রাজশাহী-৫ আসনে মুখোমুখি আইনী লড়াইয়ে বিজয়ী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী

মইদুল ইসলাম মধু:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া দুর্গাপুর) আসনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামীলীগ মনোনিত ডাঃ মনসুর রহমান ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মন্ডল চুড়ান্ত লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যালটের লড়াইয়ের আগে দু’জনই আইনী লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে চুড়ান্ত লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। তাদের সামনে নির্বাচনী মাঠে ব্যালটের লড়াই এখন সময়ের দাবী মাত্র।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন, আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ডাঃ মনসুর রহমান (নৌকা), জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল (ধানের শীষ), জাতীয় প্রার্থী মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবুল হোসেন (লাঙ্গল), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের রুহুল আমীন (হাত পাখা) ও জাকের প্রার্টির শফিকুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)। তবে এ আসনের সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন মুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কা প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ডাঃ মনসুর রহমান। তিনি প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই বিরামহীনভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার প্রতিপক্ষ বিএনপি এ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয় ৪ জনকে। তাদের মধ্যে দলের প্রধান প্রার্থী নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে ঋণ খেলাপি ও তথ্যগোপনের দায়ে প্রার্থীতা বাতিল হলে চুড়ান্ত মনোনয়ন পান বিকল্প প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি চুড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিলও করেন। তবে নাদিম মোস্তফা ইসিতে আপিলের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পেলে বিএনপি নজরুল ইসলাম কে পরিবর্তন করে এ আসনে নাদিম মোস্তফাকে চুরান্ত প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয়। এতে নজরুল ইসলামকে প্রতিক বরাদ্দ না দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা গত ১০ ডিসেম্বর নাদিম মোস্তফাকে ধানের শীষ প্রতিক বরাদ্দ দেন। প্রতিক পেয়েই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। এদিকে দলের চুড়ান্ত মনোনয়ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিলের পর তাকে দলীয় প্রতিক না দিয়ে অন্য প্রার্থীকে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ১৬ (১) (২) (৩) ধারার পরিপন্থী দাবী করে নজরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে নাদিম মোস্তফার প্রতিক বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের শুনানি শেষে নাদিম মোস্তফার ধানের শীষ প্রতিক বাতিল করেন। নির্বাচনী প্রচারণার ৮ দিনের মাথায় বিএনপির দুই নেতা আদালতে আইনী লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে প্রার্থী জটিলতায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে হতাশায় ভোগেন। ভোটের মাঠে আ.লীগ উজ্জিবীত থাকলেও নিরব দর্শক ছিলেন বিএনপি। এতে সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মনসুর রহমান ও তার সমর্থকরা।

সুত্র মতে, এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী মনসুর রহমান নাদিম মোস্তফার বেসিক ব্যাংকের ঋণ খেলাপি থাকার পরও তার প্রার্থী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০ ডিসেম্বর আপিল আবেদনে উচ্চ আদালতের দ্বৈত বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে নাদিম মোস্তফার প্রার্থীতা স্থগিত করে রায় দেন। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর নাদিম মোস্তফা উচ্চ আদালতের দুটি রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার কোর্টে আপিল আবেদন করলে চেম্বার কোর্টের বিচারক উচ্চ আদালতের রায় দুটি বহাল রেখেছেন। একই দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে ধানের শীষ প্রতিক বরাদ্দ দেন। প্রতিক পেয়েই নজরুল ইসলাম প্রচারণায় নেমেছেন। এতে আইনি লড়াইয়ে মনসুর রহমান ও নজরুল ইসলাম মন্ডল দু’জনই বিজয়ী হয়েছেন।

আইনী লড়াইয়ের পর আগামী ৩০ ডিসেম্বর দু’জনের মধ্যে ব্যালটের লড়াই হবে। যদিও দুই প্রার্থীই নিজেদের জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করেছেন। তাই লড়াইয়ের চুরান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পুঠিয়া দুর্গাপুর এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১ হাজার ৭৭৮ জন।
স/শ