রাজশাহী শেখ রাসেল শিশুকেন্দ্র থেকে ফের পালাল ৩ শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ফের তিন শিশু পালিয়ে গেছে। আজ বুধবার ভোর রাতের দিকে তারা এই কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তবে দুপুরের দিকেই পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

এর আগে, গত ১৯ জুন রাজশাহী শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে দুই শিশু নির্যাতনের ভয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। পরে দুইদিন পরে তাদের খোঁজ মেলে। এ নিয়ে হুলস্থুল সৃষ্টি হয়।

এই তিন শিশু হলো, মো. কাউসার আলী (৭), মো. শিপন (৮) এবং মো. আলী রাজ। এদের মধ্যে কাউসার আলী নগরীর তেরোখাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। সে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে শিশু কেন্দ্রটিতে থাকতে শুরু করে। শিপন ভর্তি হয় গতবছরের মার্চে। তখন পুনর্বাসন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় শিপনের সন্ধান জানার জন্য জিডি করা হয়। কিন্তু আজো তার কোনো স্বজনের খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ। আলী রাজ দিন চারেক আগে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি হয়।

শিশুকেন্দ্র’র তথ্যমতে, বর্তমানে শিশুকেন্দ্রটিতে ২শ শিশু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একশ জন। যার মধ্যে ৪০জন ছেলে ও ৬০জন মেয়ে।

এ ঘটনার পর পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই তিন শিশুকে খুঁজতে বের হন। দুপুরের দিকে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে তাদেরকে শিশুকেন্দ্রে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে এই শিশুরা কেন পালিয়েছিল কিংবা আসলেই পালিয়েছিল কিনা সে ব্যাপারে ওই শিশুদের অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, শিশুকেন্দ্রের কার্যক্রম ও প্রদত্ত সেবা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে- এখানকার শিশুদের মানসিকভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি করা হয় শারীরিক নির্যাতনও। এমনকি বেশ কিছুদিন আগে শিশুদের বরাদ্দ নিয়ে অনিয়ম এবং শিশুদের অভিভাবকদের নিকট থেকে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রটির উপপ্রকল্প পরিচালক নূরুল আলম প্রধানের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে কালের কণ্ঠে দুটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্তে নামে সমাজসেবা অধিদপ্তর। নূরুল আলম প্রধানে অনিময়-দুর্নীতি সম্পর্কে শিশু কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লিখিতভাবে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন। এরপর তদন্তে বেরিয়ে আসে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুনর্বাসন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, এখানকার অধিকাংশ কর্মকর্তারাই তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে উদাসীন। শিশুদেরকে নানাভাবে নির্যাতনও করা হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ভঙ্গুর অবস্থা। এর আগেও শিশু পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়নি। অবস্থা এমন যে, সামান্য কিছুর লোভ দেখিয়েই এখান থেকে শিশু বের করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেও কোনো লাভ হয়নি।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির উপপ্রকল্প পরিচালক নূরুল আলম প্রধানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত লোকবলের সংকট রয়েছে। এখানে ২৫টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৩জন। এজন্য কর্মরতাদরকে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হচ্ছে। ফলে তাদের দায়িত্ব পালনে হয়ত কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু এখানকার সবাই শিশু তাই তাদের সব রকম চাহিদার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

তবে তিন শিশু পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন নূরুল আলম প্রধান। তিনি বলেন, ওই শিশুরা কোথাও পালিয়ে যায়নি। তারা না বলে বের হয়ে গিয়েছিল। দুপুরের দিকে আবার ফিরে এসেছে।

স/অ