রাজশাহীর স্মৃতি অম্লান দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কথিত রয়েছে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা মোড়ের উত্তর পাশে রয়েছে একটি বদ্ধভূমি। বদ্ধভূমি হিসেবে এটিকে সংরক্ষণ করা না হলেও স্থানটি ফুল বাগানসহ বিভিন্ন গাছ-গছালি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এই বদ্ধভূমিটির পাশেই মাথা উঁচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশালাকার একটি স্মৃতস্তম্ভ। যার নাম দেওয়া হয়েছে স্মৃতি অম্লান। স্বাধীণতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত নারীদের স্মরণে এই স্মৃতি অম্লানটি তৈরী করা হয় ১৯৯১ সালে। সেই থেকে দারুন কারুকার্যখচিত ও দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি অম্লানটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

রাজশাহী নগর উন্নয়ন সংস্থার (আরডিএ) তত্বাবধানে এই স্মৃতি অম্লানটি প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ। শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়কের ভদ্রা মোড়ে এই স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। যার নাম দেওয়া দেওয়া হয় স্মৃতি অম্লান। বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক হিসাবে এর নামকরণ করা হয় ‘অম্লান’।

এটির মূল স্তম্ভটি একটি গোলাকার বেদীর উপরে স্থাপিত। গোলাকার এই বেদীটির উচ্চতা ১.০৬ মিটার (৩ ফুট ৬ ইঞ্চি), চওড়ায় ১৩.৭০ মিটার (৪৫ ফুট) এবং বেদীর নিচে মূল স্তম্ভের ব্যাস ৯.৬৫ মিটার (৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি)। স্মৃতি অম্লানটির বেদীমূলে আছে নীল-অভ্র পাথরের আচ্ছাদন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রায় দুই লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের বেদনার প্রতীক হিসাবে এই পাথরের আচ্ছাদনকে দেখানো হয়েছে।

মূল গোলাকার বেদীর কেন্দ্রস্থল থেকে তিনটি স্তম্ভ সরলভাবে ঊর্ধ্বমুখে স্থাপিত। এই তিনটি স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ২৪ মিটার বা ৮০ ফুট। প্রতিটি স্তম্ভের বাইরের দিকে ২৪টি করে ধাপ রয়েছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগতি নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয়েছে এই ২৪টি ধাপ। এছাড়াও প্রতিটি স্তম্ভে ১০টি করে মোট ৩০টি ছিদ্র রয়েছে। এই ৩০টি ছিদ্রকে যুদ্ধে শহিদ ৩০ লক্ষ মানুষের অবদানের প্রতীক হিসাবে রাখা হয়েছে।

স্তম্ভের শীর্ষ প্রান্তে মূল স্তম্ভের ব্যাস ২.৮০মিটার বা ৯ ফুট ২ ইঞ্চি। স্তম্ভ তিনটির শীর্ষে একটি গোলক রয়েছে। গোলকের ব্যাস ৩ মিটার বা ১০ ফুট। আর ভূমি থেকে গোলকের নিচ পর্যন্ত স্তম্ভের উচ্চতা ২১.৬৪ মিটার বা ৭১ ফুট। এই গোলক দিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ এর মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রাপ্তিকে এবং স্বাধীনতার তীব্র উপস্থিতিকে সূর্যের প্রতীকে স্থাপন করা হয়েছে ।

আরডিএ স্মৃতি অম্লানটি প্রতিষ্ঠা করলেও বর্তমানে এর রক্ষণা-বেক্ষনের দায়িত্ব¡ পালন করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।

স্মৃতি অম্লানটির মূল পরিকল্পনা করছেন তৎকালিন আরডিএর চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়াার আবদুর রব। এর পকৌশলী ছিলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম ঠান্ডুর পিতা আজিজুর রহমান সরকার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

স/আর