাগিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছিল। তার দাদী আম্বিয়া বেগম জীবনদশায় নাতী রিপন ও তার বোনদের গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে রাণীনগর সাব-রেজিস্টার অফিসে ৫১৯৩ নং দলিল মূলে ৩ শতক জমি লিখে দেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখল ও বসবাসের এক পর্যায়ে গত বছরের মার্চ মাসে রিপন শাহ্ রিমন তার পরিবারসহ আত্নীর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এই সুযোগে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক রিপনের পার্শবতী জিয়ার উদ্দিনের ছেলে প্রভাবশালী পল্লী চিকিৎসক আব্দুল বারিক সরদার তার ভাড়াটিয়ে লোকজন নিয়ে রিপনের বসত বাড়ির চারিদিকে ৫ থেকে ৬ ফিট উঁচু করে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এক কাপড়ে বের হওয়া রিপন উদ্দিন শাহ্ রিমন মই দিয়ে প্রাচীর টপকিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেও চারিদিকে ইটের প্রাচীর অবরুদ্ধ থাকায় তার নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে এবং ভাড়া বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সেই সময় ভুক্তভুগী রিপন বিষয়টি রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিক ভাবে জানালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আব্দুল বারিককে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ডেকে পাঠান। কিন্তু ইউএনও’র ডাকে প্রভাবশালী আব্দুল বারিক উপস্থিত না হয়ে বহিরাগত লোকজন নিয়ে প্রাচীরটি আরো মজবুত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এরপর থেকে ইউএনও এই বিষয়টি নিয়ে আর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। বিষয়টি রাণীনগর থানা পুলিশ জানালেও রহস্যজনক কারনে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভুগী রিপন উদ্দিন শাহ্ ওরফে রিমন জানান, প্রভাবশালী পল্লী চিকিৎসক আব্দুল বারিক সরদার তার বাহিনীদের নিয়ে রাতারাতি ইটের পাচীর দিয়ে আমাদের বাড়ির অবরুদ্ধ করেছে। আমরা প্রায় ২১ মাস আগে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেড়িয়ে এসেছি। এরপর থেকে আমাদের বাড়িতে আমরা আর বসবাস করতে পারিনি। সেই থেকেই আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে এবং ভাড়া বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোন বিচার পাইনি। পরিবারটি অবরুদ্ধ থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন রিপন ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক আব্দুল বারিক সরদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে সেটা মিথ্যা। দীর্ঘদিন আগে দিনে দিনে ওইসব জায়গা আমি কিনেছি এবং ক্রয়কৃত নিজের জায়গার উপর দিয়ে তিনি ইটের প্রাচীর দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

রাণীনগর থানার ওসি শাহিন আকন্দ বলেন, আমি এই থানায় নতুন যোগদান করেছি বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তবে একটু আগে বিষয়টি আমি জেনেছি। দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

স/জে