রাজশাহী নগরীতে সন্ধ্যা নামলেই যানজট, দুর্ভোগে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানী ঢাকাই শুধু নয় এখন রাজশাহীতে যানজটের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন দৈনন্দিন কাজে চলাচলকারী যাত্রীরা। বিশিষ্ঠজনরা বলছেন, এ যানজটের মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপ। বিশেষ করে এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে গত পাঁচ মাস থেকে।

রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর মোড়, সাহেব বাজার, জিরোপয়েন্ট, সোনাদিঘীর মোড়, রেলগেট বর্ণালী মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে এ যানজট বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ‍ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একইভাবে চলছে এসব অটোরিকশা। যানজট বেশি দেখা যাচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। এতে যানজট শুরু হলে সময়ের প্রতি যত্নশীল পথচারীরা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে বের হয়ে বেশি সময় লাগাই বিপদে পড়ছেন। ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে, কর্মচারীরা বসদের কাছে গালি খাচ্ছেন।

নগরীর রেলগেট এলাকায় শুক্রবাব সন্ধ্যায় কথা হয় নুরনবী নামের এক অটোরিকশার যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, আমি নিয়মিত নগর ভবন থেকে তালাইমারী যাতায়াত করি। সকালে এসে সন্ধ্যায় ফিরতে হয়। বাড়ি  ফিরতে যেখানে ১৫ মিনিটি লাগে সেখানে এখন কখনো কখনো ২৫ থেকে ৩০ মিনিটি সময় লাগছে। রেলগেট এলাকায় আসলে প্রায় প্রতিদিনই ৫-৭মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এদিকে জিরোপয়েন্ট মোড়ে সবচেয়ে বেশি যানজট হচ্ছে। এ কারণে বিকল্প রাস্তায় চলাচলের চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। কিছু কিছু যাত্রী সময় ও ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে রিকশায় ভিন্ন পথে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এরকম এক যাত্রী হলেন রবিন সরকার। তিনি সাহেব বাজার থেকে কাজলা মোড় যেতে প্রায়ই রিকশায় ভেতর রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন বলে জানান।

এদিকে বর্ণালী মোড় ও নগর ভবন মোড়েও বিভিন্ন সময় যানজট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশেই রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলক্রসিং থাকায় দিনে বেশ কয়েকবার চলাচলে বাধা পাচ্ছেন অটোচালকরা। এতে একজায়গায় দাঁড়ানো যানবাহনকে ফাঁকা করতে হিমশিম খান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ। এক্ষেত্রে অটোরিকশার বাড়তি চাপই দায়ী বলে জানান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশরা।

এসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করার আগেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে সমস্যার সমাধান কল্পে সিটি করপোরেশন অটোরিকশাকে দুই ভাগে ভাগ করে দুইদিন চলাচলের পরিকল্পনা করছেন। কিছুদিন আগে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সকল অটোরিকশাকে দুটি রঙ করে দুদিন চলাচলের জন্য ব্যবস্থা নিতে মহানগর ট্রাফিক বিভাগের সাথে বসেন। এখন যথাযথ বাস্তবায়নই দেখার পালা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজশাহী শহরে ৮ হাজার ৭০০ অটোরিকশার লাইসেন্স রয়েছে।ট্রাফিক বিভাগের সর্বশেষ তথ্য মতে, মহানগরীতে ৯ থেকে ১০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। অটোরিকশার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অটোরিকশা বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

অন্যদিকে রাজশাহী ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) সমিতি কর্তৃপক্ষ বলছে, মহানগরীতে ১২ থেকে ১৩ হাজার অটোরিকশা চলে। মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ ঘোষণার পর মহানগরীতে আরো অটোরিকশা বেড়েছে।

রাজশাহী মহানগরীজুড়ে অটোরিকশার চলাচল শুরু হয় ২০০৭ সালের দিক থেকে। এরপর তা কখনও বন্ধ হয়নি। পায়ে চালানো রিকশা ক্রমশই হারিয়ে যেতে থাকে। আর বাড়তে থাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এখন মহানগরীজুড়ে চলাচলকারী অটোরিকশার তুলনায় যাত্রী অনেক কম বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দার এই মহানগরীতে স্থানীয় অটোরিকশা ছাড়াও আশেপাশের এলাকার অটোরিকশা এসে ভিড় বাড়াচ্ছে।

স/শা