রাণীনগরে দুর্নীতির অভিযোগে মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে অব্যাহতি

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মহিলা (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৬ এপ্রিল) কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

একই পত্রে মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার ও কলেজের যাবতীয় দায় দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

অব্যাহতি পত্র সূত্রে জানা যায়, রাণীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতিত সাময়িক বরখাস্তকৃত এক প্রভাষকের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সভাপতির জনুমোদন ব্যতীত এডহক কমিটির প্রস্তাব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেছেন ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে অধ্যক্ষের জবাব দাখিলে সতর্ক করে ক্ষমা প্রদর্পন পূর্বক সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর আবারও কলেজের প্রভাষক হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ সুজিত চন্দ্র সাহা ও প্রভাষক ব্যবস্থাপনা বিভাগ সনজীব কুমার সাহার বেতন ভাতার কাগজপত্র গ্রহণ পূর্বক দীর্ঘদিন যাবৎ তা এমপিও ভুক্তির নিমিত্তে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ না করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। এছাড়া তাদের নিকট থেকে প্রথমে ১০ লাক্ষ টাকা ঘুষ (উৎকচ) গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে আবার ৬ লাক্ষ টাকা প্রদানের জন্য বাব বার মৌখিকভাবে চাপপ্রয়োগ করেন।

আরও জানা যায়, অধ্যক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ মার্চ কলেজের সভাপতিসহ উপজেলা কৃষি অফিসার কলেজের সংশ্লিষ্ঠ রেজিষ্টারপত্র যাচাই কালে জানতে পারে যে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে কলেজের আদায়ী রেজিষ্টার অনুয়ারী মোট আদায়ী অর্থের পরিমান ১৪ লাক্ষ ৪৭ হাজার ৯৫২ টাকা। তার মধ্যে অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে রাণীনগর সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি শাখা হিসাব নম্বরে ৪ লাক্ষ ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা এবং সোনালী বাংক শাখায় হিসাব নম্বরে ৩ লাক্ষ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ৭ লাক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। অবশিষ্ট ৬ লাক্ষ ৮২ হাজার ২ টাকা কলেজের হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হয়েছে।

এবিষয়ে গত ৩১ মার্চ অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানো হলে অধ্যক্ষ গত ৪ এপ্রিল জবাব দাখিল করেন। অধ্যক্ষের দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় মিরাজুল ইসলামকে ৬ এপ্রিল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। আবার একই পত্রে কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার ও কলেজের যাবতীয় দায় দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর মহিলা (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে অব্যাহতি পত্রের চিঠি নিয়ে এসেছিল। আমি চিঠি গ্রহণ করিনি।

রাণীনগর মহিলা (অনার্স) কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষকে বার বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। তারপরও তিনি এসব দুর্নীতি থেকে সরে আসেননি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর অনিয়ম-দুর্নীতি ও কলেজের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ৩১ মার্চ অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অধ্যক্ষের দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় মিরাজুল ইসলামকে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। অব্যাহতি পত্র পিয়নের মাধ্যমে মিরাজুল ইসলামের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, একই পত্রে কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার ও কলেজের যাবতীয় দায় দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জি/আর