রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচন: আ’লীগের ১০ নেতার দৌড়ঝাঁপ, বাদ পড়তে পারেন ভুলু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চান দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৯ নেতা। প্রথম বারের মত এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা। গত শুক্রবার আবেদন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল।

 

ওইদিন পর্যন্ত রাজশাহী আওয়ামী লীগের ১০ নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাইও হয়ে গেছে। এখন সিদ্ধান্ত দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে এরই মধ্যে গত রোববার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। সে অনুযায়ী আগামি ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্র মতে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নের জন্য যাঁরা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিনাতুন নেছা তালুকদার, জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য মাহবুব জামান ভুলু, আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মোহাম্মাদ আলী সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, চারঘাট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান।

 

  • এদের মধ্যে জিনাতুন নেছা তালুকদার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আর মাহবুব জামান ভুলু গত চার বছর ধরে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং মোহাম্মদ আলী সরকার রাজশাহী চেম্বারের দুই দফা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আতাউর রহমান খান গোদাগাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং স্থানীয় এমপিরা এবার মোহাম্মদ আলী সরকারকে জেলা প্রশাসকের প্রশাসক হিসেবে পেতে দলের কাছে লবিং-গ্রুপিং করছেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

 

আর তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দল মোহাম্মদ আলী সরকারকে এবার মনোনয়ন দিলে  মাহবুব জামান ভুলুর কপালে সিঁকে ঝুলবে। কেন্দ্রের অনেক নেতাও এবার ভুলুকে চাইছেন না বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

 

স্থানীয় এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোহম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কারণ হিসেবে দলীয় সূত্রগুলো জানায়, রাজশাহী জেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দগুলো একাই হরিলুট করেন মাহবুব জামান ভুলু। নিজের ইচ্ছে মতো বরাদ্দ ভাগ-বাটোয়ারা করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে জেলার ৬ এমপি উপদেষ্টা হলেও তাঁদের কখনো বরাদ্দ ভাগ-বাটোয়ারা করতে ডাকা হয়নি। এমনকি এমপিদের নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সভাও করতে পারেননি ভুলু।

 

সূত্র আরো জানায়, মোহাম্মদ আলী সরকার দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ভুলু বাদে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে-তাঁর পক্ষেই এখানকার শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে এমপিরা কাজ করবেন। কিন্তু ভুলুকে দেওয়া হলে ক্ষুব্ধ নেতারা এবং এমপিরা তার পক্ষে মাঠে নামবেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন অনেকেই।

অভিযোগ রয়েছে, পালিত এক ছেলেকে নিয়ে জেলা পরিষদ চালান ভুলু। আর তাঁকে দিয়েই সরকারি বরাদ্দের অর্থ হরিলুট করা হয় বলেও দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের থেকে শুরু করে স্থানীয় এমপিদের মাঝে রয়েছে চরম ক্ষোভ। এ ক্ষোভের কারণেই এবার মাহবুব জামান ভুলুর বিরুদ্ধে সবাই আট-ঘাট নেমে মাঠে নেমেছেন।

 

  • এর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী ৯ উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য একযোগে জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহববুব জামান ভুলুর বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। এ নিয়ে ওই সময় বিভিন্ন মিডিয়াতেও খবর প্রকাশ হয়।

সূত্র মতে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা ওই অভিযোগ তোলার পরে ২০১৪ সালে জেলার নয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে ৫-৬ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের আর কখনো কোনো বরাদ্দ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দেননি জেলা প্রশাসক মাহবুব জামান ভুলু।

 

  • একটি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জেলা পরিষদ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহ-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম প্রশাসক মাহবুব জামান ভুলুকে অনুরোধ করেছিলেন। বাঘার আড়ানিতে সনাতন ধর্মাবলম্বি অধ্যুষিত এলাকায় একটি শ্বশান নির্মাণের জন্য ওই বরাদ্দ চেয়েছিলেন শাহরিয়ার আলম। কিন্তু তাঁর সেই হাহিদাপত্রটিও নাকচ করে দেন ভুলু।

জেলা পরিষদের একধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুব জামান ভুলু। এর পর থেকে সরকারি প্রায় ১৫ কোটি টাকার সাধারণ বরাদ্দ আসে রাজশাহী জেলা পরিষদে। এর বাইরে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে গত চার বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বিভিন্ন কাজ করেছে রাজশাহী জেলা পরিষদ। এসব বরাদ্দের অনেকটায় লুটাপট হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

  • তবে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করেছেন মাহবুব জামান ভুলু। তিনি বলেন, ‘কোনো বরাদ্দ নয়-ছয় করা হয়নি। সুষ্ঠমতো কাজ করা হয়েছে। এমিরা তো আলাদা বরাদ্দ পান, তাই জেলা পরিষদের বরাদ্দের বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভের বিষয়টি জানা নেই।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগের ১০ জন আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। শুক্রবার দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আবেদন পত্র যাচাই-বাছাই হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের পরবর্তি সভায় দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাঁর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ থাকবে বলেন আসাদুজ্জামান আসাদ।

 

স/আর