রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত পার করলেন ভর্তিচ্ছুরা

রাবি প্রতিনিধি:
রাত সাড়ে ৩টা। বেঞ্চে শুয়ে আছে এক ছেলে। পাশে মশার কয়েল জ্বলছে। পাশা থাকা একটি চেয়ারে মশার কামড়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে এক ভর্তিচ্ছু ছাত্রী। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে বললেন, ভাইয়া আমার বাসা সাতক্ষীরায়। লোকাল ট্রেনে আসছি। তাই আসতে দেরি হয়েছে। থাকার জায়গা নেই তাই এই দোকানদার ভাই জেগে আছে দেখে দোকানের পাশে আছি।
তাদের সঙ্গে আলাপ থেকে জানা যায়, ছাত্রীটি ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জান্নাতুল তাসনিম। সকাল ১১টায় তার পরীক্ষা। খুলনা থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় লোকাল ট্রেনে রাজশাহী আসছেন। সঙ্গে আছেন তার ভাই হবিবুর রহমান। সকাল ১১টায় খুলনার মহানন্দা লোকাল ট্রেনে চড়ে র‌ওনা দেন তারা। রাত ১২টায় রাজশাহী স্টেশনে পৌছায়। এতো রাতে কোথায় থাকবে? কার কাছে যাবে ভেবে নিরুপায় হয়ে ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরের সাদ্দামের দোকানের পাশে বসে ছিলেন। একপর্যায়ে রাত গভীর হতে শুরু করলে তাসনিমের ভাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাসনিমের মতো কয়েকশত শিক্ষার্থী গভীর রাতে ক্যাম্পাসের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর ঘিরে দাঁড়িয়ে কিংবা কেউ বসে আছে, কেউবা বুদ্ধিজীবী চত্বরে, অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে আবার অনেকের ঠাই হয়েছে কেন্দ্রীয় মসজিদে। অনেক অভিভাবক ঠাই নিয়েছেন তাদের পাশাপাশি এসব জায়গায়।
ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরের কাছে আসতেই কথা মাওলানা আবুল কালামের সঙ্গে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আসছেন ভর্তি পরীক্ষা দিতে। বাড়ি সিলেটে। তিনি জানতে চান, বাবা ওয়াশরুম টা কোথায়? নিরুপায় হয়ে উত্তর দিলাম, অ্যাংকেল আশপাশে ছাত্রীদের কোনো ওয়াশরুম নেই, হলে যেতে হবে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে বাসভাড়া করে আসছেন একটি কোচিংয়ের ৫০ জন মতো ভর্তিচ্ছু। তাদের মধ্যে কথা হয় স্বপ্না বিশ্বাস ও প্রাণকৃষ্ণ পণ্ডিতের সঙ্গে। তারা জানান, ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে হলে এতো কষ্ট করে আসা লাগতো না। ভোর সাড়ে ৪টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছেছেন তারা। বাসে ঘুমাতে পারেননি। জানেন না ক্লান্ত শরীরে পরীক্ষা কেমন হবে।
রাবিতে মেয়ে হীরামণিকে নিয়ে আসছেন অভিভাবক রুস্তম আলী‌। বাড়ি নরসিংদী সদরে। তিনি বলেন, গতকাল নরসিংদী সদর থেকে ৫টার দিকে র‌ওয়ানা দিয়েছি। এখানে পৌছেছি সোয়া ৪টায়। দীর্ঘ বাস যাত্রায় শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। সঙ্গে ওর মা‌ও আছে। মেয়েটার ৯টায় পরীক্ষা, জানি না ভালো হবে কিনা। ঢাবির মতো যদি রাবিতেও বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার আয়োজন করা হতো অনেক ভালো হতো তাদের জন্য ।