রাণীনগরে পিআইও’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মেহেদি হাসান দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর যাবৎ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এত বছর একই উপজেলায় কর্মরত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে নানান প্রকল্পে বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও লুটপাটের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তারপরও রহস্যজনক কারণে অদ্যবদি স্ব-পদে বহাল থাকায় ‘কী মধু আছে রাণীনগরে? এমন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে সচেতন মহলে।

এ কর্মকর্তার কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচির কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অদম্য গতি স্বাভাবিক রাখতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসানকে অন্যত্র বদলীর জন্য রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলালসহ চারজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একযোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৭ বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্পে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির বিশাল আমলনামা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ‘জমি আছে, ঘর নাই’ আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় রাণীনগর উপজেলায় ৩৮৫টি আধাপাকা ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ টাকা। তার পছন্দের মিস্ত্রি ও লোকজন নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরী করায় ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই পিলার ভেঙে যাওয়া, দরজা-জানালার কাঠে ফাটল, ঘরের টিনের ছাউনিতে রুয়ার পরিবর্তে বাটাম (পাতলা কাঠ) ব্যবহার করা হয়। ঘর নিমার্ণের আগে যাদের জমি আছে, ঘর নাই, তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে উঠে। এছাড়াও ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পে ১৭টি কাজ এবং গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) প্রকল্পে ৩৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব বরাদ্দকৃত অর্থ মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান, শ্মশান সংস্কার, রাস্তা সংস্কার, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার, স্ট্রীট লাইট ও সোলার প্যানেল বসানোর কাজে স্ব-স্ব এলাকার প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। কিন্তু এসব উন্নয়ন বরাদ্দের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা তো দূরের কথা প্রকল্প সভাপতিরা পিআইও মেহেদী হাসানের সাথে যোগসাজশ করে লোক দেখানো দায়সাড়া কাজ করে সমুদয় বরাদ্দ হরিলুট করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বদলী সংক্রান্ত লিখিত আবেদনে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল উল্লেখ করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেহেদি হাসান গত ২০১২ সাল ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অদ্যাবধি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর যাবৎ কিভাবে একই উপজেলায় থাকতে পারেন এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। রাণীনগর উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় একাধিকবার তার বদলীর অর্ডার হলেও কর্মস্থল ত্যাগ তো দূরের কথা বার বার বদলী অর্ডার রহস্যজনক কারণে স্থগিত হয়ে অদ্যবদি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ সম্প্রতি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন-১) ড. মো: হাবিব উল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসানকে জনস্বার্থে এবং প্রশাসনিক কারণে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় যোগদানের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে এখনও রাণীনগরে নিয়মিত অফিস করছেন। ‘কি মধু আছে রাণীনগরে? এমন সব প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা সমালোচনা চলছে সচেতন মহলে এবং উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাঝেও চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাই প্রশাসনিক কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার স্বার্থে মেহেদি হাসানকে অন্যত্র বদলীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর সম্প্রতি একটি লিখিত আবেদন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল।

পিআইও’র বদলীর ওই আবেদনে সর্মথন দিয়ে সিলমোহরসহ স্বাক্ষর করেছেন, রাণীনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু, বড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান সফিউল আলম, কালিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু, পারইল ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, তার বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়ে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিখিত আবেদন করেছেন তা তিনি জানেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ইউপি চেয়ারম্যানদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা শক্রতামূলক এ অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। আর কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে যোগদানের যে আদেশ হয়েছিলো তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষই স্থগিত করেছেন।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, সরকারী কর্মকর্তা একটানা প্রায় ৭ বছর ধরে একই উপজেলায় কিভাবে চাকরী করেন। সরকারী কর্মকর্তারা একই স্টেশনে বেশী দিন চাকরি করলে তারা দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পিআইও মেহেদী হাসানের বেশ কয়েকবার বদলির আদেশ আসলেও রহস্যজনক কারণে তা তিনি স্থগিত করিয়ে নেন। তার অনিয়ম, দূর্নীতির কারণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে আমরা তাকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যত্র বদলির আবেদন করেছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

স/শা