নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত রোগী এখনো চিহ্নিত হয়নি বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন খোদ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, যেহেতু বিদেশষ ফেরতদের চিহ্নিত করা যায়নি এবং হোম কোয়ারেন্টিনে আনা যায়নি সবাইকে, সে ক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী শহরকে লকডাউন না করলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবে। তখন হয়তো পরিস্থিতি খুবই বেগতিক হয়ে উঠবে। কাজেই এই অবস্থায় দ্রুত সমেয়র মধ্যে রাজশাহীকে লোক ডাউন করার প্রয়োজন বলেও মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গতকাল শনিবার এমনই মন্তব্য করেন রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কর্মী নাই যে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরী করতে পারবে। কাজেই প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন যে তালিকা তৈরী করে দিবে সেটি ধরেই আমরাই হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু এই কাজটি রাজশাহীতে হয়নি। ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে আছি আমরা। এর জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহীকে লোকডাউনের বিকল্প নাই। আর এটি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েও যেতে পারে।’
এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ১৫ দিনে রাজশাহী শহরে বিদেশ ফেরত প্রবাসীর ব্যক্তির এখন ৮০৯ জন। নগরীর ১২টি থানা এলাকায় রয়েছেন এই ব্যক্তিরা। আর গোটা জেলায় এখন অবস্থান করছেন আরো ১ হাজার ৩০৮ জন। কিন্তু গতকাল শনিবার রাজশাহী নগরী ও জেলা মিলে মোট হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ২২ জন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে গত বুধবার এই বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তালিকা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। জেলার এক হাজার ৩১৩ জনের মধ্যে গোদাগাড়ীতে রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। আর বাগমারায় রয়েছে ১৯৫ জন। তবে রাজশাহী নগরীর ৮০৯ জনের মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় এলাকাতেই রয়েছেন ৪০৮ জন। এর মধ্যে ২৭ জনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নাই।
এদিকে বিদেশ ফেরত ৮০৯ জনের তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা প্রায় ৭৮০ জনের খোঁজ পেয়েছি। এদের মধ্যে অনেকেরই ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর যাদের শেষ হয়নি, তাদের বাড়িতেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরা যেন বাইরে বের হতে না পারেন, সে জন্য আমরা নজরদারি রাখছি। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসান বলেন, ‘পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে এক হাজার ৩০৮ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এগুলো খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে ঢাকায় রিপোর্ট করতেও বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। তবে তালিকার অনেকরই ঠিকানা পাওয়া যয়নি।
এদিকে সরেজমিন রাজশাহীর রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, রাজশাহীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ এখনো অবাধে চলাফেরা করছেন। করোনা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও চলা-ফেরায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেন না। যদিও মুখে মাস্ক নিয়ে বের হচ্ছেন অনেকেই।
রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার চা দোকানদার রতন আলী বলেন, ‘মানুষ ভিড় করছে, চা পান করছে। তবে করোনা নিয়ে আলোচনা করছে ঠিকই। তবে আগের মতোই চলাফেরা আছে মানুষের। যদিও গত কয়েকদিন ব্যবসা কমেছে। কিন্তু মানুষের মাঝে তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’
এদিকে রামেক হাসপাতালে জ্বর, স্বর্দি ও কাশি আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হলেও তাদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের মাঝে এখন পর্যন্ত হ্যান্ডগ্লোভস আর মাস্ক ছাড়া অন্য কোনো পিপিই সামগ্রী অধিকাংশ চিকিৎসকদেরই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা। তার পরেও এসব রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস গতকাল বলেন, ‘আমাদের কাছে ৭০টি পিপিই সামগ্রী ছিলো। আজ (গতকাল) আরও কিছু পিপিসি সামগ্রী নেওয়ার জন্য লোক গেছে। তবে কতটি পাবো সেটি সন্ধ্যা নাগাদ বলতে পারবা। তবে জ্বর, স্বর্দী ও কাশি আক্রান্ত রোগী এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকই রয়েছে। এই সময়ে এই ধরনের রোগী আগে থেকেই একটু বেশি হয়। এবারো তাই হচ্ছে। তবে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী আমরা পাইনি।’