রাজশাহী এখন ‘সাঁওতাল মেয়ে থেকে সুন্দরী রমণী’ – মন্তব্যে ফেসবুকে ঝড়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তার এক বক্তৃতায় রাজশাহী শহরের পরিবর্তনের সাথে সাঁওতাল নারীর তুলনা করার পর তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

ক’দিন আগে রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি নগরীর পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছিলেন, রাজশাহী নগরী এখন ‘সাঁওতাল মেয়ে থেকে সুন্দরী রমণীতে’ পরিণত হয়েছে।

ফেসবুকে অনেকেই হাসান আজিজুল হকের এ কথাকে একই সঙ্গে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ এবং ‘বর্ণবাদী’ বলে মন্তব্য করেন।

সুবোধ এম বক্সী নামে একজনের মন্তব্য: “মেয়র লিটনের নেতৃত্বে রাজশাহী নগর অনেক সুন্দর হয়েছে। পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সৌন্দর্য বেড়েছে। তাই উপমা দিলেন সুন্দরী রমণীর সাথে রাজশাহী। রাজশাহী যখন জরাজীর্ণ তখন তার চেহারা ছিল সান্তাল মেয়ের মতো মানে কদর্য। ধিক্কার, নিন্দা জানাই ..।”

হেলাল মহিউদ্দিন নামে একজন মন্তব্য করেন, “হাসান আজিজুল হক অ্যাতটা এথনোসেন্ট্রিক, মিসোজিনিস্টিক ও রেইসিস্ট প্যারাল্যাল কীভাবে টানতে পারলেন?”

তবে চৈতী আহমেদ নামে আরেকজন লেখেন, “আমি বিশ্বাস করি না সাঁওতাল মেয়ে সম্পর্কে স্যার এমন কিছু মিন করে মন্তব্য দিয়েছেন৷ ঐদেশে এখনো যে দু’য়েকজনকে শ্রদ্ধা করি তিনি তাদের একজন।”

কবি ব্রাত্য রাইসু ফেসবুকে মন্তব্য করেন, হাসান আজিজুল হকের মন্তব্য বর্ণবাদী নয়।

তিনি লেখেন: “লেখক হাসান আজিজুল হকের “সাঁওতাল মেয়ে থেকে সুন্দরী রমণী হয়েছে রাজশাহী” এই কথায় কোনো রেসিজম নাই। সাঁওতাল মেয়েকে কেউ ইচ্ছা করলে সুন্দরী নয় এমনটা ভাবতেই পারেন, তা বলতেও পারেন। যেমন কেউ বলতে পারেন জার্মান মেয়েরা সুন্দরী নয়; তাতে তা রেসিজম হবে না। …সাধারণত গরীব, দুর্বল, নির্যাতিত লোকের পক্ষে দাঁড়াইতে গিয়া তাদের করুণা করার অংশ হিসাবে অসুন্দর মনে হইলেও না বলাটা ক্রিয়াশীল থাকে ‘মানবিক’ ও ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ মানুষদের মধ্যে।”

এই সমালোচনার জবাবে হাসান আজিজুল হকের বক্তব্য কি? জানতে চেয়ে কথা হয় তার সাথে।

তিনি বলেন, তার বক্তব্যের সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

হাসান আজিজুল হক বলেন, “আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো একসময় রাজশাহী শহর সুন্দর ছিল কিন্তু তা অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর – যেমন একজন প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরী সাঁওতাল রমণী, অনেকটা এইরকম কথা আমি বলেছিলাম।”

হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের সুপরিচিত কথাসাহিত্যিক। তাকে নিয়ে একটি বইয়ের প্রচ্ছদ
হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের সুপরিচিত কথাসাহিত্যিক। তাকে নিয়ে একটি বইয়ের প্রচ্ছদ

“আধুনিকতার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে তফাৎটা আছে সেই বোঝাতে চেয়েছিলাম” – বলেন তিনি।

মি. হক বলেন, “এটা কথায় কথায় বলা, সিরিয়াসলি মিন করার জন্য না। আমি ভেবেছিলাম, আমার যারা পাঠক তারা অন্তত এ জিনিসটা বুঝতে পারবেন। আমি দু:খিত, বলতে পারেন, যারা আমার কথার এরকম অর্থ করেছে আমি তাদের জন্যেই দু:খিত।”

তিনি বলেন, ‘সাঁওতালদের নিয়ে কেউ কিছু লিখেছে? হাসান আজিজুল হক লিখেছে। অনেক গল্প লিখেছে, এদের কোথায় রাখা হয়েছে সে কথা লিখেছে। এমন কথাও লিখেছে-একজন বলছে যে না খেয়ে খেয়ে তারা বাঁচতে শিখেছে। এরকম গল্প আমি লিখেছি।”

হাসান আজিজুল হক বলেন , “আমার মৌলিক অবস্থান এ্যাপার্থেইড-এর বিরুদ্ধে। সাঁওতালদের কেন আলাদাভাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে না – একথা আমি বলেছি। কত প্রতিবাদ করেছি, স্টেটমেন্ট দিয়েছি।”

“আদিবাসীদের সম্পর্কে ওরকম কদর্য মনোভাব আমার থাকতে পারে না। আমার পাঠকরা এভাবে আমাকে ভুল বুঝবে এটাও আমি কোনদিন ভাবতে পারিনি।”