রাজশাহী কর কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কর অঞ্চল রাজশাহীর কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ সাধারণ কর্মচারীদের হয়রানিসহ এক গাঁদা অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে রাজশাহী কর কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে অভিযোগগুলো করা হয়েছে।

 

এরই মধ্যে অভিযোগুলোর তদন্তও শুরু হয়েছে। কর বিভাগের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা গত ১ মার্চ রাজশাহী গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করেন।

জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম নামের ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘কর অঞ্চল রাজশাহী অফিস পরিদর্শন করতে এসেছিলাম। পাশাপাশি কর কমিশনারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়েও খোঁজ-খবর নিয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনোই কিছু বলা যাবে না।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কর কমিশনার ফেরদৌস আলম গত বছরের ১২ জুন রাজশাহীতে যোগদান করেন। এরপর থেকেই ওই কর্মকর্তা নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এর আগেও তিনি রাজশাহী কর অফিসের প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। ফেরদৌস আলম রাজশাহীতে যোগদানের পর প্রধান কার্যালয়ের বরাদ্দকৃত ৫২ লাখা টাকার মধ্যে সার্কেল এবং রেঞ্জ অফিসে ২ লাখ টাকা ভাগ করে দেন; কিন্তু ওই টাকা সার্কেল ও রেঞ্জ অফিসারদের ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে পুনরায় ফেরদৌস আলমকে ফেরত দিতে বলেন। ফলে তাঁর কথা মতো সার্কেল ও রেঞ্জ কর্মকর্তারা ওই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হোন এবং সেই ৫২ লাখ টাকা ফেরদৌস আলম নিজেই আত্মসাত করেন।

নতুন অর্থ বছরের টাকাও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কর কমিশনার ফেরদৌস আলম আগের সার্কেল ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের গণহারে বদলি করা শুরু করেন। এটি করতে গিয়েই তিনি ব্যাপক বাণিজ্য করেছেন। গত বছরের টাকা আত্মসাতের জন্য ভুয়া বিল-ভাউচার করতে আব্দুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি এবং সহকারী কর কমিশনার জাহাঙ্গীর আলমের সহায়তা নেন। এই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

 

মামলা দুটি দায়ের করেছিলেন রাজশাহী হাসপাতালের চিকিৎসক বি, কে দামের ছেলে অভিজিৎ দাম। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি মামলা দুটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তৎকালীন কর কমিশনার আ.জ.ম জিয়াউল হক, সহকারী কর কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম ও কর পরিদর্শক আবুল বাশারকে আসামি করা হয়।

রাজশাহী কর অফিস থেকেই সিনিয়র সচিবকে দেওয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কর কমিশনার ফেরদৌস আলমের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহীর বাসিন্দা। এই সুবাদে রাজশাহীর কিছু সন্ত্রাসীদেরও সঙ্গেও তাঁর চেনাজানা আছে। সেইসব সন্ত্রাসীদের নিয়ে তিনি নিজ কার্যালয়ে আড্ডা দেন। তাছাড়া কর অঞ্চলের সরকারি একটি গাড়ী তাঁর ছোট ভাই চিকিৎসক ফয়সালকে ব্যবহার করতে দেন। ওই চিকিৎসক তাঁর প্রাইভেট প্রেক্টিসের জন্য নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাতায়াত করেন। গাড়ীর লগবুকেও এই যাতায়াতের তথ্য আছে।

এছাড়াও কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম রাজশাহী কর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি করে চলেছেন। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

এসব বিষয়ে গতকাল রবিবার কর কমিশনার ফেরদৌস আলমের সঙ্গে টেলিফোনে তাঁর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ধারী একজন ব্যক্তি বলেন, ‘স্যার এ নিয়ে কোনো কথা বলবেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো কথা বলবেন না। কাজেই কথা বলতে হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসেন।’