রাণীনগরে নিজেরাই টাকা তুলে দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ করছেন গ্রামবাসী

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর:


নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের নিচ তালিমপুর গ্রাম থেকে কাঠালগাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মান করছেন গ্রামবাসীরা। সমাজের ধনী-গরীব মিলে নিজেরাই চাঁদা ভাঙ্গন করে প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মান কাজ শুরু করেছেন। রাস্তা নির্মানে দীর্ঘ দিনেও কেউ এগিয়ে না আসায় সেচ্ছায় শ্রম ও নগদ অর্থ দিয়ে রাস্তা নির্মানের উদ্যোগ নেন গ্রামের লোকজন।


জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত নিচ তালিমপুর গ্রাম। গ্রামের সাথেই একাকার হয়ে আছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রাম। এই দুই গ্রাম মিলে প্রায় ৭শ’ পরিবারের বসবাস। গ্রাম থেকে মাঠের মধ্য দিয়ে জমির আইলের মতো একমাত্র সরু রাস্তা মিলিত হয়েছে আবাদপুকুর-বগুড়া রাস্তার চয়েনের মোড়ের পূর্ব দিকে কাঠালগাড়ী নামকস্থানে। দীর্ঘ দিন থেকে সরু রাস্তায় চলাচল করলেও রাস্তাটি পুরোপুরি নির্মান করার জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিয়েও কোন ফল পায়নি গ্রামবাসি। গত ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে ভ্যান চলার মতো মাটি কেটে রাস্তা নির্মান করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বর্ষার পানিতে আবারো জমির সাথে মিশে আইলের মতো হয়ে গেছে রাস্তাটি। ফলে ওই গ্রাম দুইটি থেকে ধান, চালসহ কৃষিপন্য ও বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে দুই কিলোমিটার রাস্তা পারি দিতে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।

অবশেষে ভিক্ষুক, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, দিনমজুর, ধনী-গরীব মিলে ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে সার্মথ অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিজেরাই চাঁদা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মান কাজ শুরু করা হয়েছে। স্কেবেটার মেশিনের পাশা-পাশি গ্রামের লোকজন মিলে সেচ্ছায় শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মান করছেন।


ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আহাদ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাঁদা পানি পারি দিয়ে চলাচল করতে করতে জীবনটা কেটে গেল! কিন্তু আমাদের ভোগান্তি নিরসনে কেউ এগিয়ে আসলনা।

গ্রামের জিল্লুর রহমান, ছামসুজ্জামান, আমানুর রহমান স্বপন, মিজানুর রহমানসহ গ্রামবাসিরা জানান, গ্রাম থেকে বের হবার একমাত্র এই রাস্তা। সারা দেশে বিভিন্ন রাস্তা ঘাট পাকাকরণ হলেও আমরা এমন দুর্ভাগ্য যে মাটি কেটেও কেউ রাস্তা নির্মান করে দেয়নি। ধান-চালসহ বিভিন্ন কৃষিপন্য ও মালামাল পরিবহনে আমাদের অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ছেলে মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে হাটু পানি ভেঙ্গে দুই কিলোমিটার রাস্তা পারি দিয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করে। গ্রামের কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসি মিলে টাকা তুলে নিজেরা শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মান করছি। রাস্তাটি পূর্ণ নির্মান ও পাকাকরণ করে দুই গ্রামের লোকজনের দীর্ঘ দিনের দূর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, গত চার বছর আগে রাস্তাটির কিছুটা কাজ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় চার বার প্রকল্প আকারে দিয়েও কাজ হয়নি। তার পরেও চেষ্টা করছি রাস্তা নির্মান ও পাকা করণের জন্য।


এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) শাইদুর রহমান মিঞা বলেন, গ্রামীন রাস্তাঘাট নির্মান, পাকাকরণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রকল্প আকারে দিতে হয়। যেহেতু গ্রামবাসী মাটি কেটে রাস্তা নির্মান করছেন সেহেতু রাস্তার কাজ একধাপ এগিয়ে রইল। পাকা করণের জন্য প্রকল্প আকারে দিলে অবশ্যই তা নির্মান বা পাকা করণ করা হবে।

গ্রামবাসীর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা নির্মান বা পাকাকরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

স/অ

আরো পড়ুন …

করোনা : রাজশাহী বিভাগে আরো ৫ জনের মৃত্যু, মোট শনাক্ত ৪৩২৭