রাজশাহী অঞ্চলে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে চয়েস কর্মসূচীর আওতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর আয়োজনে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬-৭ জুন দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে রাজশাহীর চারঘাট ও মোহনপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর এবং পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার হার চয়েস কার্যক্রমভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০জন শিক্ষক ও ৬ জন হাঙ্গার প্রজেক্ট কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

দেশের কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে জানার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ জন্য দেশে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ১৬.১ ভাগই মানসিক সমস্যায় ভোগে। বিভিন্ন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সমাজের অন্যদের মতো কিশোর-কিশোরী প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যসেবা একটি অধিকার উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কিশোর-কিশোরীর নিকট তাদের প্রজনন ও যৌন অধিকারগুলো প্রয়োগ করা অত্যন্ত জটিল। এ ছাড়া কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে রয়েছে নানামুখী সমস্যা। বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় আগ্রহী নয়। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনও এ ব্যাপারে উদাসীন। এ ছাড়াও রয়েছে সামাজিক কুসংস্কারজনিত বাধা। আর এসব কারণে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

এ ধরণের সমস্যা সমাধানের লক্ষে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চলের আয়োজনে হার চয়েস কর্মসূচীর আওতায় রাজশাহী বিএলসিতে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে এসব কথা বলেন সহায়করা।

প্রশিক্ষণের ম্যাধমে অংশগ্রহণকারী আরো জানতে পারে, প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীদের  অধিকার। এই বয়সে স্বাস্থ্যসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও সচেতনতার অভাব, গোপনীয়তার প্রবণতা ইত্যাদি কারণে তারা পর্যাপ্ত সেবা পায় না। তাই এই সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণকারীরা যাতে করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তার কৌশল প্রদান করা হয়।

দুই দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে জানানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজেদের যতœ ও সুরক্ষা নিতে সক্ষম হবে তার কৌশলও তুলে ধরা হয় প্রশিক্ষণে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতœবিশ্বাস ও নেতৃত্বের গুনাবলীর বিকাশ ঘটে,যার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য বিশেষ করে যৌন হয়রানী ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় কর্মসূচীর এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০১৭ সালের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের ৬০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মোহনপুর উপজেলার পিয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, চারঘাটের বনকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, পাবনার সুজানগর উপজেলার চরদুলাই বজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুবর্ণা সুলতানা প্রমূখ।

প্রশিক্ষণে সেক্স ও জেন্ডার, জেন্ডার সমতা ও সাম্যতা, জেন্ডার বৈষম্য, শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য  পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বিভিন্ন ধরনের আবেক, আবেগ ব্যবস্থাপনা, স্কুল থেকে ঝরেপড়া কিশোর-কিশোরীদের অন্তভূক্তি, ক্লাব পরিচালনা, বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানী থেকে কিভাবে প্রতিকার পাবে তা হাতে কলমে তুলে ধরা হয়। দুইদিনের এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা তনুজা কামাল, সুখময় পাল, রাজশাহী এরিয়া কোঅর্ডিনেটর সুব্রত কুমার পাল প্রমূখ।
স/শ