রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ: চাকরি স্থায়ীকরণে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর সড়ক ও জনপথ বিভাগে কর্মকর্তা মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের সার্ভিস বুক ঠিক করার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ১০০ জন কর্মচারীর নিকট অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ কাজের নাম করে। আর দীর্ঘদিন পরে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ভূক্তভোগীরা নিরবে সেই টাকা দিতে বাধ্যও হচ্ছেন। সর্বশেষ ৩২ জনের নিকট থেকে নেওয়া হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে। এই ৩২ জনের নিকট থেকে এর আগেও দুই ধাপে আরও অন্তত ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ওই দুই বারো কোনো প্রতিবাদ না করেই টাকাগুলো দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। আর সেই সুযোগে একের পর এক নানা ফন্দি এটে চাঁদাবাজি করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের উচ্চমাণ সহকারী জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

 

এদিকে বুধবার ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে সড়ক ভবনে আবারো কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক বসেন মামলার খরচ হিসেবে চাঁদা উত্তোলনের জন্য। অথচ এর আগে দফায় দফায় রাজশাহী থেকেই অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছে মামলা চালানোর জন্য। কিন্তু আবারো একই অজুহাতে কর্মচারীদের নিকট থেকে চাঁদা উত্তোলনের ফন্দি চলছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই দপ্তরের শ্রমিক কর্মচারীর সভাপতির সঙ্গে আঁতাত করে স্থায়ীকরণ হওয়া কর্মচারীদের নিকট থেকে তিন ধাপে প্রত্যেকের নিকট থেকে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে সার্ভিস বুক ঠিক করার নামে। উচ্চ আদালত ও সরকারের নির্দেশক্রমে সড়ক ও জনপথ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক মজুরীভিত্তিক কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে এই বিভাগের অন্তত ১০০ জন জৈষ্ঠ্য কর্মচারীদের প্রথম ধাপে চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে। পরবর্তিতে আরও কয়েকজন রয়েছেন সেই তালিকায়। আর এটি করতে গিয়েই দীর্ঘদিনের সার্ভিস বুক ঠিক করার নামে একেক জনের নিকট থেকে তিন ধাপে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩২ জনের নিকট থেকে আদায় করা হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমার চাকরি আছে আর মাত্র কয়েক বছর। এতোদিন দিন এনে দিন খেয়েছি। এখন সুখের নাগাল দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সার্ভিস বুক ঠিক করার জন্য যেভাবে ধাপে ধাপে টাকা দিতে হচ্ছে, সেটি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। তার পরেও বাধ্য হয়ে সেই টাকা দিতে হচ্ছে।’

আরকে কর্মচারী বলেন, ‘হিসাব রক্ষণ অফিসের নাম করেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। আবার কাগজপত্র ঠিক করার নাম করেও নেওয়া হয়েছে। বারে বারে টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু উপায় নাই, তাই দিতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে যদি এই সময়ে এসে আমার চাকরিটি স্থায়ীকরণ বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে আবার বিপদে পড়বো।’

এদিকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই কর্মচারীদের নিকট থেকে টাকা আদায়ের জন্য অলিখিত তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। যে কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রেজায় করিম বুলবুল। অপর দুজন হলেন ইউনিয়নের আরেক সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং উচ্চমাণ সহকারী জামাল উদ্দিন। মূলত সার্ভিস বুক ঠিক করার কাজটি করছেন জামাল উদ্দিনই। আর তিনিই বুলবুল ও রফিককে হাত করে ওই টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চমাণ সহকারী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। কর্মচারীদের সার্ভিস বুক ঠিক করে দিতেও আমি বাধ্য নয়। কাজেই টাকা আদায়ের বিষয়টিও মিথ্যা।’

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রেজায় করিম বুলবুল বলেন, ‘মামলা চালানোর জন্য কিছু টাকা তোলা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো এখনো পুরোপুরি আদায় হয়নি এ কারণে আবারো মামলা করতে হতে পারে। তাই কিছু টাকা সামনে তোলা হবে। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি ঠিক নয়।’

স/আর