রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ: আবাসনের টাকায় তৃতীয় দফায় বিদেশ সফর

নিজস্ব প্রতিদেক:

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বারনই আবাসিক প্রকল্পের অর্থ দিয়ে আবারো বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ৫ কর্মকর্তা। অথচ এই প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ এখনো অনেক বাকি। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া আবাসিক প্রকল্পটির প্লট এখনো প্রস্তুত ও হস্তান্তরযোগ্য হয়নি। এরই মধ্যে আরডিএর চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা প্রকল্পের টাকায় দুইদফায় ৩০ দিনের বিদেশ সফর করে এসেছেন। একই প্রকল্পের টাকায় আরডিএর ৫ সদস্যের আরেকটি দল ১৫ দিনের রাজকীয় এই বিদেশ সফরে বের হবেন আগামি ২০ মার্চ। তারা ঘুরবেন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। জানা গেছে, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রতিটি ট্রিপে খরচ হচ্ছে কোটি টাকার বেশি। এই টাকা ব্যয় হচ্ছে বারনই আবাসিক উন্নয়ন প্রকল্পের খাত থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে শতাধিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় আগ্রহীদের মাঝে। নগরীর বাইরে ৫ লাখ টাকা কাঠা বাজারমুল্যের জমি চড়াদামে প্লট আকারে (কাঠা প্রতি ১০ লাখ) বিক্রি করে আরডিএ বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন। কিন্তু প্রকল্প সম্পন্ন করে গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে দিতে এখনো বছর দুয়েক দেরি। প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। অনেক বরাদ্দ গ্রহীতা প্লটের অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এর আগে ২০১৭ সালের ৪ জুন আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহিল তারিক, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আযাদ, নগর পরিকল্পক আজমেরী আশরাফি, সহকারি নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম রনি ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানের পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ মোট ৯ জন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে ১৫দিনের সফর করেন। প্রথমদফা সফরে চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরাও প্রকল্পের টাকায় বিদেশে ঘুরেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে একই প্রকল্পের অর্থে গত ৩ জানুয়ারি আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, নগর পরিকল্পক আজমেরি আশরাফি, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহিল তারিক, হিসাব কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ মোট ৬ জন এশিয়ার দুই দেশ ছাড়াও ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইটালিতে ১৫ দিনের সফর করেন। চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দফায় একই দেশে সফর করার বিষয়ে সংস্থার অন্য কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আপত্তি ছাড়াই অনাপত্তি প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে আগামি ২০ মার্চ একই প্রকল্পের টাকায় তৃতীয় দফায় বিভিন্ন দেশ সফরে বের হবেন আরডিএর কর্মকর্তারা। এসব কর্মকর্তা বিদেশে ঘুরবেন ১৫ দিন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, সহকারি প্রকৌশলী ও একটি দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি শেখ কামরুজ্জামান, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আযাদ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ মোট ৫ জন তৃতীয় দফায় এশিয়ার দুটি দেশ ছাড়াও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ১৫ দিনের সফরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে।

বারনই আবাসিক প্রকল্পের টাকায় তৃতীয় দফায় বিদেশ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ( উপ-সচিব) বরিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কর্মসূচিতে বিদেশ সফরের সংস্থান রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই তারা বিদেশ সফর করছেন।

স/আর