রাণীনগরে জনপ্রিয় হচ্ছে কমিউনিটি বীজতলা

সুকুমল কুমার প্রামানিক:
নওগাঁর রাণীনগরের কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে কমিউনিটি বীজতলা। আর এই জন্য কৃষকরা বর্তমানে বোরো চাষের জন্য কমিউনিটি বীজতলা পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই বীজতলার চারা জমিতে রোপন করতে কৃষকদের সময় ও খরচ কম লাগছে। চলতি বোরো মৌসুমে এই কমিউনিটি বীজতলার চারা জমিতে রোপন করে অধিক ফলন পাওয়ার আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাণীনগর উপজেলায় ১৮ হাজার ৪শ ২৫হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। বোরো আবাদের জন্য উপজেলার মোট ৯শত ২৫হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে এরমধ্যে আদর্শ কমিউনিটি বীজতলা ৫শ হেক্টর। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮টি আদর্শ বোরো কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় ১২০টি সিআইজির (কমন ইন্টারেষ্ট গ্রুপ) মধ্যে খট্টেশ্বর রাণীনগর, পারইল, ছয়বাড়িয়া, একডালা, এনায়েতপুর, কুজাইল, বেতগাড়ীসহ মোট ১৮টি ফসল সমবায় কৃষক গ্রুপকে বাছাই করা হয়েছে। এরপর এসব গ্রুপকে কমিউনিটি বীজতলা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

কয়েজন কৃষক বলেন, ইতিপূর্বে তারা ইচ্ছে মতো যেখানে-সেখানে অল্প জায়গায় বীজতলা তৈরি করতেন। বীজতলায় এক সঙ্গে অনেক বীজ ছিটিয়ে দিতেন। প্রাচীন এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে তাদের অনেক বেশি খরচ হতো। বীজতলার দেখভাল করাও কঠিন হতো। সঠিক পরিচর্যার অভাবে চারার মানও খুব খারাপ হতো। কিন্তু চলতি বছর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এলাকার কৃষকরা একত্রিত হয়ে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বড় জায়গায় কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করেছেন। এতে তারা অনেক উপকৃত হয়েছেন।

কাশিমপুর ইউনিয়নের চারাপাড়া গ্রামের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষক মো: আলমগীর হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, প্রশিক্ষণে আমি কমিউনিটি বীজতলার জমিতে ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করা এবং পাশাপাশি ২ বেডের মাঝখানে ২৫ সেঃ মিঃ নালা রাখা, এরপর বাঁশের লাঠি দিয়ে বেড সমান করা, দু’ বেডের মাঝখানের নালা যেমন সেচের কাজে লাগে তেমনি অতিরিক্ত পানি নিকাশ, সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আন্তঃপরিচর্যা করা বিষয়ে জানতে পেরেছি। এছাড়া বীজতলায় বীজ ফেলার আগে অব্যশই বীজ শোধন করে নেওয়ার পদ্ধতি শিখেছি এই প্রশিক্ষণ থেকে। এই পদ্ধতি অনুসরন করায় এবার প্রচন্ড শৈতপ্রবাহ হলেও চারার কোন ক্ষতি হয়নি। তবে অন্যান্য বীজতলার চারা শৈতপ্রবাহে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

উপজেলার বেতগাড়ী গ্রামের কৃষক শেখ আমজাদ হোসেন বলেন, বীজতলায় প্রতি বর্গমিটারে ১০০ গ্রাম অংকুরিত বীজ বপন করা হয়। বীজ গজানোর ৪-৫ দিন পর বেডের ওপর ২-৩ সেঃ মিঃ পানি রেখে আগাছা গজানো বাধাগ্রস্ত করা হয়। প্রাচীন পদ্ধতিতে যে জায়গায় ৫০ কেজি বীজ প্রয়োজন হতো সেখানে এখন কমিউনিটি পদ্ধতিতে ৩৫ কেজি বীজ লেগেছে। এতে করে আমার অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এই বীজতলার প্রতিটি চারাই স্বাস্থ্যবান, সবল, সতেজ ও রোগমুক্ত যা জমিতে রোপণ করলে শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন কমিউনিটি বীজতলার যাবতীয় উপকরণ কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিদিন এলাকার অনেক কৃষক এই বীজতলা দেখতে আসছেন।

উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব এ প্রতিবেদককে জানান, এই ইউনিয়নের চারাপাড়া গ্রামে পুরুষ সিআইজি সমবায় সমিতি এবং এনায়েতপুর মহিলা সিআইজি সমবায় সমিতির সদস্যদের দিয়ে এককভাবে ১২টি আদর্শ কমিউনিটি বোরো বীজতলা স্থাপন করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই বিষয়ে আমি কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে আসছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় এই কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। কৃষকেরা প্রাচীন যে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতেন তাতে যেমন বীজ বেশি লাগতো, তেমনি এতে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ বেশি হতো। কিন্তু কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করায় ৫০-৬০ শতাংশ বীজ কম লাগে এবং চারাগুলো স্বাস্থ্যবান, সবল, সতেজ ও রোগমুক্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, এই পদ্ধতিতে অল্প বয়সের চারা জমিতে রোপন করা যায় এতে চারার কুশির সংখ্যা বেশি থাকে এবং ধানের উৎপাদন বেশি হয়। সব মিলিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ উপজেলার কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। আশা করা যায় আগামী বছরগুলোতে এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। আরো বেশি কৃষক এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।

স/শ