রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে ভোগান্তি চরমে, ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক বর্ধিতকরণকাজ চলছে ঢিমেতালে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ শেষ না হওয়ায় এই রাস্তার এখনো প্রায় ১৬ কিলোমিটার অংশ যেন জনভোগান্তির অপর নাম। ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী এরই মধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু ঠিকাদারের উদাসিনতায় কাজ শেষ হচ্ছে না। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদারের গাফলতির কারণে কাজটি দ্রুত শেষ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
জানা গেছে, প্রায় ৪৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কটির ৭৮ কিলোমিটার বর্ধিতকরণ কাজ শুরু হয় প্রায় ২ বছর আগে। ১২টি প্যাকেজে ভাগ করে এই কাজটির টেন্ডার করা হয়। এর মধ্যে চারটি কাজ পান নওগাঁর আমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর দুটি করে কাজ পেয়েছেন রাজশাহীর ওয়াহেদ কন্সট্রাকশন, ডন কন্সট্রাকশন, ঢাকার কামাল এসোসিয়েট কন্সট্রাকশন এবং একটি করে কাজ পেয়েছে র্তূণা কন্সট্রাকশন ও প্যারাডাইস কন্সট্রাকশন। এর মধ্যে ৯টি প্যাকেজরে কাজ শেষ হলেও এখনো দুটি প্রাকেজের প্রায় ১৬ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়নি। এই দুটি কাজ করছেন রাজশাহীর ওয়াহেদ কন্সট্রাকশনের মালিক ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর রহমান পিটার এবং নওগাঁর আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক।

 

প্রসঙ্গত, এর আগে একেবারে কাজ বন্ধ করে রাখা নিয়ে কালের কণ্ঠে গত এপ্রিল মাসে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে টনক নড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পরে ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করে কাজ শুরু করা হলেও শেষ হয়নি এখনো। ফলে ভোগান্তিও শেষ হয়নি সাধারণ মানুষের।
সরেজমিন গতকাল শনিবার ঘুরে দেখা গেছে, মোহনপুরের মৌগাছী থেকে কালুপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে খানা-খন্দে ভরা। কোথাও উঁচু-নিচু, কোথাও গর্তে বর্ষার পানিতে ডুবে আছে। আবার কোথাও শুকনো রাস্তায় ধুলার ছড়াছড়ি। এতে করে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন পথচারীরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীরা চলাচল করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বাসযাত্রীরা বাসের ভিতরে অসহায়ের মতো বসে থাকছেন ঝাঁকুনির ঠেলায়। আর রাস্তার ধুলা-বালিতে বাসের যাত্রীদের বাস থেকে নামার পরেও যেন চেনা দায়।
কথা হয় মোটরসাইকেল চালক নাবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি রাজশাহী থেকে কেশরহাটে যাচ্ছিলেন গতকাল সকালে। নাবিউল বলেন, ‘খুব কষ্ট করে এই রাস্তাটুকু আসলাম। কুণ্ঠে উঁচু, কুণ্ঠে নিচু আবার কুণ্ঠে গর্ত বুঝা মুশকিল। তাই মোটরসাইকেল চালাতে হচ্ছে খুব সাবধানে। একটু উল্টা-পাল্টা হলেই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এই রাস্তায় সত্যি চলা দায়।’
বাস চালক দেরাজ উদ্দিন বলছিলেন, ‘নওগাঁ থেকে রাজশাহীর দূরুত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে মান্দা পার হওয়ার পরই শুরু হচ্ছে গর্ত আর কাদা-পানি। এতে করে প্রায় ১৬ কিলোমিটার যেতেই সময় লাগছে অন্তত এক ঘন্টা। আবার ঝুঁকিও থাকছে খুব বেশি। রাস্তাটি খারাপ থাকার কারণে এই অংশে বাস চালাতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার যাত্রীরা আতঙ্কে থাকছেন।’
এই বাসের যাত্রী মনিরা খাতুন বলেন, ‘আমি প্রায় যাতায়াত করি রাজশাহী-নওগাঁর এই সড়কে। কিন্তু গত প্রায় ২ বছর ধরে এই রাস্তাটির কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের ভোগান্তিও শেষ হচ্ছে না। ঠিকাদাররা কেনো এতো দেরি করছে কাজটি শেষ করতে তা মাথায় আসে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এতো ভোগান্তি আর সহ্য হয় না।’
মোহনপুরের সাংবাদিক মোত্তাকিম হোসেন সোহেল বলেন, ‘জনভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত এবং ভোগান্তির প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধ করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু দ্রুত কাজটি শেষ করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী-৩ আসনের (পবা-মোহনপুর) এমপি বলেন, ‘রাস্তাটির দ্রুত কাজ শেষ হওয়া দরকার। মানুষ আর কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। এই বর্ষায় কষ্টের পরিমাণ আরো বেড়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা যেভাবে ঢিমেতালে কাজ করছে-তাতে ভোগান্তি সহসায় লাঘবের কোনো উপায় দেখছি না। এ কারণে এলাকার মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা আমার কাছেও বার বার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না ঠিকাদারের গাফলতির কারণে।’
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা বলেন, দু’জন ঠিকাদারের অংশে এখনো কাজ শেষ হয়নি। এ নিয়ে আমরাও চরম বিপাকে আছি। সাধারণ মানুষের কষ্ট মাত্রারিক্ত হারে বাড়ছে। এ কারণে দ্রুত কাজটি শেষ করতে দুই ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি টিম এসেও রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারকে সেইভাবে চাপও দিচ্ছি। আশা করছি এই অংশের কাজ হয়তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।’

স/শা