করোনা রোগীদের সেবায় চারঘাটের চিকিৎসক আতিক, ঈদও কাটিয়েছেন হাসপাতালে

মিজানুর রহমান, চারঘাট:
নেই কোনো ভ্যাকসিন কিংবা কার্যকরী ওষুধ। তবুও কোভিড-১৯ নামের অদৃশ্য এক প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে গোটা পৃথিবী। এই ভাইরাসে বহু মানুষের প্রাণহানির যেমন শঙ্কা বাড়িয়েছে, তেমনি কিছু মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার গল্প আশা জাগিয়েছে মনে।

জীবন বাজি রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। এতে অনেক চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার পরেও শেষ ভরসা স্থল চিকিৎসক।

স্থানীয়রা জানান, করেনা ভাইরাসে যখন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন তখন মনের মাঝে প্রবল শক্তি জোগান দিয়ে পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকলেও করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। তবে তাদের মধ্যে করোনাযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করেনা পার্সন নবীণ চিকিৎসক ডা: আতিকুল হক অন্যতম।

পরিবারের সদস্যদের মায়া ত্যাগ করে রাত-দিন তারা কাজ করছেন দেশের তরে, মানবতার তরে। তবে করোনা যোদ্ধাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মনে যতটা না ভয় কাজ করে, তারচেয়েও বেশি গর্ববোধ করেন এলাকাবাসীসহ পরিারের সদস্যরা। কারণ ডা: আতিকুল হকের জন্ম, বেড়ে উঠা, লেখা পড়া সব কিছুই চারঘাটের মাটিতে।

মার্চ মাসের শেষের দিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে হাসপাতালের কোয়ার্টারে থেকে রাত দিন সমান করে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. আতিকুল হক। ডা: আতিকুল হক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৯তম ব্যাচের স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা।

ডা: আতিক চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের আইসোলেশন সেন্টারে দায়িত্ব পালন করছেন। মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে অদ্যবধি আইসোলেশন সেন্টারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেখভাল করেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনিক কিছু কাজও করতে হচ্ছে তাকে। রোগীদের সঙ্গে সেখাইে তাদের খাওয়া-ঘুম সবকিছু হয়েছে।

এছাড়াও গত রমজানের ঈদও কেটেছে হাসপাতালের কোয়ার্টারে। আইসোলেশন সেন্টারসহ হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা রোগীদের সঙ্গে। হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০ মিনিটির রাস্তা পার হলেই ডা: আতিকুল হকের নিজ বাড়ী শিমুলিয়া গ্রাম। সেখানে রয়েছেন বাবা, মা ভাই বোনসহ আত্মীয় স্বজন। তার পরেও শুধু সেবার কাজে নিয়োজিত থাকায় বাড়ীতে যেতে চাননি তিনি।

এমন একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনে গর্ববোধ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চারঘাটের সন্তান হয়েও নিজ বাড়ীতে না গিয়ে হাসপাতালের কোয়ার্টারে থেকে প্রাণঘাতি করোনাযুদ্ধে অবিচল পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নবীণ চিকিৎসক আতিক। এতে অন্য চিকিৎসরাও উৎসাহিত হবেন বলে আশা করেন তিনি।

চিকিৎসক আতিক বলেন, আমার পেশাটি হচ্ছে সেবার পেশা। তার পরেও আমি চারঘাটের সন্তান। তাই আমি চাই চারঘাটের মানুষের সেবা করার জন্য জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করতে। বাবা মায়ের সঙ্গে এক সঙ্গে বসে খেতে ইচ্ছা থাকলেও পারিনি মানুষের সেবার কাজে থাকতে। তবে আমি চাই আগে মানুষের সেবা করতে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল চিকিৎসকই যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এদের মধ্যে নবীন চিকিৎসক হিসেবে ডা: আতিক যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাতে চারঘাটের মানুষ ব্যাপক উপকৃত হচ্ছেন।

স/অ