বগুড়া বন বিভাগের টেন্ডারে নওগাঁর ৩০০ গাছ নিধন!

রাণীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সিঙ্গাহার গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তার গাছ টেন্ডার দিয়েছে বগুড়া সামাজিক বন বিভাগ। আর ওই রাস্তার প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৩০০টি ইউক্লিপটাসের গাছ কাটে প্রভাবশালী এক ঠিকাদার। গাছগুলো কেটে ট্রাক বোঝায় করে নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ওই ঠিকাদারের লোকজন।

ঠিকাদারের নাম মো. মফিজুল ইসলাম। তিনি বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার চকসুখানগাড়ী এলাকার মেসার্স নজরুল ইসলাম ’ছ’ মিল এন্ড কাঠঘর’র মালিক। সুষ্ঠু তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বগুড়ার সামাজিক বন বিভাগ থেকে আদমদিঘী উপজেলার বন্তইর এলাকার কিছু গাছ ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী টেন্ডার বিক্রির আহ্বান করে। ওই গাছগুলো বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার চকসুখানগাড়ী এলাকার মেসার্স নজরুল ইসলাম ’ছ’ মিল এন্ড কাঠঘর’র মালিক মো. মফিজুল ইসলাম টেন্ডারে পান। টেন্ডারে উল্লেখ করা হয়েছে, আদমদিঘী উপজেলার বন্তইর হইতে রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তার গাছ টেন্ডার দেওয়া হয়। এরমধ্যে রাণীনগর উপজেলার সীমানার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার গাছ পড়েছে। ওই গাছগুলো কাটার পাশাপাশি ঠিকাদার মফিজুল ইসলাম স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রাণীনগর উপজেলার আবাদুপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সিঙ্গাহার গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৩০০টি ইউক্লিপটাসের গাছ কাটেন। স্থানীয়রা রাণীনগর উপজেলা অংশের গাছ কাটতে বাধা দিলে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাছগুলো কেটে ট্রাক বোঝায় করে নিয়ে চলে যান।

এছাড়াও কর্তনকৃত কিছু গাছ সেখানে পড়ে আছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন- রাণীনগর উপজেলার সীমানার গাছ কিভাবে বগুড়া সামাজিক বন বিভাগ টেন্ডার দিতে পারে ও ঠিকাদার কিভাবে গাছ কেটে নিয়ে যেতে পারে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আবাদপুকুর এলাকার অনেকেই জানান, অনেক দিন আগে আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ থেকে আদমদিঘী উপজেলা সীমান্ত এলাকায় গাছগুলো লাগানো হয়। গাছগুলো বেশ মোটা হয়েছে। গত ২-৩ দিন আগে থেকে রাণীনগর উপজেলার অংশের গাছগুলো কাটা শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। টেন্ডার অনুযায়ী পূর্বে আদমদিঘী উপজেলার অংশের গাছ কাটা শেষ হলেও রাণীনগর উপজেলার মধ্যে থাকা প্রায় ৩০০টি ইউক্লিপটাস গাছ এলাকার প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় কাটেন তারা। এ সময় অনেকেই বাধা দেয়। কিন্তু তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

এ ঘটনায় রাণীনগর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। গাছ কাটার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মুঠোফোনে বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে প্রথমে জানতে পারিনি। পরে বিষযটি জানতে পারি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার মফিজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, এটা আমার কাছ থেকে না জেনে বগুড়া বন বিভাগ থেকে জানেন।

এ ব্যাপারে বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের প্রধান সহকারী কায়রুন নাহার মুঠোফোনে বলেন, ওইটা টেন্ডার দেওয়া হয়েছিলো। এ বিষয়ে মাঝখানে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। সেটা ঠিক হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে এ ব্যাপারে নওগাঁ বন বিভাগ কর্মকর্তা মেহেদী জামান জানান, রাণীনগর উপজেলায় আমাদের যে দায়িত্বে আছেন, তাকে এ বিষয়ে সব বলেছি। সে আমাকে তথ্য দিলে আপনাকে জানাবো। তার কাছে রাণীনগর উপজেলার গাছ বগুড়া সামাজিক বন বিভাগ টেন্ডার দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি রাণীনগর কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলতে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

রাণীনগর উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বন বিভাগের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের কাছে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করেন। পরে আদমদিঘী কর্মকর্তার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমি জানার পর লোক পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স/শা ওই