রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে বেড়েছে ভারতীয় গরু আসা, আদায় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক পরিমাণে আসছে ভারতীয় গরু। রাজশাহীর পবা, মতিহার, গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তে সরকার অনুমোদিত দুটি বিট/খাটাল দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে হাজার হাজার গরু আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আযহার আগ পর্যন্ত গরু আসার পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার চার/পাঁচ গুন বেশি ভারতীয় গরু আসায় দেশে এবছর কোরবানীর গরুর দাম মানুষের লাগামের মধ্যেই থাকবে। তবে বিটগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ভারত থেকে গরু আমদানির জন্য একটি প্রধান রুট হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত। প্রায় সারা বছরই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে ভারতীয় গরু। বর্তমানে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গরু আসার পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকারি শুল্ক ফাঁকি রোধ ও গরু আনার ব্যবস্থানায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বছর চারেক আগে জেলার বিভিন্ন সীমান্তে ১০ টির মত বিট/খাটালের অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিট/খাটালের নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় রাখালরা গরুর চালান বাংলাদেশি রাখালদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেই গরুগুলো বিটে রাখা হয়। এরপর সরকারি শুল্ক বাবদ গরু প্রতি ৫শ টাকা ও বিট কর্তৃপক্ষকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিট/খাটাল চালু হওয়ায় অবৈধ পথে গরু আনার পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসে। এতে করে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যুর হারও কমে গেছে। তবে গরুর সাথে মাদক ও অস্ত্র আসে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবছর সদর উপজেলার আখরআলী, বকচর, জোহরপুর, জোহরপুর ট্যাকসহ অধিকাংশ বিট/ খাটালের অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রনালয়।

বর্তমানে সরকারি অনুমোদিত শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিট দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। প্রতিদিন এই দুটি বিট দিয়ে গড়ে সাড়ে হাজার থেকে চার হাজার গরু আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাস্টম্স কর্তপক্ষ জানান, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগষ্ট মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১২ হাজার ৭৯৮টি গরু এসেছিলো। অথচ এবছর শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে ৬৮হাজার ৫০১ টি। যা গতবছরের চেয়ে ৪/৫ গুন বেশি।

শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর বিটের পরিচালক মানিরুল ইসলাম কালু জানান, দু’দেশের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গরু আসায় চোরাচালান রোধের পাশাপশি গরু আমদানি বেড়েছে। ঈদের আগের দিনগুলোতে গরু আমদানির পরিমান আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। রঘুনাথপুরের গরু ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম জানান, সরকারি শুল্ক পরিশোধের পর আমদানিকৃত ভারতীয় গরু বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জেলার রামচন্দ্রপুরহাট, মনাকষা ও তত্তিপুরহাটে।

এছাড়া রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্রগ্রাম, রাজশাহীর সিটি হাটসহ বিভিন্ন জেলায় এসব গরু বিক্রি করা হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আমদানির পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার কোরবানির গরুর দাম স্বাভাবিক থাকবে।

তবে বিট মালিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে গরু প্রতি আড়াইশ টাকা করে বেশি আদায় করছেন বিট মালিকরা।

রঘুনাথপুরের ব্যবসায়ী সেরাজুল ইসলাম জানান, সরকারি শুল্ক ও বিট ব্যবস্থাপনা ফিসহ গরু প্রতি ৫৫০ টাকা করে আদায় করার কথা। কিন্তু এখানে গরু প্রতি ৮০০ টাকা করে আদায় করছেন বিট মালিকরা। কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি টাকা আদায় করা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

তবে বিটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন রঘুনাথপুর বিটের পরিচালক মোঃ বাবু বিশ্বাস। তিনি বলেন অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সরকার নির্ধারিত হারে ফি আদায় করা হয় বলে দাবী করেন তিনি।

এদিকে রাজশাহীর ঘাটগুলো থেকেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গরু ব্যবসায়ীরা। এখন গরু প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন খাটাল মালিকরা। এতে করে গরু আসার হার বাড়লেও ঈদে দাম কমার তেমন সুযোগ থাকছে না বলেও দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

স/আর